সূরা আলে-ইমরান (আয়াত: 66)
হরকত ছাড়া:
ها أنتم هؤلاء حاججتم فيما لكم به علم فلم تحاجون فيما ليس لكم به علم والله يعلم وأنتم لا تعلمون ﴿٦٦﴾
হরকত সহ:
هٰۤاَنْتُمْ هٰۤؤُلَآءِ حَاجَجْتُمْ فِیْمَا لَکُمْ بِهٖ عِلْمٌ فَلِمَ تُحَآجُّوْنَ فِیْمَا لَیْسَ لَکُمْ بِهٖ عِلْمٌ ؕ وَ اللّٰهُ یَعْلَمُ وَ اَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ ﴿۶۶﴾
উচ্চারণ: হা আনতুম হাউলাই হা-জাজতুম ফীমা-লাকুম বিহী ‘ইলমুন ফালিমা তুহাজ্জূনা ফীমা লাইছা লাকুম বিহী ‘ইলমুন ওয়াল্লা-হু ইয়া‘লামুওয়া আনতুম লা-তা‘লামূন।
আল বায়ান: সাবধান! তোমরা তো সেসব লোক, বিতর্ক করলে এমন বিষয়ে, যার জ্ঞান তোমাদের রয়েছে। তবে কেন তোমরা বিতর্ক করছ সে বিষয়ে যার জ্ঞান তোমাদের নেই? আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৬৬. সাবধান, তোমরা তো সে সব লোক, যে বিষয়ে তোমাদের সামান্য জ্ঞান আছে সে বিষয়ে তোমরা তর্ক করেছ, তবে যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কেন তর্ক করছ? আর আল্লাহ্ জানেন এবং তোমরা জান না।
তাইসীরুল ক্বুরআন: বস্তুতঃ তোমরাই এমন লোক যে, যে সম্পর্কে তোমাদের কিছু জ্ঞান আছে, সে বিষয়ে তো বিতর্ক করেছ, তোমরা এমন বিষয়ে কেন বিতর্ক করছ যে বিষয়ে তোমাদের কোনই জ্ঞান নেই? বস্তুতঃ আল্লাহ্ই জ্ঞাত আছেন, তোমরা জ্ঞাত নও।
আহসানুল বায়ান: (৬৬) তোমরা তো এমন যে, যে বিষয়ে তোমাদের কিছু জ্ঞান ছিল, সে বিষয়ে তর্ক করেছ। তাহলে যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে কেন তর্ক করছ? [1] বস্তুতঃ আল্লাহ জ্ঞাত আছেন এবং তোমরা জ্ঞাত নও।
মুজিবুর রহমান: হ্যাঁ, তোমরা এমন যে, যে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান ছিল তা নিয়েও তোমরা কলহ করেছিলে, কিন্তু যদ্বিষয়ে তোমাদের কোনই জ্ঞান নেই তা নিয়ে তোমরা কেন কলহ করছ এবং আল্লাহ জ্ঞাত আছেন ও তোমরা অবগত নও।
ফযলুর রহমান: শোন, তোমরাই তো (ইতিপূর্বে) এমন বিষয় নিয়ে বিতর্ক করেছো যে বিষয়ে তোমাদের কিছু জ্ঞান আছে। কিন্তু (এখন) যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই তা নিয়ে কেন বিতর্ক করছ? (আসলে) আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।
মুহিউদ্দিন খান: শোন! ইতিপূর্বে তোমরা যে বিষয়ে কিছু জানতে, তাই নিয়ে বিবাদ করতে। এখন আবার যে বিষয়ে তোমরা কিছুই জান না, সে বিষয়ে কেন বিবাদ করছ?
জহুরুল হক: দেখো! তোমরাই তারা যারা তর্ক করেছ যে-বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান ছিল, তবে কেন তোমরা হুজ্জত করছো যে বিষয়ে তোমাদের সম্যক জ্ঞান নেই? আর আল্লাহ্ জানেন, অথচ তোমরা জানো না।
Sahih International: Here you are - those who have argued about that of which you have [some] knowledge, but why do you argue about that of which you have no knowledge? And Allah knows, while you know not.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৬৬. সাবধান, তোমরা তো সে সব লোক, যে বিষয়ে তোমাদের সামান্য জ্ঞান আছে সে বিষয়ে তোমরা তর্ক করেছ, তবে যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কেন তর্ক করছ? আর আল্লাহ্ জানেন এবং তোমরা জান না।
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৬৬) তোমরা তো এমন যে, যে বিষয়ে তোমাদের কিছু জ্ঞান ছিল, সে বিষয়ে তর্ক করেছ। তাহলে যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে কেন তর্ক করছ? [1] বস্তুতঃ আল্লাহ জ্ঞাত আছেন এবং তোমরা জ্ঞাত নও।
তাফসীর:
[1] এই তো তোমাদের জ্ঞান ও দ্বীনদারীর অবস্থা যে, যে সম্পর্কে তোমাদের জ্ঞান আছে অর্থাৎ, নিজেদের দ্বীন ও কিতাবের ব্যাপারে, (যে কথা পূর্বোক্ত আয়াতে উল্লেখ হয়েছে) সে ব্যাপারে তোমাদের ঝগড়া করা ভিত্তিহীনও বটে এবং এতে অজ্ঞানতার পরিচয়ও রয়েছে। তাহলে যে ব্যাপারে তোমাদের মোটেই কোন জ্ঞান নেই, সে ব্যাপারে তোমরা কেন ঝগড়া কর? অর্থাৎ, ইবরাহীম (আঃ)-এর মান-মর্যাদা এবং তাঁর একনিষ্ঠ দ্বীনের ব্যাপারে; যার ভিত্তিই ছিল তাওহীদ ও ইখলাস।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৬৫-৬৮ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতগুলোতে ইবরাহীম (আঃ)-এর ব্যাপারে ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের বাদানুবাদ আল্লাহ তা‘আলা তিরস্কারের সাথে উল্লেখ করেছেন।
খ্রিস্টানরা বলে ইবরাহীম (আঃ) খ্রিস্টান ছিলেন আর ইয়াহূদীরা বলে তিনি ইয়াহূদী ছিলেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ تَقُوْلُوْنَ إِنَّ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْمَاعِيْلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْأَسْبَاطَ كَانُوْا هُوْدًا أَوْ نَصٰرٰي)
“তোমরা কি বলছ যে, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক্ব , ইয়াকুব ও তাদের বংশধর ইয়াহূদী কিংবা খ্রিস্টান ছিলেন?” (সূরা বাকারাহ ২:১৪০)
ইবরাহীম (আঃ) ইয়াহূদীও ছিলেন না, খ্রিস্টানও ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَا كَانَ إِبْرَاهِيْمُ يَهُوْدِيًّا وَّلَا نَصْرَانِيًّا وَّلٰكِنْ كَانَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًا)
“ইবরাহীম ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান কিছুই ছিলেন না, বরং তিনি একনিষ্ঠ মুসলিম ছিলেন।” (সূরা আল-ইমরান ৩:৬৭)
তাছাড়া তাওরাত ও ইঞ্জিল ইবরাহীম (আঃ)-এর তিরোধানের অনেক বছর পর অবতীর্ণ হয়েছে। ইবরাহীম ও মূসা (আঃ)-এর মাঝে এক হাজার বছরের ব্যবধান ছিল, আর ঈসা ও ইবরাহীম (আঃ)-এর মাঝে দু’হাজার বছরের ব্যবধান ছিল। অতএব ইবরাহীম (আঃ)-এর ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান হওয়ার প্রশ্নই উঠে না বরং তিনি একজন খাঁটি মুসলিম ছিলেন।
ইবরাহীম (আঃ)-এর ঘনিষ্ঠতর হল তারা যারা তাঁর দীনের অনুসরণ করে এবং আমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), মুহাজির ও আনসারসহ সকল মু’মিনগণ যারা পরবর্তীতে ঈমান এনেছে ও ইবরাহীম (আঃ)-এর মিল্লাত অনুসরণ করেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রত্যেক নাবীর নাবীদের থেকে একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকেন। আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হল আমার পিতা আল্লাহ তা‘আলার বন্ধু ইবরাহীম (আঃ)। অতঃপর এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। (তিরমিযী হা: ২৯৯৫, মুসতাদরাক হাকেম হা: ৩১৫১, সহীহ)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে সে বিষয়ে বিতর্ক করা নিন্দনীয়।
২. মু’মিনগণ পরস্পর বন্ধু যদিও তারা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকে।
৩. ইবরাহীম (আঃ) একজন খাঁটি মুসলিম ছিলেন, ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান ছিলেন না।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৬৫-৬৮ নং আয়াতের তাফসীর:
ইয়াহূদীরা বলতো যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) ইয়াহূদী ছিলেন এবং খ্রীষ্টানরা বলতো যে, তিনি খ্রীষ্টান ছিলেন এবং একথা নিয়ে তারা পরস্পর তর্ক-বিতর্ক করতো। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতসমূহে তাদের এ দাবীকে খণ্ডন করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, নাজরান হতে আগত খ্রীষ্টানদের নিকট ইয়াহূদী আলেমগণ আগমন করে এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনেই তারা কলহ আরম্ভ করে দেয়। প্রত্যেক দলেরই এ দাবী ছিল যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। এতে বলা হয়, “হে ইয়াহুদীর দল! তোমরা কি করে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে তোমাদের অন্তর্ভুক্ত বলছো? অথচ তার যুগে তো হযরত মূসা (আঃ) ছিলেন না এবং তাওরাতও ছিল না। মূসা (আঃ) এবং তাওরাত তো ইবরাহীম (আঃ)-এর পরে এসেছে। অনুরূপভাবে- “হে খ্রীষ্টানের দল! তোমরা ইবরাহীম (আঃ)-কে খ্রীষ্টান কিরূপে বলছো? অথচ খ্রীষ্টান ধর্ম তো তাঁর বহু শতাব্দী পরে প্রকাশ পেয়েছে। এ মোটা কথাটা বুঝার মতও কি তোমাদের জ্ঞান নেই?' অতঃপর এ দু’টি দল যে কিছু না জেনেও বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে এ জন্যে আল্লাহ তা'আলা ভৎসনা করেছেন যে, ধর্মীয় বিষয়ে যে জ্ঞান তাদের রয়েছে তা নিয়ে যদি তারা কলহ করতো তবে কিছুটা খাপ খেতো। কিন্তু তারা এমন বিষয় নিয়ে কলহে লিপ্ত হয়েছে, যে বিষয়ে তাদের মোটেই জ্ঞান নেই। যে বিষয়ে তাদের জ্ঞান নেই সে বিষয়টি সর্বজ্ঞাত আল্লাহকে সমর্পণ করাই তাদের উচিত, যিনি প্রত্যেক জিনিসের মূলতত্ত্ব সম্বন্ধে অবগত রয়েছেন। একমাত্র মহান আল্লাহর প্রত্যেক প্রকাশ্য ও গোপনীয় বিষয়ে জ্ঞান রয়েছে। এ জন্যেই তিনি বলেন-“আল্লাহ তা'আলা পরিজ্ঞাত আছেন এবং তোমারা অবগত নও। প্রকৃতপক্ষে হযরত ইবরাহীম (আঃ) ইয়াহূদীও ছিলেন না এবং খ্রীষ্টানও ছিলেন না। বরং তিনি অংশীবাদকে ঘৃণা করতেন এবং মুশরিকদের হতে বহু দূরে থাকতেন। তিনি ছিলেন খাটি ঈমানদার। তিনি কখনও মুশরিক ছিলেন।' এ আয়াতটি সূরা-ই-বাকারার নিম্নের আয়াতটির মতঃ (আরবী) অর্থাৎ তারা বলেছিল, তোমরা ইয়াহূদী হয়ে যাও অথবা খ্রীষ্টান হয়ে যাও তবে সুপথ প্রাপ্ত হবে। (২:১৩৫)
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন- হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর অনুসরণের বেশী দাবীদার ঐ সব লোক যারা তাঁর যুগে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং এখন এ নবী হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সঃ) এবং তাঁর অনুসারী মুমিনদের দল, যারা হচ্ছে মুহাজির ও আনসার এবং তাদের পরেও কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসারী যত লোক আসবে।' রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ প্রত্যেক নবী (আঃ)-এর অন্তরঙ্গ বন্ধু নবীদের (আঃ) মধ্য হতে হয়ে থাকে এবং আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হচ্ছেন নবীদের মধ্যে হতে আমার পিতা আল্লাহ তা'আলার বন্ধু হযরত ইবরাহীম (আঃ)। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করেন। (জামেউত্ তিরমিযী ইত্যাদি) তারপর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, যে কেউ আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর উপর ঈমান আনয়ন করবে তার অভিভাবক আল্লাহ।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।