সূরা আলে-ইমরান (আয়াত: 5)
হরকত ছাড়া:
إن الله لا يخفى عليه شيء في الأرض ولا في السماء ﴿٥﴾
হরকত সহ:
اِنَّ اللّٰهَ لَا یَخْفٰی عَلَیْهِ شَیْءٌ فِی الْاَرْضِ وَ لَا فِی السَّمَآءِ ؕ﴿۵﴾
উচ্চারণ: ইন্নাল্লা-হা লা-ইয়াখফা-‘আলাইহি শাইউন ফিল আরদিওয়ালা-ফিছ ছামাই।
আল বায়ান: নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর নিকট গোপন থাকে না কোন কিছু যমীনে এবং না আসমানে ।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৫. নিশ্চয় আল্লাহ, আসমান ও যমীনের কোন কিছুই তার কাছে গোপন থাকে না।(১)
তাইসীরুল ক্বুরআন: নিশ্চয়ই ভূমন্ডলের ও নভোমন্ডলের কোন জিনিসই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।
আহসানুল বায়ান: (৫) নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে দ্যুলোক-ভূলোকের কোন কিছুই গোপন নেই।
মুজিবুর রহমান: নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের কোন বিষয়ই লুকায়িত নেই।
ফযলুর রহমান: আল্লাহর কাছে জমিনের কিংবা আসমানের কোন কিছুই গোপন থাকে না।
মুহিউদ্দিন খান: আল্লাহর নিকট আসমান ও যমীনের কোন বিষয়ই গোপন নেই।
জহুরুল হক: নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সম্পর্কে, -- তাঁর কাছে কিছুই লুকানো নেই পৃথিবীতে, আর মহাকাশেও নেই।
Sahih International: Indeed, from Allah nothing is hidden in the earth nor in the heaven.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৫. নিশ্চয় আল্লাহ, আসমান ও যমীনের কোন কিছুই তার কাছে গোপন থাকে না।(১)
তাফসীর:
(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা সবকিছু জানেন। সূরা আল-আন'আমে এ বিষয়টি বিস্তারিত এসেছে, সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, এসব কিছু তিনি যে শুধু জানেন তা-ই নয় বরং তিনি তা এক গ্রন্থে লিখেও রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, “আর অদৃশ্যের চাবি তারই কাছে রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারসমূহে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত, তার অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুস্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।” [সূরা আল-আন’আম: ৫৯]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৫) নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে দ্যুলোক-ভূলোকের কোন কিছুই গোপন নেই।
তাফসীর:
-
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৩-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, যা তার পূর্ববর্তী যে সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর সত্যায়নকারী। কিতাবগুলো হল- তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও অন্যান্য সহিফা। ঐ সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করার জন্য, মূর্খতা থেকে জ্ঞানের আলোর দিশা দেয়ার জন্য, সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের, কল্যাণ ও অকল্যাণের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। সুতরাং যারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে তারাই সঠিক পথ পাবে, উভয় কালে লাভবান হবে, সকল প্রকার কল্যাণ ও সওয়াব অর্জন করবে। আর যারা এগুলোর প্রতি অবিশ্বাস করবে ঈমান আনবে না এবং যারা নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘন করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। অনুরূপভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলার দলীল প্রমাণকে মিথ্যা মনে করবে এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তথা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সকল ইবাদত সম্পাদন না করে অন্যের জন্যও ইবাদত করবে বা অন্যকে তাঁর সাথে ইবাদতে শরীক করবে তাদের জন্যও রয়েছে কঠিন শাস্তি।
(إِنَّ اللّٰهَ لَا يَخْفٰي عَلَيْهِ شَيْءٌ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কিছুই গোপন নেই” আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকটি জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। আকাশ ও যমিনে যা কিছু রয়েছে তার প্রত্যেকটি জিনিস তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। বিষয়টি ছোট হোক বা বড় হোক, কম হোক বা বেশি হোক, প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে হোক, এমনকি গহীন অন্ধকারে কালো পিপীলিকা কিভাবে চলাচল করে তাও তিনি জানেন। মায়ের গর্ভে কী রয়েছে তাও তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। মাতৃগর্ভস্ত সন্তান ভাল হবে, না মন্দ হবে, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, সৌভাগ্যবান হবে, না দুর্ভাগ্যবান হবে সবই তাঁর জানা।
সুতরাং সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। অতএব যিনি সবকিছুর ধারক-বাহক, রক্ষণাবেক্ষণকারী, তাঁকে ভয় করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার ও অশ্লীল কাজ-কর্ম বর্জন করা উচিত এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত। তিনি ব্যতীত আর কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলোতে সে কথাই তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ ھُمْ بٰرِزُوْنَﹰ لَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْھُمْ شَیْءٌﺚ لِمَنِ الْمُلْکُ الْیَوْمَﺚ لِلہِ الْوَاحِدِ الْقَھَّارِ)
“যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? একক পরাক্রমশালী আল্লাহরই।” (সূরা মু’মিন ৪০:১৬)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ اِنَّکَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِیْ وَمَا نُعْلِنُﺚ وَمَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْ شَیْءٍ فِی الْاَرْضِ وَلَا فِی السَّمَا۬ئِ)
“হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি জান যা আমরা গোপন করি ও যা আমরা প্রকাশ করি; আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(اِلَّا مَا شَا۬ئَ اللہُﺚ اِنَّھ۫ یَعْلَمُ الْجَھْرَ وَمَا یَخْفٰی)
“আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তদ্ব্যতীত, নিশ্চয়ই তিনি প্রকাশ্য ও গুপ্ত বিষয় পরিজ্ঞাত আছেন।” (সূরা আ‘লা ৮৭:৭)
সুতরাং আমাদের উচিত হবে তাঁকে ভয় করে সকল অন্যায় অবিচার বর্জন করা এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীম সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে।
২. কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবকে সত্যায়ণকারী, বাতিলকারী নয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু দেখেন ও জানেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মা‘বূদ, একমাত্র তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার।
৬. আল্লাহ তা‘আলা কিতাব ও রাসূল প্রেরণ করে বান্দার ওপর হুজ্জাত প্রতিষ্ঠা করেছেন, অতএব অভিযোগ করার কোন সুযোগ নেই।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৫-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, আকাশ ও পৃথিবীর কোন বস্তুই তাঁর নিকট লুক্কায়িত নেই, বরং সব কিছুরই তিনি পূর্ণ জ্ঞান রাখেন। তিনি বলেন- “আল্লাহ পাক তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের জরায়ুর মধ্যে আকৃতি বিশিষ্ট করেছেন। তিনি যেভাবেই আকৃতি গঠনের ইচ্ছে করেছেন তাই করেছেন। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য নেই। তিনি মহা পরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানময়। একমাত্র তিনিই যখন তোমাদের আকৃতি গঠন করতঃ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তখন তোমরা একমাত্র তার ইবাদত ছাড়া অন্যের ইবাদত করবে কেন? তিনি অবিনষ্ট সম্মান ও ধ্বংসহীন জ্ঞানের অধিকারী। এতে ইঙ্গিত রয়েছে এমন কি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, হযরত ঈসাও (আঃ) আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট এবং তাঁরই পদপ্রান্তে মস্তক অবনতকারী। সমস্ত মানুষের ন্যায় তিনিও একজন মানুষ। তার আকৃতিও আল্লাহ তা'আলা তার মায়ের জরায়ুর মধ্যে গঠন করেছিলেন এবং তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমেই সৃষ্ট হয়েছেন। সুতরাং তিনি কিরূপে আল্লাহ হয়ে গেলেন, যেমন অভিশপ্ত খ্রীষ্টানেরা মনে করে নিয়েছে। অথচ তিনিইতো তোমাদেরকে তোমাদের এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থার দিকে ফিরিয়ে থাকেন। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ তিনিই তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের পেটে তিন তিনটি অন্ধকারের মধ্যে এক সৃষ্টির পর অন্য সৃষ্টির মাধ্যমে সৃষ্টি করে থাকেন।' (৩৯:৬)
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।