আল কুরআন


সূরা আলে-ইমরান (আয়াত: 14)

সূরা আলে-ইমরান (আয়াত: 14)



হরকত ছাড়া:

زين للناس حب الشهوات من النساء والبنين والقناطير المقنطرة من الذهب والفضة والخيل المسومة والأنعام والحرث ذلك متاع الحياة الدنيا والله عنده حسن المآب ﴿١٤﴾




হরকত সহ:

زُیِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ وَ الْبَنِیْنَ وَ الْقَنَاطِیْرِ الْمُقَنْطَرَۃِ مِنَ الذَّهَبِ وَ الْفِضَّۃِ وَ الْخَیْلِ الْمُسَوَّمَۃِ وَ الْاَنْعَامِ وَ الْحَرْثِ ؕ ذٰلِکَ مَتَاعُ الْحَیٰوۃِ الدُّنْیَا ۚ وَ اللّٰهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الْمَاٰبِ ﴿۱۴﴾




উচ্চারণ: যুইয়িনা লিন্না-ছি হুব্বুশশাহাওয়া-তি মিনান নিছাই ওয়াল বানীনা ওয়াল কানা-তীরিল মুকানতারাতি মিনাযযাহাবি ওয়াল ফিদ্দাতি ওয়াল খাইলিল মুছাওওয়ামাতি ওয়াল আন‘আমি ওয়াল হারছিযা-লিকা মাতা-‘উল হায়া-তিদ্দুনইয়া-ওয়াল্লা-হু ‘ইনদাহু হুছনুল মাআ-ব।




আল বায়ান: মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালবাসা- নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-রূপা, চি‎‎হ্নত ঘোড়া, গবাদি পশু ও শস্যক্ষেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগসামগ্রী। আর আল্লাহ, তাঁর নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৪. নারী, সন্তান, সোনারূপার স্তুপ, বাছাই করা ঘোড়া, গবাদি পশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এসব দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য বস্তু।(১) আর আল্লাহ্, তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।




তাইসীরুল ক্বুরআন: মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে নারী, সন্তান, স্ত্তপীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যভান্ডার, চিহ্নযুক্ত অশ্বরাজি, গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র, এসব পার্থিব জীবনের সম্পদ, আর আল্লাহ -তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম আশ্রয়স্থল।




আহসানুল বায়ান: (১৪) নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভান্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামার প্রভৃতি কমনীয় জিনিসকে মানুষের নিকট শোভনীয় করা হয়েছে।[1] এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে।



মুজিবুর রহমান: মানবমন্ডলীকে রমণী, সন্তান-সন্ততি, পুঞ্জীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যভান্ডার, সুশিক্ষিত অশ্ব ও পালিত পশু এবং শস্য ক্ষেত্রের আকর্ষণীয় বস্ত্ত দ্বারা সুশোভিত করা হয়েছে, এটা পার্থিব জীবনের সম্পদ এবং আল্লাহর নিকট রয়েছে শ্রেষ্ঠতম অবস্থান।



ফযলুর রহমান: নারী, সন্তান-সন্ততি, স্বর্ণ-রৌপ্যের অঢেল সম্পদ, ছাপযুক্ত (সুন্দর সুন্দর) ঘোড়া, গবাদিপশু ও ক্ষেত-খামার ইত্যাদি কাম্যবস্তুর আকর্ষণ মানুষের জন্য মনোহর করা হয়েছে। এসব হল পার্থিব জীবনের ভোগের সামগ্রী। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল (জান্নাত)।



মুহিউদ্দিন খান: মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। আল্লাহর নিকটই হলো উত্তম আশ্রয়।



জহুরুল হক: মানুষের পক্ষে মনোরম ঠেকে নারীদের সাহচর্যের প্রতি আকর্ষণ, ও সন্তানসন্ততির, ও সোনারূপার জমানো ভান্ডারের, ও সুশিক্ষিত ঘোড়া ও গবাদি-পশুর ও ক্ষেতখামারের। এসব এই দুনিয়ার জীবনের উপকরণ, অথচ আল্লাহ্‌, -- তাঁর কাছে রয়েছে উত্তম নিভৃতে বিশ্রাম।



Sahih International: Beautified for people is the love of that which they desire - of women and sons, heaped-up sums of gold and silver, fine branded horses, and cattle and tilled land. That is the enjoyment of worldly life, but Allah has with Him the best return.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১৪. নারী, সন্তান, সোনারূপার স্তুপ, বাছাই করা ঘোড়া, গবাদি পশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এসব দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য বস্তু।(১) আর আল্লাহ্, তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।


তাফসীর:

(১) আয়াতের সারমর্ম এই যে, আল্লাহ তা'আলা মানুষের মনে এসব বস্তুর প্রতি স্বভাবগতভাবেই আকর্ষণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে যে, কে এগুলোর আকর্ষণে মত্ত হয়ে আখেরাতকে ভুলে যায় এবং কে এসবের আসল স্বরূপ ও ধ্বংসশীল হওয়ার বিষয় অবগত হয়ে শুধু যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু অর্জনে সচেষ্ট হয় ও আখেরাতের কল্যাণ আহরণের লক্ষ্যে তার সুচারু ব্যবহার করে। আল্লাহ্ তা'আলা যেসব বস্তুকে মানুষের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে দিয়েছেন, শরীয়ত অনুযায়ী সেগুলো পরিমিত উপার্জন করলে এবং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সঞ্চয় করলে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবী হাসিল হবে।

পক্ষান্তরে অবৈধ পন্থায় সেগুলো ব্যবহার করলে অথবা বৈধ পন্থায় হলেও এগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত নিমজ্জিত হয়ে আখেরাত বিস্মৃত হয়ে গেলে ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়বে। [সা’দী] অর্থাৎ এসব হচ্ছে পার্থিব জীবনে ব্যবহার করার জন্য; মন বসাবার জন্য নয়। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে উত্তম ঠিকানা। সেখানে চিরকাল থাকতে হবে এবং যার নেয়ামত ধ্বংস হবে না, হ্রাসও পাবে না। আখেরাতে আল্লাহ্ তা'আলা মুমিনের জন্য যে নেয়ামত রেখেছেন, তার তুলনা দুনিয়ার জীবনের সামগ্ৰীসমূহের কোন কিছু দিয়েই দেয়া যায় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দুনিয়া অভিশপ্ত এবং যা কিছু এতে আছে তা অভিশপ্ত। তবে যা আল্লাহর যিকর বা স্মরণে করা হয় ও তার সাথে সম্পৃক্ত হয় এবং দ্বীনী জ্ঞানে আলেম ও দ্বীনী জ্ঞান অর্জনকারী। [তিরমিযী: ২৩২২; ইবন মাজাহ: ৪১১২]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১৪) নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভান্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামার প্রভৃতি কমনীয় জিনিসকে মানুষের নিকট শোভনীয় করা হয়েছে।[1] এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে।


তাফসীর:

[1] ‘কমনীয় জিনিস’ বলতে এখানে এমন সব জিনিসকে বুঝানো হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবে মানুষ যার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং যা পছন্দ করে। এই জন্যই তার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং তা ভালবাসা অপছন্দনীয় নয়। তবে শর্ত হল তা মধ্যম পন্থায় এবং শরীয়তের গন্ডির ভিতর হতে হবে। আকর্ষণীয় এই সুশোভন আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। তিনি বলেন, ‘‘আমি পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্য শোভা করেছি মানুষকে পরীক্ষার জন্য---।’’ (সূরা কাহ্ফ ৭ আয়াত) আলোচ্য আয়াতে কমনীয় জিনিসের মধ্যে সর্বপ্রথম মহিলার কথা উল্লেখ হয়েছে। কারণ, সাবালক হওয়ার পর প্রত্যেক মানুষের সব থেকে বেশী প্রয়োজন বোধ হয় একজন সঙ্গিনীর। তাছাড়া রমণী পুরুষের কাছে সর্বাধিক বেশী রমণীয় ও কমনীয়। স্বয়ং নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘মহিলা এবং সুগন্ধি আমার নিকট অতি প্রিয় জিনিস।’’ (মুসনাদে আহমাদ) অনুরূপ তিনি বলেছেন, ‘‘নারী হল দুনিয়ার সব চেয়ে উৎকৃষ্টমানের সামগ্রী।’’ সুতরাং যদি নারীর প্রতি ভালবাসা শরীয়তের সীমা অতিক্রম না করে, তাহলে তা হল উত্তম জীবন সঙ্গিনী এবং আখেরাতের সম্বলও। পক্ষান্তরে (এত প্রয়োজনীয় বলেই) এই নারীই হল দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা বড় ফিৎনা। রসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘আমার পর যেসব ফিৎনা সংঘটিত হবে তার মধ্যে পুরুষদের জন্য সব থেকে বড় ক্ষতিকর ফিৎনা হবে নারী।’’ (বুখারী ৫০৯৬নং) পুত্র-সন্তানদের ব্যাপারটাও অনুরূপ। এ থেকে যদি উদ্দেশ্য মুসলিমদের শক্তি বৃদ্ধি এবং বংশ বহাল ও বৃদ্ধি করা হয়, তবে তা প্রশংসনীয়; অন্যথা তা হবে নিন্দনীয়। রসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘এমন নারীকে বিবাহ কর যে বেশী স্বামী-ভক্তা হবে এবং বেশী বেশী সন্তান প্রসব করবে। কারণ কিয়ামতের দিন আমার উম্মত বেশী হওয়ার জন্য আমি গর্ববোধ করব।’’ এই আয়াতে বৈরাগ্যবাদ এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বা পরিবার-পরিকল্পনার আন্দোলন খন্ডন করা হয়েছে। কেননা, আয়াতে ‘বানীন’ শব্দ বহুবচন। ধন-সম্পদ থেকেও উদ্দেশ্য যদি জীবন ধারণ করা, আত্মীয়দের সাহায্য করা, সাদাকা-খয়রাত করা এবং তা কল্যাণকর পথে ব্যয় করা ও পরের কাছে চাওয়া থেকে বাঁচা হয়, তাহলে তাতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন এবং এই লক্ষ্যে তার (মালের) প্রতি ভালবাসাও হবে প্রশংসনীয়, অন্যথা তা হবে নিন্দনীয়। ঘোড়া থেকে উদ্দেশ্য হবে জিহাদের প্রস্তুতি। অন্যান্য পশু দ্বারা যদি লক্ষ্য হয় চাষাবাদ করা, বোঝা বহনের কাজ নেওয়া এবং জমি থেকে ফসলাদি উৎপন্ন করা, তাহলে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু যদি লক্ষ্য হয় কেবল দুনিয়া অর্জন এবং তা নিয়ে যদি গর্ব ও অহঙ্কার করে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন হয়ে সুখ-সবাচ্ছন্দ্যের জীবন নিয়েই মেতে থাকা হয়, তাহলে লাভদায়ক এই জিনিসগুলোই সর্বনাশের হেতু হবে। قَنَاطِيْرُ হল قِنْطَارٌ এর বহুবচন। অর্থ হল, ধন-ভান্ডার। অর্থাৎ, সোনা-রূপা এবং মাল-ধনের আধিক্য। المُسَوَّمَةِ এমন ঘোড়া যাকে চারণভূমিতে চরে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে অথবা এমন ঘোড়া যাকে জেহাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে কিংবা এমন ঘোড়া যাকে অন্য থেকে পার্থক্য করার জন্য কোন কিছু দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর-ইবনে কাসীর)


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১৪ ও ১৫ নং আয়াতের তাফসীর:



আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তিনি পার্থিব জীবনকে বিভিন্ন প্রকারের উপভোগ্য বস্তু দ্বারা সুশোভিত করে দিয়েছেন।



حُبُّ الشَّهَوٰتِ



বা প্রবৃত্তির ভালবাসা, প্রবৃত্তির আনুগত্য করা। জান্নাত প্রবৃত্তির অনুসরণকে বর্জন ছাড়া লাভ করা সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জান্নাত কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে, আর জাহান্নাম চাকচিক্যময় বস্তু ও প্রবৃত্তির অনুসরণ দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৮২৩)



সুতরাং জান্নাত পেতে হলে কষ্ট ও কাঠিন্যতা অতিক্রম করতে হবে। আর জাহান্নামে যেতে হলে প্রবৃত্তির অনুসরণে কোন বাধা নেই যেমন খুশি তেমন চলতেও কোন বাধা নেই।



‘কাম্য জিনিস’ বলতে এমন সব জিনিসকে বুঝানো হয়েছে যা স্বভাবত মানুষ পছন্দ করে ও ভালবাসে। এ সব জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া বা তা ভালবাসা অপছন্দনীয় নয়; তবে তা হতে হবে শরীয়তের গণ্ডির ভেতরে; কারণ দুনিয়ার সাজ-সজ্জা ও চাকচিক্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা।



আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَي الْأَرْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا) ‏



“পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা-সৌন্দর্য করেছি, মানুষের মধ্যে কর্মের দিক থেকে কে সর্বোত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য।” (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭)



কাম্য জিনিসের মধ্যে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে নারী; কারণ মানুষ স্বভাবগতভাবে যেসব জিনিসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় তার প্রধান হল নারী। একজন পুরুষ সাবালক হবার পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বোধ করে একজন সঙ্গিণীর। তাছাড়া পুরুষের কাছে নারী সর্বাধিক প্রিয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মহিলা ও সুগন্ধি আমার কাছে অতি প্রিয় জিনিস। (নাসায়ী হা: ৩৯৪৯, আহমাদ হা: ৩৪৮২, হাসান) অন্যত্র তিনি বলেন: গোটা দুনিয়া হলো সম্পদ, আর তন্মধ্যে সর্বোত্তম সম্পদ হল সতী-সাধ্বী নারী। (সহীহ মুসলিম হা: ৩৭১৬, নাসায়ী হা: ৩২৩২)



সুতরাং যদি নারীর প্রতি ভালবাসা শরীয়তের সীমালঙ্ঘন না করে তা হলে তা উত্তম। পক্ষান্তরে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ফেতনার কারণ। তাই তাদের থেকে সাবধান হতে হবে।



রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:



ما تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَي الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ



আমি পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর ও ফেতনার কারণ আর কিছু ছেড়ে যাইনি। (সহীহ বুখরী হা: ৫০৯৬, সহীহ মুসলিম হা: ২০৯৭-৯৮)



রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন:



أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ



বানী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফেতনা সৃষ্টি হয়েছিল মহিলাদের ব্যাপারে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৪২)



অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ তা‘আলা সন্তান, ধন-সম্পদ, চতুস্পদ জন্তু ইত্যাদির কথাও উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি এ সব সম্পদ দ্বারা দুনিয়াকে সুশোভিত করে দিয়েছেন।



অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ সবকিছু পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَاعْلَمُوْٓا اَنَّمَآ اَمْوَالُکُمْ وَاَوْلَادُکُمْ فِتْنَةٌﺫ وَّاَنَّ اللہَ عِنْدَھ۫ٓ اَجْرٌ عَظِیْمٌ)‏



“আর জেনে রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষাস্বরূপ এবং আল্লাহরই নিকট মহাপুরস্কার রয়েছে।” (সূরা আনফাল ৮:২৮)



সুতরাং দুনিয়ার এসব সম্পদের মোহে আকৃষ্ট হয়ে পরকালকে ভুলে গেলে চলবে না, বরং দুনিয়ার সম্পদকে পরকালের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মানুষের সন্তান ও সম্পদ উভয় জগতে তার কাজে আসবে যদি তা দীনের আলোকে গড়ে তুলা যায় । যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:



إذا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةِ أَشْيَاءَ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ



যখন মানুষ মৃত্যু বরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল ব্যতীতঃ সদাকায়ে জারিয়া অথবা এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় অথবা সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৩১)



তেমনিভাবে মানুষ যখন তার সম্পদের হক আদায় করবে তখন তার সম্পদ তার উপকারে আসবে। আর যদি হক আদায় না করে তবে সম্পদ তার জন্য পরকালে ক্ষতির কারণ হবে।



(وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ)



“অঢেল ধন-সম্পদ” অঢেল সম্পদের পরিমাণ নিয়ে মতভেদ পাওয়া যায়। কেউ বলেন, এর পরিমাণ হচ্ছে বড় পাহাড়ের সমান।



অন্য একদল বলেন: দু’হাজার উকিয়া। হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: বার শত স্বর্ণমুদ্রা। কারো মতে, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা।



‘চি‎‎হ্নিত ঘোড়া’ এমন ঘোড়া যাকে চারণভূমিতে চরে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে অথবা এমন ঘোড়া যাকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে কিংবা এমন ঘোড়া যাকে অন্য থেকে পার্থক্য করার জন্য কোন কিছু দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)



রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ঘোড়া তিন প্রকার:



১. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে মানুষকে দেখানোর জন্য, গর্ব করার জন্য ও ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য, এমন ঘোড়া তার জন্য পাপের কারণ হবে।



২. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যবহারের জন্য, কিন্তু তার দ্বারা নিজে উপকৃত হলেও আল্লাহ তা‘আলার হক ভুলে যায় না। এমন উদ্দেশ্যে ঘোড়া প্রতিপালনের কারণে সে ব্যক্তির জন্য তা জাহান্নামের অন্তরায় হবে।



৩. এমন ঘোড়া যা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করার জন্য প্রতিপালন করা হয় সে ঘোড়া প্রতিপালকের জন্য নেকীর কারণ হবে। (সহীহ মুসলিম হা: ৯৮৭)



এগুলো হল দুনিয়ার ভোগের সামগ্রী অথচ আল্লাহ তা‘আলার নিকট যে সমস্ত জিনিস রয়েছে তা এ সমস্ত বস্তু অপেক্ষা উত্তম। সেগুলো হল চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর এগুলো হল তাদের জন্য যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবে, তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাঁর আদেশ নিষেধ মানবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ أُولٰ۬ئِكَ أَصْحٰبُ الْجَنَّةِ)



“এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে তারাই জান্নাতবাসী।” (সূরা বাকারাহ ২:৮২)



আল্লাহ তা‘আলার বাণী:



(وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ)



“আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়।” (সূরা বাকারাহ ২:২৫)



তাদের জন্য তথায় আরো থাকবে পূত-পবিত্র নারীগণ। যারা দুনিয়াবী সমস্ত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(حُوْرٌ مَّقْصُوْرٰتٌ فِی الْخِیَامِﮗﺆ فَبِاَیِّ اٰلَا۬ئِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبٰنِﮘﺆ لَمْ یَطْمِثْھُنَّ اِنْسٌ قَبْلَھُمْ وَلَا جَا۬نٌّ)



“তাঁবুতে থাকবে সুরক্ষিত হূর; সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে? পূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন তাদের স্পর্শ করেনি।” (সূরা আর-রহমান ৫৫:৭২-৭৪)



তাদের প্রতি থাকবে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি; কেননা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির চেয়ে বড় নি‘য়ামত আর কিছুই হতে পারে না। সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবে তাদের জন্যই রয়েছে এসমস্ত প্রতিদান।



আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. দুনিয়াকে বিভিন্ন জিনিস দ্বারা সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।

২. দুনিয়ার মোহে পড়ে পরকালকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

৩. সন্তান ও সম্পদ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করলে উপকারে আসবে অন্যথায় তা ক্ষতির কারণ হবে।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১৪-১৫ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা'আলা বর্ণনা করছেন যে, পার্থিব জীবনকে বিভিন্ন প্রকারের উপভোগ্য (বস্তু) দ্বারা সুশোভিত করা হয়েছে। এ সমুদয় জিনিসের মধ্যে সর্বপ্রথম নারীদের কথা বর্ণনা করেছেন, কেননা তাদের অনিষ্ট সবচেয়ে বড়। বিশুদ্ধ হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি আমার পরে পুরুষদের উপর স্ত্রীদের চেয়ে বেশী ক্ষতিকর ও ফিত্না ছেড়ে গেলাম না। হ্যা, তবে যখন বিবাহ দ্বারা কোন লোকের উদ্দেশ্য হবে ব্যভিচার হতে রক্ষা পাওয়া ও সন্তানাদির আধিক্য তখন নিঃসন্দেহে ওটা উত্তম কাজ হবে। শরীয়ত বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছে এবং বিয়ে করা এমনকি বহু বিয়ে করার ফযীলতের অনেক হাদীসও এসেছে এবং এ উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে অধিক স্ত্রীর অধিকারী। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ ‘দুনিয়া একটি উপকারের বস্তু এবং ওর সর্বোত্তম উপকারী জিনিস হচ্ছে সতী সাধ্বী পত্নী। স্বামী যদি তার দিকে। দৃষ্টিপাত করে তবে সে তাকে সন্তুষ্ট করে, যদি নির্দেশ দেয় তবে পালন করে। আর যদি সে স্ত্রী হতে অনুপস্থিত থাকে তবে সে নিজের জীবনের ও স্বামীর ধন-মালের রক্ষণাবেক্ষণ করে। অন্য হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘আমার নিকট নারী ও সুগন্ধি অত্যন্ত পছন্দনীয় এবং আমার চক্ষু ঠাণ্ডাকারী হচ্ছে নামায। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ছিল নারীগণ, তবে তিনি ঘোড়াও খুব পছন্দ করতেন। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, তার খুব চাহিদার জিনিস ঘোড়া ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। হ্যা, তবে শুধুমাত্র নারীরা ছিল। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, স্ত্রীদেরকে ভালবাসার মধ্যে মঙ্গলও রয়েছে এবং অমঙ্গলও রয়েছে। অনুরূপভাবে অন্যদের উপর অহংকার প্রকাশ করার জন্যে যদি অধিক সন্তান লাভ কামনা করে তবে তা নিন্দনীয়। কিন্তু যদি এর দ্বারা বংশ বৃদ্ধি ও হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর উম্মতের মধ্যে একত্ববাদী মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য থাকে তবে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। হাদীস শরীফে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘ভালবাসা স্থাপনকারিণী ও অধিক সন্তান প্রসবকারিণী নারীদেরকে তোমরা বিয়ে কর, কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের সংখ্যার আধিক্যের কারণে অন্যান্য উম্মতবর্গের উপর গর্ববোধ করবো।' মাল-ধনের ব্যাপারেও একই কথা। যদি ওর প্রতি ভালবাসার উদ্দেশ্য হয় দুর্বলদের ঘৃণা করা ও দরিদ্রের উপর অহংকার প্রকাশ করা, তবে তা অতি জঘন্য। আর যদি মালের চাহিদার উদ্দেশ্য হয় নিকটের ও দূরের আত্মীয়দের উপর খরচ করা, সকার্যাবলী সম্পাদন করা এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করা তবে তা শরীয়ত সম্মত ও খুবই উত্তম। (আরবী)-এর পরিমাণের ব্যাপারে তাফসীর কারকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। মোটকথা এই যে, অত্যধিক মালকে (আরবী) বলা হয়। যেমন হযরত যন্হাকের উক্তি রয়েছে। আরও বহু উক্তি রয়েছে, যেমন এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা, বারো হাজার, চল্লিশ হাজার, ষাট হাজার, সত্তর হাজার, আশি হাজার ইত্যাদি। মুসনাদ-ই-আহমাদের একটি মারফু হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘বারো হাজার আওকিয়ায় এক কিনতার হয় এবং প্রত্যেক আওকিয়া পৃথিবী ও আকাশ হতে উত্তম। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে এ রকমই একটি মাওকুফ হাদীসও বর্ণিত আছে এবং এটাই সর্বাপেক্ষা সঠিক। হযরত ইবনে জারীর (রঃ), হযরত মু'আয ইবনে জাবাল (রাঃ) এবং হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতেও এটা বর্ণনা করেছেন। ইবনে হাতিম (রঃ)-এর গ্রন্থে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) এবং হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, বারো আওকিয়া’য় এক কিনতার হয়। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘বারোশ আওকিয়া’য় এক কিনতার হয়। কিন্তু এ হাদীসটি ‘মুনকার'। সম্ভবতঃ এটা হযরত উবাই ইবনে কাবের উক্তি। যেমন অন্যান্য সাহাবীরও (রাঃ) এই উক্তি রয়েছে। ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ) হযরত আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি একশ আয়াত পাঠ করবে তার নাম উদাসীনদের মধ্যে লেখা হবে না এবং যে ব্যক্তি এক হাজার পর্যন্ত পাঠ করবে তাকে এক কিনতার পুণ্য দেয়া হবে। আর কিনতার হচ্ছে বড় পাহাড়ের সমান।' মুসতাদরিক-ইহাকিম’ গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এ শব্দটির ভাবার্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “দু'হাজার আওকিয়া।' ইমাম হাকিম (রঃ) হাদীসটিকে ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ)-এর শর্তের উপর সঠিক বলেছেন। ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) হাদীসটি আনেননি। তাবরানী প্রভৃতি মনীষীর হাদীস গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে যে, কিনতার হচ্ছে এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা। হযরত হাসান বসরী (রঃ) হতে মাওকুফ’ বা ‘মুরসাল’ রূপে বর্ণিত আছে যে, কিনতার হচ্ছে বারোশ স্বর্ণমুদ্রা। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এটাই বর্ণিত আছে। হযরত যহহাক (রঃ) বলেন যে, কোন কোন আরববাসী কিনতারকে বারোশ বলে থাকেন আবার কেউ কেউ বারো হাজার বলেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন যে, বলদের গাত্র-চর্ম পূর্ণ হয়ে যায় এই পরিমাণ স্বর্ণকে কিনতার বলা হয়। এটা মারফু রূপেও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এর মাওকুফ হওয়াই অধিকতর সঠিক।

অশ্বের প্রতি প্রেম তিন প্রকারের। প্রথম হচ্ছে ঐসব লোক যারা অশ্বের উপর আরোহণ করে আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্যে তা লালন-পালন করে। তাদের জন্য এ ঘোড়া পুণ্য ও সওয়াবের কারণ। দ্বিতীয় হচ্ছে তারাই যারা গর্ব ও অহংকার প্রকাশের উদ্দেশ্যে অশ্ব পালন করে থাকে। এদের জন্য শাস্তি রয়েছে। তৃতীয় হচ্ছে ওরাই যারা ভিক্ষাবৃত্তি হতে রক্ষা পাওয়া এবং ওর বংশ রক্ষার উদ্দেশ্যে অশ্ব পালন করে এবং আল্লাহ তা'আলার প্রাপ্য বিস্মরণ হয় না। এদের জন্যে পুণ্য বা শাস্তি কোনটাই নেই। এ বিষয়ের (আরবী) হাদীস (৮:৬০) -এ আয়াতের তাফসীরে ইনশাআল্লাহ আসবে।

(আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে চিহ্নিত এবং কপালে ও চার পায়ে সাদা চিহ্নযুক্ত ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “প্রত্যেক আরবী অশ্ব ফজরের সময় আল্লাহ তাআলার অনুমতিক্রমে দু'টি প্রার্থনা করে থাকে। সে বলেঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যার অধিকারে রেখেছেন তার অন্তরে আমার ভালবাসা তার মাল ও পরিবার অপেক্ষা বেশী করে দিন। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে উট, ছাগল ও গরু। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে ঐ ভূমি যা ফসলের বীজ বপন বা বৃক্ষরোপণের জন্যে তৈরী করা হয়। মুসনাদ-ই-আহমাদের মধ্যে হাদীস রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ মানুষের উত্তম মাল হচ্ছে অধিক বংশ বিশিষ্ট ঘোড়া এবং অধিক ফলবান বৃক্ষ হচ্ছে খেজুর বৃক্ষ।'

অতঃপর বলা হচ্ছেঃ ‘এগুলো পার্থিব জীবনের লোভনীয় সম্পদ। অর্থাৎ এগুলো ইহলৌকিক জীবনের লোভনীয় বস্তু, এগুলো সবই ধ্বংস হয়ে যাবে এবং শ্রেষ্ঠতম অবস্থান স্থল ও উত্তম বিনিময় প্রাপ্তির জায়গা মহান আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। মুসনাদ-ই-আহমাদের মধ্যে রয়েছে যে, যখন (আরবী) এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি যখন আমাদের জন্যে এটাকে সুশোভিত করেছেন তাহলে এখন'? তখন পরবর্তী আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এখানে হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলা হয়ঃ (হে নবী সঃ)! তুমি বলে দাও আমি তোমাদেরকে এসব অপেক্ষা উত্তম জিনিসের সংবাদ দিচ্ছি। এ পার্থিব জিনিসগুলো তো একদিন না একদিন ধ্বংস হবেই। কিন্তু আমি তোমাদেরকে যেসব জিনিসের কথা বলছি সেগুলো অস্থায়ী নয় বরং চিরস্থায়ী। জেনে রেখো যে, যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্যে তাদের প্রভুর নিকট এমন সুখময় জান্নাত রয়েছে যার ধারে ধারে ও যার বৃক্ষাদির মধ্যস্থলে বিভিন্ন প্রকারের স্রোতস্বিনী সমূহ বয়ে যাচ্ছে। কোন স্থানে রয়েছে মধুর নদী, কোন জায়গায় রয়েছে দুধের নদী, কোথাও বা রয়েছে সুরার স্রোতস্বিনী এবং কোন স্থলে রয়েছে স্বচ্ছ পানির প্রস্রবণ। আরও এমন এমন সুখ-সম্পদ রয়েছে যা না শ্রবণ করেছে কোন কর্ণ, না দর্শন করেছে কোন চক্ষু, ধারণা করেছে কেন অন্তর। এরূপ সুখময় ও আরামদায়ক স্থানে মুত্তাকী লোকেরা চিরকাল অবস্থান করবে। তথা হতে তাদেরকে বের করে দেয়া হবে। না, তাদেরকে প্রদত্ত নিয়ামতরাজী কমে যাবে না এবং ধ্বংসও হবে না। অতঃপর তথায় এমন সহধর্মিণী পাওয়া যাবে যারা ময়লা মালিন্য, অপবিত্রতা, ঋতুরক্তক্ষরণ ইত্যাদি হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত থাকবে। তাদের মধ্যে সর্বপ্রকারের পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা বিরাজ করবে। সর্বোপরি খুশীর কারণ এই যে, মহান আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেন। এর পরেও আল্লাহর অসন্তুষ্টির কোন ভয় থাকবে না। এজন্যেই সূরা-ই-বারাআতের নিম্নের আয়াতে বলা হয়েছে (আরবী) অর্থাৎ ‘এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিই খুব বড় জিনিস'। (২:৭২) অর্থাৎ নিয়ামত সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে প্রভুর সন্তুষ্টি লাভ। সমস্ত বান্দাই আল্লাহ তা'আলার দৃষ্টির মধ্যে রয়েছে। কে তাঁর অনুগ্রহ লাভের যোগ্য এবং কে যোগ্য নয় তা তিনিই ভাল জানেন।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।