আল কুরআন


সূরা সোয়াদ (আয়াত: 88)

সূরা সোয়াদ (আয়াত: 88)



হরকত ছাড়া:

ولتعلمن نبأه بعد حين ﴿٨٨﴾




হরকত সহ:

وَ لَتَعْلَمُنَّ نَبَاَهٗ بَعْدَ حِیْنٍ ﴿۸۸﴾




উচ্চারণ: ওয়ালা তা‘লামুন্না নাবাআহূবা‘দা হীন।




আল বায়ান: আর অল্পকাল পরে তুমি অবশ্যই এর সংবাদ জানবে।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৮৮. আর এর সংবাদ তোমরা অবশ্যই জানবে, কিছুদিন পরে।(১)




তাইসীরুল ক্বুরআন: কিছুকাল পরেই এর সংবাদ তোমরা অবশ্য অবশ্যই জানতে পারবে।




আহসানুল বায়ান: (৮৮) এর সংবাদের সত্যতা তোমরা কিছুকাল পরে অবশ্যই জানতে পারবে।’ [1]



মুজিবুর রহমান: এর সংবাদ তোমরা অবশ্যই জানবে, কিছুকাল পরে।



ফযলুর রহমান: কিছুকাল পরই তোমরা এর সংবাদ (এতে বর্ণিত যাবতীয় তথ্যের সত্যতা) অবশ্যই জানতে পারবে।



মুহিউদ্দিন খান: তোমরা কিছু কাল পরে এর সংবাদ অবশ্যই জানতে পারবে।



জহুরুল হক: আর তোমরা অবশ্যই এর বৃত্তান্ত সন্বন্ধে কিছুকাল পরেই জানতে পারবে।



Sahih International: And you will surely know [the truth of] its information after a time."



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৮৮. আর এর সংবাদ তোমরা অবশ্যই জানবে, কিছুদিন পরে।(১)


তাফসীর:

(১) অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে তারা কয়েক বছরের মধ্যে স্বচক্ষে দেখে নেবে। আমি যা বলছি তা সঠিক প্রমাণিত হবেই। আর যারা মরে যাবে তারা মৃত্যুর দুয়ার অতিক্রম করার পরপরই জানতে পারবে, আমি যা কিছু বলছি তা-ই প্রকৃত সত্য। [দেখুন: তাবারী, ইবন কাসীর]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৮৮) এর সংবাদের সত্যতা তোমরা কিছুকাল পরে অবশ্যই জানতে পারবে।” [1]


তাফসীর:

[1] অর্থাৎ, কুরআন যে সকল বস্তুর সংবাদ ও বর্ণনা দিয়েছে, যে পুরস্কার ও তিরস্কারের কথা বলেছে, তার সত্যতা অতি সত্বর তোমাদের সামনে এসে যাবে। সুতরাং তার কিছু সংবাদের সত্যতা বদর ও মক্কা বিজয়ের দিন প্রকাশ পেয়েছে। অথবা মৃত্যুর সময় সকলের কাছে তা প্রকাশ হয়ে যাবে।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৭১-৮৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :



আলোচ্য আয়াতগুলোতে আদম (আঃ)-এর সৃষ্টি এবং সৃষ্টি করার পর সকল ফেরেশতা কৃর্তক তাঁকে সিজদাহ্ করানো, ইত্যাদিসহ ইবলিসের সাথে আল্লাহ তা‘আলার কথোপকথন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।



আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে অবগত করলেন যে, তিনি মাটির মানুষ (আদমকে) সৃষ্টি করবেন, এটা ছিল ফেরেশতাদেরকে অবগত করানোর জন্য, পরামর্শ করার জন্য নয়। তখন ফেরেশতারা যে অভিব্যক্তি পেশ করেছিল তা সূরা বাকারার ৩০ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন আদমকে সৃষ্টি করলেন এবং আদমের ভিতরে রূহ দিলেন তখন সকল ফেরেশতা সিজদাহ্ করল কিন্তু ইবলীস করল না, সে অস্বীকার ও অহঙ্কার করল।



(خَلَقْتُ بِيَدَيَّ)



‘নিজের হাতে সৃষ্টি করেছি’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-কে স্বহস্তে সৃষ্টি করার পর ইবলিসকে বললেন, আমি যাকে স্বহস্তে সৃষ্টি করে অন্যান্য মাখলুক থেকে সম্মানিত করেছি তুমি কেন তাকে সিজদাহ করলে না, তুমি কি অহঙ্কার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন? তখন ইবলিস নিজেকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ও শ্রেষ্ঠ বলে যুক্তি দেখালো যে, আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছ, আর তাকে সৃষ্টি করেছ মাটি থেকে। আগুন মাটির কাছে মাথা নত করতে পারে না। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামত অবধি লা‘নত করে বিতাড়িত করে দেন। এ সম্পর্কে পূর্বে সূরা আল হিজ্র, সূরা আল আ‘রাফ-সহ অন্যান্য সূরাতেও পূর্ণভাবে আলোচনা করা হয়েছে।



(بَعْدَ حِيْنٍ) ‘কিছুকাল পরে’ অর্থ কেউ বলেছেন মৃত্যু, আবার কেউ বলেছেন কিয়ামত। তবে দুয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কারণ মৃত্যুর পরেই মানুষের কিয়ামত শুরু হয়ে যায়।



মাসরূক (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-এর কছে গেলাম। তিনি বললেন : হে লোকসকল! যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে অবগত সে তা বর্ণনা করবে। আর যে না জানে তার বলা উচিত, আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন। কেননা অজানা বিষয় সম্বন্ধে আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন। এ কথা বলাও জ্ঞানের নিদর্শন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেছেন বল, এর (কুরআন বা তাওহীদ প্রচারের) জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং আমি মিথ্যারোপকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮০৯, সহীহ বুখারী হা. ২৭৯৮)



শয়তান আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, মানুষকে তার অনুসারী বানিয়ে জাহান্নামে নিবেই। এ জন্য তাকে কিয়ামত অবধি অবকাশ দেয়া হয়েছে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনক্রমেই শয়তানের ফাঁদে পড়ে নিজেকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে না দেই।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :



১. আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে, তিনি নিজ হাতে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন।

২. নিজে অনেক বড় হলেও নিম্ন শ্রেণির লোকদেরকে অবহেলা করা যাবে না।

৩. গর্ব-অহঙ্কার করা হতে বিরত থাকতে হবে, কারণ অহঙ্কার ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় যেমন ইবলিসকে নিয়ে গেছে।

৪. শয়তানের ধোঁকা থেকে সাবধান, কারণ সে আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে যে, তার অনুসারীদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাবেই।

৫. কেউ আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য হলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে অবকাশ দেন, তবে তার জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৮৬-৮৮ নং আয়াতের তাফসীর:

মহান আল্লাহ বলেন, হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তুমি জনগণের মধ্যে ঘোষণা করে দাওঃ আমি দ্বীনের তবলীগ এবং কুরআনের আহকামের উপর তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাচ্ছি না। এর দ্বারা পার্থিব কোন লাভ আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি এরূপও নই যে, আল্লাহ তা'আলা অবতীর্ণ করেননি অথচ আমি নিজের পক্ষ হতে তা রচনা করবো। বরং আল্লাহ্ তা'আলা আমার কাছে যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন তা-ই আমি তোমাদের নিকট পৌছিয়ে দিচ্ছি। তাতে আমি সামান্য পরিমাণও কম-বেশী করি না। এর দ্বারা আমি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করি। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “হে লোক সকল! যে ব্যক্তি কোন মাসআলা জানে সে যেন জনগণের সামনে তা বর্ণনা করে দেয়। আর যা জানে না সে সম্বন্ধে যেন বলেঃ “আল্লাহই ভাল জানেন।' দেখো, আল্লাহ তাআলা স্বীয়। নবীকেও (আঃ) এ কথাই বলতে বলছেনঃ “যারা মিথ্যা দাবী করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। এটা তো বিশ্বজগতের জন্যে উপদেশ মাত্র। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেন আমি তোমাদেরকে ও যাদের কাছে এটা পৌছে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করি।” (৬:১৯) অন্য এক আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “দলসমূহের যে কুফরী করবে তার সাথে জাহান্নামের ওয়াদা রয়েছে। (অর্থাৎ সে জাহান্নামী)।” (১১:১৭) মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ এর সংবাদ তোমরা অবশ্যই জানবে, কিয়ৎকাল পরে। অর্থাৎ আল্লাহর কথার সত্যতা মানুষ সত্বই জানতে পারবে। অর্থাৎ তারা এটা মৃত্যুর পরই এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়া মাত্রই জানতে পারবে। এ সবকিছু মানুষ মৃত্যুর সময় বিশ্বাস করবে এবং কিয়ামতের দিন স্বচক্ষে সবই দেখতে পাবে।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।