আল কুরআন


সূরা আস-সাফফাত (আয়াত: 12)

সূরা আস-সাফফাত (আয়াত: 12)



হরকত ছাড়া:

بل عجبت ويسخرون ﴿١٢﴾




হরকত সহ:

بَلْ عَجِبْتَ وَ یَسْخَرُوْنَ ﴿۪۱۲﴾




উচ্চারণ: বাল ‘আজিবতা ওয়া ইয়াছখারূন।




আল বায়ান: বরং তুমি বিস্মিত হচ্ছ আর ওরা বিদ্রূপ করছে।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১২. আপনি তো বিস্ময় বোধ করছেন, আর তারা করছে বিদ্রূপ।(১)




তাইসীরুল ক্বুরআন: (আল্লাহর শক্তি-ক্ষমতা-মহিমা দেখে) তুমি কর বিস্ময়বোধ, আর তারা করে বিদ্রূপ।




আহসানুল বায়ান: (১২) তুমি তো বিস্ময়বোধ করছ, আর ওরা করছে বিদ্রূপ। [1]



মুজিবুর রহমান: তুমিতো বিস্ময় বোধ করছ, আর তারা করছে বিদ্রুপ।



ফযলুর রহমান: বরং (তাদের ঔদ্ধত্যে) তুমি বিস্ময় বোধ করো, আর তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে।



মুহিউদ্দিন খান: বরং আপনি বিস্ময় বোধ করেন আর তারা বিদ্রুপ করে।



জহুরুল হক: বস্তুতঃ তুমি তো তাজ্জব হচ্ছো, আর তারা করছে মস্করা।



Sahih International: But you wonder, while they mock,



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১২. আপনি তো বিস্ময় বোধ করছেন, আর তারা করছে বিদ্রূপ।(১)


তাফসীর:

(১) কাতাদাহ বলেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্চর্য হচ্ছিলেন যে, এ কুরআন তাকে দেয়া হয়েছে, অথচ পথভ্রষ্টরা এটাকে নিয়ে উপহাস করছে। [তাবারী]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১২) তুমি তো বিস্ময়বোধ করছ, আর ওরা করছে বিদ্রূপ। [1]


তাফসীর:

[1] অর্থাৎ, তুমি তাদের পরকাল অস্বীকার করার কথা শুনে বিস্মিত হচ্ছ এই ভেবে যে, তার সংঘটন সম্ভব বরং সুনিশ্চিত হওয়ার ব্যাপারে এমন সুস্পষ্ট প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও তারা তা স্বীকার ও বিশ্বাস করছে না; বরং উল্টা তারা তোমার মুখে কিয়ামত ঘটার কথা শুনে বিদ্রূপ করে বলে যে, তা কিভাবে সম্ভব?


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১১-২৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর :



এখানে আল্লাহ তা‘আলা ঐ সকল কাফির-মুশরিকদের কথা বর্ণনা করছেন যারা কিয়ামত ও পুনরুত্থান দিবসকে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ তা‘আলার কোন নিদর্শন দেখলে হাসি-তামাশা ছলে বর্জন করে এবং সাথে সাথে মানুষের সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কেও। আল্লাহ তা‘আলা এখানে পুনরুত্থানের দুটি দলীল পেশ করেছেন।



(১) (فَاسْتَفْتِهِمْ أَهُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمْ مَّنْ خَلَقْنَا)



অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মানুষ ব্যতীত অন্যান্য যে-সকল মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন যেমন আকাশ, জমিন, পাহাড়, সমুদ্র, চন্দ্র-সূর্য ও ফেরেশতা ইত্যাদি। এসব বিশাল বিশাল সৃষ্টি পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন, নাকি মানুষকে সৃষ্টি করা কঠিন? প্রশ্নের কোন উত্তর নেই, কেবল একটি কথা ছাড়া যে, আল্লাহ তা‘আলা বিশাল বিশাল মাখলুক সৃষ্টিতে সক্ষম হলে তিনি মানুষকেও সৃষ্টি করতে সক্ষম, তাতে কোন সন্দেহ নেই। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



(أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللّٰهَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ وَلَمْ يَعْيَ بِخَلْقِهِنَّ بِقَادِرٍ عَلٰٓي أَنْ يُّحْيِيَ الْمَوْتٰي ط بَلٰٓي إِنَّه۫ عَلٰي كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ)‏



“তারা কি এটুকুও বোঝে না, যে আল্লাহ জমিন ও আসমান সৃষ্টি করলেন এবং এগুলো সৃষ্টি করতে তিনি ক্লান্ত হননি, সেই আল্লাহ মৃতকে অবশ্যই জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন। কেন নয়? নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর ওপর শক্তিশালী।” (সূরা আহকাফ ৪৬ : ৩৩)



(২) (إِنَّا خَلَقْنٰهُمْ مِّنْ طِيْنٍ لَّازِبٍ)



এ কথার এক অর্থ এই যে, তাদের আদি পিতা আদম (আঃ)-কে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছিল। দ্বিতীয় অর্থ প্রত্যেক মানুষই মাটি দ্বারা সৃষ্টি। কারণ, প্রত্যেকের সৃষ্টির মূল উপাদান হল মাটি। যে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করতে পারলেন তিনি পুনরায় তাদের সৃষ্টি করতে সক্ষম। কারণ অন্যান্য বস্তু অপেক্ষা মানুষের সৃষ্টি অধিকতর সহজ। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে আঠাল মৃত্তিকা হতে। এ সৃষ্টি সম্পর্কে পূর্বে সূরা হাজ্জ-এর ৫ নম্বর আয়াতসহ একাধিক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।



এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা উপদেশ গ্রহণ করে না, যারা আল্লাহ তা‘আলার বিধানের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে এবং পুনরুত্থান দিবসকে অস্বীকার করে তাদেরকে কিয়ামতের মাঠে লাঞ্চিত অবস্থায় পুনরুত্থিত করা হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী :



(وَأَلْقَوْا إِلَي اللّٰهِ يَوْمَئِذِ نِالسَّلَمَ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ)‏



“সেদিন তারা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করবে এবং তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত তা তাদের থেকে উধাও হয়ে যাবে।” (সূরা নাহ্ল ১৬ : ৮৭)



زَجْرَةٌ অর্থ ধমক দেয়া, এখানে ফুঁৎকার বা বিকট আওয়াজকে বুঝানো হয়েছে। কারণ এর উদ্দেশ্য হল কাফিরদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং তাদেরকে ধমক দেয়া। অর্থাৎ পুনরুত্থানকে অস্বীকারকারী কাফির-মুশরিকরা যখন কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা দেখবে এবং কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখী হবে তখন তারা আফসোস করে বলবে : এটাই হচ্ছে কর্মফল দিবস। তাদের আফসোস বৃদ্ধি ও তিরস্কার করে বলা হবে : ‘এটাই সেই ফায়সালার দিন, যাকে তোমরা অস্বীকার করতে।’



কিয়ামতের দিন ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে- যারা জালিম তথা কাফির তাদেরকে এবং তাদের সাথী ও তারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যাদের ইবাদত করত তাদের সবাইকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত কর। وَأَزْوَاجَهُمْ বা তাদের সাথী বলতে : অধিকাংশ বিদ্বানদের মতে- তাদের মত ও তাদের সদৃশ।



সুতরাং যারা মূর্তিপূজা করে অনুরূপ মূর্তিপূজকদেরকে একত্রে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে, চোর চোরের সাথে জাহান্নামে যাবে, ব্যভিচার ব্যভিচারীর সাথে জাহান্নামে যাবে, এভাবে একই ধরণের অপরাধীরা সহচর হয়ে জাহান্নামে যাবে।



(وَمَا كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ)



(যাদের) শব্দটি ব্যাপকার্থে ব্যবহার করে সকল উপাস্যকে বুঝানো হয়েছে। সে উপাস্য মূর্তি হোক বা নিজের ইবাদতের দিকে আহ্বানকারী আল্লাহ তা‘আলার কোন নেক বান্দা, সকলকে লজ্জিত করার জন্য একত্রিত করা হবে। নেক বান্দাদের তো আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবেন, তবে অন্য উপাস্যগুলোকে তাদের সাথেই জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। পথিমধ্যে ফেরেশতাদেরকে বলা হবে তাদেরকে থামাও! তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি। আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞাসা করে বলবেন : তোমাদের কী হল যে, পরস্পর সাহায্য করছ না? তাদের কোন জবাব থাকবে না, বরং সবাই আত্মসমর্পণ করবে।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :



১. মানুষকে আঁঠাল মাঠি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

২. কিয়ামতের মাঠে কেউ কাউকে কোন প্রকার সাহায্য করতে পারবে না।

৩. যারা এক আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যদের ইবাদত করে তাদের সকলকে একত্রে জাহান্নামে দেয়া হবে যাতে তারা এ কথা জেনে নিতে পারে যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যান্য উপাস্যরা কোন উপকার করতে পারে না।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১১-১৯ নং আয়াতের তাফসীর:

আলাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ তুমি কিয়ামত অস্বীকার কারীদেরকে প্রশ্ন করঃ আল্লাহ্ তা'আলার কাছে তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিন, না আসমান, যমীন, ফেরেশতা, জ্বিন ইত্যাদি সৃষ্টি করা কঠিন? হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কিরআতে (আরবী) রয়েছে। ভাবার্থ এই যে, তারা তো এসবের সত্যতা স্বীকার করে, তবে মৃত্যুর পর পুনর্জীবনকে তারা কেন অস্বীকার করে? অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “অবশ্যই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করা মানব সৃষ্টি করা অপেক্ষা কঠিনতর, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জানে না।”(৪০:৫৭)।

অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ আমি তাদেরকে আঠাল মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। মুজাহিদ (রঃ), সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) এবং যহ্হাক (রঃ) বলেন। যে, মানুষকে এমন মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে যা হাতের মাঝে আঠালভাবে লেগে যায়।

আল্লাহ পাকের উক্তিঃ হে নবী (সঃ)! তুমি তো বিস্ময়বোধ করছে আর তারা বিদ্রুপ করছে। কারণ তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে, আর তুমি তাতে দৃঢ় বিশ্বাসী। আল্লাহ্ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, মানুষের মৃত্যুর পর তাদের গলিত দেহ পুনর্গঠন করা হবে, এ শুনে তারা তামাশা করছে। আর যখন কোন প্রকাশ্য প্রমাণ তাদের সামনে পেশ করা হয় তখন তারা বিদ্রুপ করে বলে যে, এটা তো নিচক যাদুর খেলা। তারা বলেঃ মৃত্যুর পর আমরা মাটিতে মিশে যাবো এবং এরপর পুনরুজ্জীবিত হবো, এমন কি আমাদের পূর্বপুরুষদেরও পুনরায় জীবিত করা হবে, এ কথা তো আমরা কখনো মানতে পারি না।

তাদের এ কথার জবাবে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে বলে দাওঃ তোমরা যে অবস্থাতেই থাকো না কেন তোমাদেরকে অবশ্যই পুনর্জীবিত করা হবে। কারণ তোমরা সবাই আল্লাহর ক্ষমতাধীন। তাঁর সামনে কারো কোন অস্তিত্ব নেই। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেকেই তাঁর কাছে লাঞ্ছিত অবস্থায় আসবে।”(২৭:৮৭) আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করবে, সত্বরই তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”(৪০:৬০)

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ এটা তো একটিমাত্র প্রচণ্ড শব্দ, আর তখনই তারা প্রত্যক্ষ করবে। অর্থাৎ যেটাকে তোমরা খুবই কঠিন মনে করছো তা আল্লাহর কাছে মোটেই কঠিন নয়, বরং খুবই সহজ। একটিমাত্র প্রচণ্ড শব্দ হবে, আর তখনই সবাই কবর হতে বের হয়ে কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।