আল কুরআন


সূরা আর-রুম (আয়াত: 29)

সূরা আর-রুম (আয়াত: 29)



হরকত ছাড়া:

بل اتبع الذين ظلموا أهواءهم بغير علم فمن يهدي من أضل الله وما لهم من ناصرين ﴿٢٩﴾




হরকত সহ:

بَلِ اتَّبَعَ الَّذِیْنَ ظَلَمُوْۤا اَهْوَآءَهُمْ بِغَیْرِ عِلْمٍ ۚ فَمَنْ یَّهْدِیْ مَنْ اَضَلَّ اللّٰهُ ؕ وَ مَا لَهُمْ مِّنْ نّٰصِرِیْنَ ﴿۲۹﴾




উচ্চারণ: বালিততাবা‘আল্লাযীনা জালামূআহওয়াআহুম বিগাইরি ‘ইলমিন ফামাইঁ ইয়াহদী মান আদাল্লাল্লা-হু ওয়ামা-লাহুম মিন না-সিরীন।




আল বায়ান: বরং যালিমরা জ্ঞান ছাড়াই তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। সুতরাং যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন কে তাকে হিদায়াত করবে? আর তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ২৯. বরং যালিমরা অজ্ঞতাবশত তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে, কাজেই আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন কে তাকে হিদায়াত দান করবে? আর তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।




তাইসীরুল ক্বুরআন: বরং সীমালঙ্ঘনকারীরা কোন জ্ঞান ছাড়াই তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে; কাজেই আল্লাহই যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে সৎপথ দেখাবে কে? তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।




আহসানুল বায়ান: (২৯) অজ্ঞানতাবশতঃ সীমালংঘনকারীরা তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে থাকে;[1] সুতরাং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেছেন কে তাকে সৎপথে পরিচালিত করবে?[2] তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।[3]



মুজিবুর রহমান: বস্তুতঃ সীমালংঘনকারীরা অজ্ঞতা বশতঃ তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে, সুতরাং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, কে তাকে সৎ পথে পরিচালিত করবে? তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।



ফযলুর রহমান: (অবশ্যই না;) বরং জালেমরা অজ্ঞানতার কারণেই তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে থাকে। তাই আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে পথ দেখাবে কে? তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই।



মুহিউদ্দিন খান: বরং যারা যে-ইনসাফ, তারা অজ্ঞানতাবশতঃ তাদের খেয়াল-খূশীর অনুসরণ করে থাকে। অতএব, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কে বোঝাবে? তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।



জহুরুল হক: বস্তুত যারা অন্যায়াচরণ করে তারা জ্ঞানহীনতা বশতঃ তাদের কামনার অনুসরণ করে। সেজন্যে যাকে আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট করেন তাকে কে সৎপথে চালিত করবে? আর তাদের জন্য সাহায্যকারীদের কেউ নেই।



Sahih International: But those who wrong follow their [own] desires without knowledge. Then who can guide one whom Allah has sent astray? And for them there are no helpers.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ২৯. বরং যালিমরা অজ্ঞতাবশত তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে, কাজেই আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন কে তাকে হিদায়াত দান করবে? আর তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।


তাফসীর:

-


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (২৯) অজ্ঞানতাবশতঃ সীমালংঘনকারীরা তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে থাকে;[1] সুতরাং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেছেন কে তাকে সৎপথে পরিচালিত করবে?[2] তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।[3]


তাফসীর:

[1] অর্থাৎ, তারা এ প্রকৃতত্ব সম্বন্ধে অবগতই নয় যে, তারা জ্ঞান থেকে বঞ্চিত ও ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত। আর এই অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতার কারণে তারা নিজেদের বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয় না এবং নিজেদের প্রবৃত্তি ও বাতিল মতের অনুসারী হয়ে থাকে।

[2] কারণ, আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াত তাদেরই ভাগ্যে জোটে যারা হিদায়াত অনুসন্ধানী ও তার আকাঙ্ক্ষী হয়। পক্ষান্তরে যারা তার সত্য অনুসন্ধিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়, তাকে ভ্রষ্টতার মাঝে ছেড়ে দেওয়া হয় ।

[3] অর্থাৎ, সেই সকল পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের কোন এমন সাহায্যকারী হবে না, যে তাদেরকে হিদায়াত দেবে অথবা তাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করবে।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ২৮-২৯ নং আয়াতের তাফসীর:



সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ এবং তিনিই সকল প্রকার ইবাদত পাওয়ার হকদার, এ চিরন্তন সত্যবাণীর কথা এখানে মহান আল্লাহ উদাহরণের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। যেমন মানুষের মধ্য হতে মানুষের চাকর বা কর্মচারী থাকে। মানুষ তাদেরকে নিজেদের ধন-সম্পদে শরীক ও সমান করতে অপছন্দ করে। তাহলে আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি মানুষ, ফেরেশতা, নাবী, নেক বান্দা, বৃক্ষ ও পাথরের মতো বস্তু কিভাবে আল্লাহ তা‘আলার সমকক্ষ ও শরীক হতে পারে? অথচ এ সকল বস্তু আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি এবং তাঁরই দাস বা গোলাম। অর্থাৎ যেমন তোমাদের বিচারেই প্রথম বিষয়টি হয় না, অনুরূপ দ্বিতীয় বিষয়টিও হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে অন্যকে শরীক করা এবং তাকেও বিপদ দূরকারী, প্রয়োজন পূরণকারী হিসেবে বিশ্বাস করা নেহাত ভ্রষ্টতা।



তারপর আল্লাহ বলছেন, তোমরা কি নিজেদের অধীনস্থ দাসকে সেরূপ ভয় কর যেরূপ স্বাধীন ব্যক্তিরা একে অপরকে ভয় করে থাকে? অর্থাৎ যেমন শরীকানার ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি থেকে খরচ করতে দ্বিতীয় শরীকের জিজ্ঞাসাবাদের আশঙ্কা করে থাক অনুরূপ তোমরা কি আপন দাসকে সে ভয় করে থাক? তা কর না। কারণ, তোমরা তাদেরকে তোমাদের ধন-সম্পদে শরীক করে নিজেদের সমমর্যাদা দিতেই চাইবে না, তবে তাদের ব্যাপারে আর ভয় কিসের?



সুতরাং মানুষ যেমন নিজের সম্পদ ও অন্যান্য বিষয়ে অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদেরকে অংশীদার বানাতে চায় না এবং সমমর্যাদা দিতে চায় না, তেমনি আল্লাহ তা‘আলাও কখনো তাঁর কোন বান্দা, ফেরেশতা ও সৃষ্টিকে নিজের শরীক করে নেননি। এভাবে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার পরেও যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে কোন মাখলূককে শরীক করে নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে তারা মূলত নিজেদের কৃপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে থাকে। এদেরকে সঠিক পথ দেখানোর কেউ নেই।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. আল্লাহ তা‘আলার কোন অংশীদার নেই, তিনি একক অদ্বিতীয়।

২. নিজের খেয়াল-খুশির অনুসরণে সঠিক পথ পাওয়া সম্ভব নয়, সঠিক পথ পেতে হলে কুরআন ও সহীহ সুন্নার অনুসরণ করতে হবে।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ২৮-২৯ নং আয়াতের তাফসীর

মক্কার কুরায়েশরা ও মুশরিকরা তাদের বুযর্গদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করতো। সেই সাথে তারা এটাও বিশ্বাস করতো যে, এরা সবাই আল্লাহর বান্দা ও তার অধীনস্থ। সুতরাং তারা হজ্ব ও উমরার সময় (আরবি) বলার সাথে সাথে বলতোঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আমি আপনার নিকট হাযির আছি, আপনার কোন শরীক বা অংশীদার নেই, কিন্তু এই শরীক যে নিজে এবং যে জিনিসের সে মালিক, সবই আপনার অধিকারভুক্ত।” অর্থাৎ শরীকরা এবং তারা যা কিছুর মালিক তার সব কিছুর মালিক আপনিই। সুতরাং তাদেরকে এমন এক দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝানো হচ্ছে যা তারা স্বয়ং নিজেদেরই মধ্যে পেয়ে থাকে এবং যেন তারা একথাটা নিয়ে ভালভাবে চিন্তা ভাবনা করে দেখতে পারে। তাদেরকে বলা হচ্ছে- যা তোমরা বলছো তাতে তোমরা নিজেরাই কি সম্মত হবে? মালিকের ধন-সম্পদের উপর তার গোলাম কি সমানভাবে মালিক হয়? আর সব সময় কি তার এ উৎকণ্ঠা থাকে যে, তার গোলামরা তার ধন-সম্পদ বন্টন করে নিয়ে যাবে? না, তা কখনোই নয়। তাই তাদেরকে বলা হচ্ছে- যখন তোমরা নিজেদের জন্যে এটা পছন্দ কর না যে, গোলামরা তোমাদের ধন-সম্পদের অংশীদার হয়ে যাক, তখন আল্লাহ তা'আলার জন্যে তা পছন্দ করতে পার কি করে? যেমন গোলাম মালিকের সমকক্ষ হতে পারে না, তেমনই আল্লাহর কোন বান্দা তার শরীক ও সমকক্ষ হতে পারে না। সত্যিই এ ধরনের কথা অতি বিস্ময়কর ও বে-ইনসাফি বটে। কি করে মানুষ আল্লাহর জন্যে এমন কিছু প্রমাণ করার জন্যে উঠে পড়ে লেগে যেতে পারে যা তারা নিজেদের জন্যে চিন্তা করতে কষ্ট পায়। নিজেদের কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে শুনলেই তারা দুঃখিত হয় এবং মুখ কালো করে

ফেলে। তারাই আবার আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতাদেরকে তাঁর কন্যা। বলে থাকে। এটা অতি অবিচারমূলক কথা নয় কি? অনুরূপভাবে নিজেদের গোলামদেরকে যারা নিজেদের শরীক মনে করতে কখনই পারে না, তারাই আবার কি করে আল্লাহর বান্দা বা দাসকে তার শরীক মনে করে? এগুলো চরম অবিচারমূলক কথা।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কাফিররা লাব্বায়েক বলতো এবং লা শারীকা লাকা বলে আল্লাহর অংশীদার উড়িয়ে দিতো। তারাই আবার পরক্ষণে তার শরীক সাব্যস্ত করে তার আনুগত্য স্বীকার করে নিতো। এ কারণেই এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। বলা হয়েছেঃ তুমি যখন নিজ গোলামকে শরীক স্বীকার করতে পার না তখন আল্লাহর বান্দাকে তার শরীক মনে কর কোন বিচারে? এ পরিষ্কার কথাটা বলার পর ইরশাদ হচ্ছে- এভাবেই আমি বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের নিকট নিদর্শনাবলী বিবৃত করি।' মুশরিকদের কাছে জ্ঞান সম্মত ও শরীয়ত সম্মত কোনই দলীল নেই। তারা যা কিছু বলছে সবই অজ্ঞতা ও প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়েই বলছে। যখন তারা হক পথ হতে সরে গেছে তখন তাদেরকে আল্লাহ ছাড়া কেউই হক পথে আনতে পারবে না। তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। কে আছে যে আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঠোট হেলাতে পারে? কে আছে যে তার উপর দয়া করতে পারে যার উপর আল্লাহ দয়া না করেন? তিনি যা চান তাই হয় এবং যা চান না তা হয় না।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।