আল কুরআন


সূরা আর-রুম (আয়াত: 13)

সূরা আর-রুম (আয়াত: 13)



হরকত ছাড়া:

ولم يكن لهم من شركائهم شفعاء وكانوا بشركائهم كافرين ﴿١٣﴾




হরকত সহ:

وَ لَمْ یَکُنْ لَّهُمْ مِّنْ شُرَکَآئِهِمْ شُفَعٰٓؤُا وَ کَانُوْا بِشُرَکَآئِهِمْ کٰفِرِیْنَ ﴿۱۳﴾




উচ্চারণ: ওয়ালাম ইয়াকুল লাহুম মিন শুরাকাইহিম শুফা‘আউওয়াকা-নূবিশুরাকাইহিম কাফিরীন।




আল বায়ান: আর তাদের শরীকরা তাদের জন্য সুপারিশকারী হবে না এবং তারা তাদের শরীকদেরকে অস্বীকার করবে।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৩. আর (আল্লাহর সাথে) শরীককৃত তাদের উপাস্যগুলো তাদের জন্য সুপারিশকারী হবে না এবং তারা তাদের শরীককৃত উপাস্যগুলোকে অস্বীকারকারী হবে।




তাইসীরুল ক্বুরআন: তারা যাদেরকে শরীক গণ্য করত তাদের মধ্যে কেউ তাদের জন্য সুপারিশকারী সাজবে না এবং তারা তাদের শরীকদেরকে অস্বীকার করবে।




আহসানুল বায়ান: (১৩) ওদের শরীক (উপাস্য)গুলি ওদের জন্য সুপারিশ করবে না[1] এবং ওরা ওদের শরীক (উপাস্য)গুলিকে অস্বীকার করবে। [2]



মুজিবুর রহমান: তাদের দেব-দেবীগুলো তাদের জন্য সুপারিশ করবেনা এবং তারাই তাদের দেব-দেবীগুলোকে অস্বীকার করবে।



ফযলুর রহমান: তাদের শরীকদের (দেবতাদের) কেউ তাদের জন্য সুপারিশ করবে না। তারাও তাদের শরীকদেরকে অস্বীকার করবে।



মুহিউদ্দিন খান: তাদের দেবতা গুলোর মধ্যে কেউ তাদের সুপারিশ করবে না। এবং তারা তাদের দেবতাকে অস্বীকার করবে।



জহুরুল হক: আর তাদের জন্য তাদের অংশী-দেবতাদের থেকে কোনো সুপারিশকারী থাকবে না, আর তাদের অংশীদেবতাদের সন্বন্ধে তারা অস্বীকারকারী হবে।



Sahih International: And there will not be for them among their [alleged] partners any intercessors, and they will [then] be disbelievers in their partners.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১৩. আর (আল্লাহর সাথে) শরীককৃত তাদের উপাস্যগুলো তাদের জন্য সুপারিশকারী হবে না এবং তারা তাদের শরীককৃত উপাস্যগুলোকে অস্বীকারকারী হবে।


তাফসীর:

-


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১৩) ওদের শরীক (উপাস্য)গুলি ওদের জন্য সুপারিশ করবে না[1] এবং ওরা ওদের শরীক (উপাস্য)গুলিকে অস্বীকার করবে। [2]


তাফসীর:

[1] শরীক বলতে ঐ সকল বাতিল উপাস্যসমূহকে বুঝানো হয়েছে, মুশরিকরা যাদের এই ভেবে ইবাদত করত যে, তারা আল্লাহর নিকট তাদের জন্য সুপারিশ করবে এবং তাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচিয়ে নেবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতে পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন যে, আল্লাহর সাথে অংশীস্থাপনকারীদের জন্য আল্লাহর নিকট কোন সুপারিশকারী হবে না।

[2] অর্থাৎ, সেখানে (কিয়ামতের দিন) ওরা তাদের উপাস্যত্বকে অস্বীকার করবে। কারণ, ওরা বুঝতে পারবে যে, (ওদের বাতিল উপাস্য) কারো কোন উপকার করতে পারবে না। (ফাতহুল ক্বাদীর) এর দ্বিতীয় অর্থ হল, ওদের উক্ত উপাস্যগুলো এই কথা অস্বীকার করবে যে, ওরা তাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করে তাদের ইবাদত করেছিল। কারণ, এই সকল উপাস্য তো ওদের ইবাদত থেকেই বেখবর ছিল।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১১-১৭ নং আয়াতের তাফসীর:



(اَللّٰهُ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهُ)



এখানে পুনরায় বস্তুবাদীদের বিশ্বাসকে খণ্ডন করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং দুনিয়ার কর্মের হিসাব-নিকাশের জন্য তিনিই পূর্বের ন্যায় সৃষ্টি পুনরাবৃত্তি করবেন। অর্থাৎ দুনিয়াতে যে আকৃতি ও অবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন সে আকৃতিতেই পুনরুত্থান করবেন, কিঞ্চিৎ পরিমাণ পরিবর্তন হবে না। সুতরাং সকলকে তাঁর দিকে ফিরে যেতে হবে এতে কোন সংশয় নেই।



(يُبْلِسُ الْمُجْرِمُوْنَ)



‘সেদিন পাপীরা হতাশ হয়ে পড়বে।’ যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন পাপীরা নিজেদের ব্যাপারে একেবারে নিরাশ হয়ে যাবে। কারণ সুপারিশ পাওয়ার আশায় যে সকল মা‘বূদের ইবাদত করত তারা কোন সুপারিশ করতে পারবে না। বরং তারা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদত করত তাদেরকেই অস্বীকার করবে। এ সম্পর্কে সূরা মারইয়াম ৮২ নং আয়াতসহ অন্যান্য সূরাতেও আলোচনা করা হয়েছে।



(يَوْمَئِذٍ يَّتَفَرَّقُوْنَ)



‘সেদিন মানুষ আলাদা আলাদা হয়ে যাবে।’ অর্থাৎ মু’মিনরা কাফিরদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে। কিভাবে আলাদা হবে তা পরের দু’আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। যারা ঈমান এনেছে ও সৎ আমল করেছে তারা জান্নাতে চলে যাবে এবং সেখানে তারা আনন্দ-উল্লাসে থাকবে। পক্ষান্তরে যারা কাফির ও মুশরিক তারা জাহান্নামে চলে যাবে এবং তারা সেখানে কঠিন শাস্তিভোগ করবে।



(فَسُبْحَانَ اللّٰهِ)



অর্থাৎ এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সংবাদ যে, তিনি সকল অপূর্ণতা, মন্দ ও সাদৃশ্য থেকে পবিত্র। তিনি সকল প্রকার অপূর্ণাঙ্গ গুণ, কোন সৃষ্টির সদৃশ হওয়া থেকে ঊর্ধ্বে। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করা ও একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করার। ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় উল্লেখ করা হয়েছে; বলা হল কোথায়ন তিনি বললেন:



(حِيْنَ تُمْسُوْنَ)



এখানে মাগরীব ও ইশার সালাতের সময় উল্লেখ করা হয়েছে।



(وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ)



এখানে ফজরের সালাতের সময় উল্লেখ করা হয়েছে। وَعَشِيًّا এখানে আসর সালাতের সময় উল্লেখ করা হয়েছে। (وَّحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ) আর এখানে যোহরের সালাতের সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।



অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(أَقِمِ الصَّلٰوةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ إِلٰي غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِ ط إِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا)



“সূর্য ঢলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত‎ সালাত কায়েম কর এবং কায়েম কর ফজরের সালাত। নিশ্চয়ই ফজরের সালাত (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়।” (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:৭৮)



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই, অন্য কেউ নয়। সুতরাং তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার যোগ্য।

২. পাপীরা কিয়ামতের মাঠে নিরাশ হয়ে যাবে, তাদের পক্ষে কোন সুপারিশকারী থাকবে না।

৩. সকলকে পুনরুত্থিত হয়ে কর্মের হিসাব দিতে হবে।

৪. কিয়ামতের মাঠে জান্নাতী ও জাহান্নামীরা পৃথক হয়ে যাবে।

৫. সুপারিশ পাওয়ার আশায় আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য যাদের ইবাদত করা হয় তারা সেদিন কোন উপকার করতে পারবে না।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১১-১৬ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, তিনি প্রথমে যেমন সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করেছেন, যেভাবে তিনি প্রথমে সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়ার পর পুনরায় সৃষ্টি করতে তিনি সক্ষম হবেন। সবকেই কিয়ামতের দিন তার সামনে হাযির করা হবে। সেখানে তিনি প্রত্যেককে তাদের কৃতকর্মের ফলাফল প্রদান করবেন। আল্লাহ ছাড়া তারা যাদের উপাসনা করেছে, তাদের কেউই সেদিন তাদের সুপারিশের জন্যে এগিয়ে আসবে না। কিয়ামতের দিন পাপী ও অপরাধীরা অত্যন্ত অপদস্থ ও একেবারে নির্বাক হয়ে যাবে। যখন তারা সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে যাবে তখন তাদের মিথ্যা ও বাতিল উপাস্যরা তাদের দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এই বাতিল উপাস্যদের অবস্থাও তাদের মতই হবে। তারা পরিষ্কারভাবে তাদের উপাসকদেরকে বলে দেবে যে, তাদের সাথে তাদের কোনই সম্পর্ক নেই। কিয়ামত সংঘটিত হবার সাথে সাথেই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে যাবে। তারপর আর তাদের মধ্যে কোন দেখা সাক্ষাৎ হবে না। সৎকর্মশীলরা ইল্লীঈনে চলে যাবে এবং পাপী ও অপরাধীরা চলে যাবে সিজ্জীনে। ওরা সবচেয়ে উঁচু স্থানে অতি উৎকৃষ্ট অবস্থায় অবস্থান করবে। আর এরা সর্বনিম্ন স্থানে অতি নিকৃষ্ট অবস্থায় থাকবে। আল্লাহ তা'আলা এখানে একথাই বলছেন যে, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তারা জান্নাতে আনন্দে থাকবে এবং যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর নিদর্শনাবলী ও পরলোকের সাক্ষাৎকার অস্বীকার করেছে, তারাই শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।