আল কুরআন


সূরা আল-বাকারা (আয়াত: 12)

সূরা আল-বাকারা (আয়াত: 12)



হরকত ছাড়া:

ألا إنهم هم المفسدون ولكن لا يشعرون ﴿١٢﴾




হরকত সহ:

اَلَاۤ اِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُوْنَ وَ لٰکِنْ لَّا یَشْعُرُوْنَ ﴿۱۲﴾




উচ্চারণ: আলাইন্নাহুম হুমুল মুফছিদূনা ওয়ালা- কিল্লা- ইয়াশ‘উরূন।




আল বায়ান: জেনে রাখ, নিশ্চয় তারা ফাসাদকারী; কিন্তু তারা বুঝে না।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১২. সাবধান! এরাই ফাসাদ সৃষ্টিকারী, তা কিন্তু তারা তা বুঝে না(১)।




তাইসীরুল ক্বুরআন: মূলতঃ তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে না।




আহসানুল বায়ান: ১২। সাবধান! এরাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, (1) কিন্তু এরা তা অনুভব করতে পারে না।



মুজিবুর রহমান: সাবধান! নিশ্চয়ই তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা বুঝেনা।



ফযলুর রহমান: জেনে রেখো, তারাই বিবাদ সৃষ্টিকারী; তবে তারা তা উপলব্ধি করে না।



মুহিউদ্দিন খান: মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।



জহুরুল হক: তারা নিজেরাই কি নিশ্চয়ই গন্ডগোল সৃষ্টিকারী নয়? কিন্তু তারা বোঝে না।



Sahih International: Unquestionably, it is they who are the corrupters, but they perceive [it] not.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১২. সাবধান! এরাই ফাসাদ সৃষ্টিকারী, তা কিন্তু তারা তা বুঝে না(১)।


তাফসীর:

১. মুনাফিকরা ফেৎনা-ফাসাদকে মীমাংসা এবং নিজেদেরকে মীমাংসাকারী মনে করে। কুরআন পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছে যে, ফাসাদ ও মীমাংসা মৌখিক দাবীর উপর নির্ভরশীল নয়। অন্যথায় কোন চোর বা ডাকাতও নিজেকে ফাসাদ সৃষ্টিকারী বলতে রাজি নয়। এ ব্যাপারটি একান্তভাবে ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টির আচরণের উপর নির্ভরশীল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আচরণ যদি ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টির কারণ হয়, তবে এসব কাজ যারা করে তাদেরকে ফাসাদ সৃষ্টিকারী মুফ্‌সিদই বলতে হবে। চাই একাজে ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা তার উদ্দেশ্য হোক বা না'ই হোক।


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: ১২। সাবধান! এরাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, (1) কিন্তু এরা তা অনুভব করতে পারে না।


তাফসীর:

(1) ফাসাদ (অশান্তি, হাঙ্গামা, সন্ত্রাস) হল সালাহ (শান্তি বা সংস্কার)-এর বিপরীত। কুফরী ও পাপাচারের কারণে যমীনে ফ্যাসাদ ও অশান্তি সৃষ্টি হয়। আর আল্লাহর আনুগত্যে নিরাপত্তা ও শান্তি পাওয়া যায়। প্রত্যেক যুগের মুনাফিক্বদের কাজই হল যে, তারা অশান্তি সৃষ্টি করে, অন্যায়ের প্রচার-প্রসার করে এবং আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে, কিন্তু তারা মনে করে বা দাবী করে যে, তারা সংস্কার, শান্তি ও উন্নতি করার চেষ্টায় লেগে আছে।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১১ ও ১২ নং আয়াতের তাফসীর:



অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের একটি দ্বিমুখী চরিত্রের বিবরণ তুলে ধরেছেন। তা হল: তারা কুফরী, পাপ কাজ সর্বোপরি আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজ করে জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করত, আর এ সব অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হলে তারা বলত, আমরা তো ফাসাদ সৃষ্টি করছি না, বরং আমরা সংশোধনকারী।



ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন: জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা হল কুফরী কাজ ও পাপাচার।



বিশিষ্ট তাবেয়ী আবুল আলিয়া (রহঃ) বলেন: মুনাফিকদের ফাসাদ হল আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য হওয়া। কেননা যে ব্যক্তি জমিনে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য হল অথবা আল্লাহদ্রোহী কাজের নির্দেশ দিল সে জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করল। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)



ফাসাদ সৃষ্টির অন্যতম দিক হচ্ছে মু’মিনদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে অপপ্রচার ছড়ানো এবং কাফিরদের সাথে সৌহার্দ বজায় রাখা। (তাফসীর সা‘দী)



ইবনু জারীর বলেন: মুনাফিকদের বিবাদ ও গণ্ডগোল সৃষ্টি করার অর্থ হচ্ছে তারা এমন সব কাজ করত যা করতে আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করেছিলেন এবং তাঁর নির্ধারিত ফরযগুলোও হেলা-খেলায় নষ্ট করত। শুধু তাই নয়, সত্য ধর্ম ইসলামের প্রতি তারা সন্দেহ পোষণ করত এবং আল্লাহ তা‘আলার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখত না। মু’মিনদের কাছে আসলে ঈমানের কথা প্রচার করত অথচ আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সম্বন্ধে তাদের অন্তর সন্দেহে পরিপূর্ণ ছিল। তারা সুযোগ পেলেই আল্লাহ তা‘আলার শত্র“দের সাহায্য সহযোগিতা করত এবং সৎ লোকেদের বিরুদ্ধাচরণ করত। আর এতসব করা সত্ত্বেও নিজেদেরকে তারা শান্তিকামী মনে করত।



আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. কুফরী ও নিফাকী করা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করার শামিল।

২. আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমেই জমিনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

৩. মিথ্যা বলা ও প্রচারণা মুনাফিকদের অন্যতম কাজ।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১১-১২ নং আয়াতের তাফসীর

হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আরও কয়েকজন সাহাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতেও মুনাফিকদের বর্ণনা রয়েছে এবং এই ধূলির ধরণীতে তাদের বিবাদ বিপর্যয় সৃষ্টি, কুফর এবং অবাধ্যতা সম্পর্কে মুসলমানদেরকে হুঁশিয়ার ও সতর্ক করা হচ্ছে। অর্থাৎ এ দুনিয়ায় আল্লাহর অবাধ্য হওয়া এবং অপরকে নাফরমান ও অবাধ্য হওয়ার আদেশ করাই হচ্ছে দুনিয়ার বুকে বিবাদ সৃষ্টি করা। আর যমীন ও আসমানের শান্তি রয়েছে আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, যখন তাদেরকে আল্লাহর অবাধ্যতা হতে বিরত থাকতে বলা হয়, তখন তারা বলে আমরা তো সঠিক সনাতন পথের উপরেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছি।'

হযরত সালমান ফারেসী (রাঃ) বলেনঃ ‘এই স্বভাবের লোক আজ পর্যন্ত আসেনি।' ভাবার্থ এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যামানায় তো এরূপ বদ। স্বভাবের লোক বিদ্যমান ছিলই কিন্তু এখন যারা আসবে তারা ওদের চেয়েও নিকৃষ্ট হবে। এটা যেন মনে না করা হয় যে, হযরত সালমান ফারেসী (রাঃ) বলেনঃ এরূপ বদ স্বভবের জঘন্য লোকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগে ছিলই না। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, ঐ মুনাফিকদের বিবাদ ও গণ্ডগোল সৃষ্টি করার অর্থ হচ্ছে তারা এসব কাজ করতে যা করতে আল্লাহ তা'আলা নিষেধ করেছিলেন এবং তাঁর ফরযগুলোও তারা হেলা করে নষ্ট করতো। শুধু তাই নয়, আল্লাহ তাআলার সত্য ধর্মের প্রতি তারা সন্দেহ পোষণ করতো এবং তার সত্যতার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখতো না। মুমিনদের কাছে আসলে তাদের ঈমানের কথা তারা প্রচার করতে অথচ তাদের অন্তর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সঃ) সম্বন্ধে সন্দেহে পরিপূর্ণ ছিল। তারা সুযোগ সুবিধা পেলেই আল্লাহর শত্রুদের সাহায্য ও সহায়তা করতো এবং তার সৎ বান্দাদের বিরুদ্ধাচরণ করতো। আর এতসব করা সত্ত্বেও নিজেদেরকে শান্তিকামী মনে করতো। কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করাকেও কুরআন মাজীদে ফাসাদ বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ কাফিররা পরস্পর একে অপরের বন্ধু, যদি তোমরা এরূপ না কর (অর্থাৎ যদি ঐ কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন কর) তবে যমীনের বুকে ভীষণ হাঙ্গামা ও গণ্ডগোল ছড়িয়ে পড়বে। (৮:৭৩) এই আয়াতটি মুসলমানও কাফিরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিন্ন করে দিল। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! তোমরা মু'মিনদেরকে ছেড়ে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তোমরা কি নিজেদের প্রতিকুলে আল্লাহর স্পষ্ট প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করে নিতে চাও’ (৪:১৪৪) অর্থাৎ তোমাদের মুক্তির সনদ কেটে যাক এই কি তোমরা চাও? অতঃপর তিনি আরও বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে এবং তোমরা তাদের জন্যে কখনই কোন সাহায্য সহায়তাকারী পাবে না।' (৪:১৪৫)

মুনাফিকদের বাহ্যিক আচরণ ভাল ছিল বলে মুসলমানদের নিকট তাদের প্রকৃত অবস্থা গোপন থেকে যায়। তারা মু'মিনগণকে মুখমিষ্টি অথচ অবাস্তব কথা দিয়ে ধোকা দেয় এবং তাদের মিথ্যা দাবী ও কাফিরদের কাছে তাদের গোপন বন্ধুত্বের ফলে মুসলমানগণকে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। সুতরাং বিবাদ ও হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী এই মুনাফিকরাই। অতএব যদি এরা কুফরের উপরেই কায়েম থাকতো তবে তাদের ভয়াবহ ষড়যন্ত্র ও গভীর চতুরতা কখনও মুসলমানদের জন্য এত ক্ষতিকর হতো না। আর যদি তারা পূর্ণ মুসলমান হয়ে যেতো এবং ভিতর ও বাহির তাদের এক হতো তবে তারা এই নশ্বর দুনিয়ার নিরাপত্তা লাভের সাথে সাথে আখেরাতের মুক্তি ও সফলতার অধিকারী হয়ে যেতো। এত ভয়াবহ পন্থা অবলম্বন করা সত্ত্বেও যখন তাদেরকে শান্তি প্রতিষ্ঠার উপদেশ দেয়া হয়, তখন তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলেঃ আমরা তো শান্তি স্থাপনকারী,আমরা কারও সাথে বিবাদ করতে চাইনে। আমরা মুমিন ও কাফির এই দুই দলের মধ্যে সন্ধির প্রস্তাব দিয়ে ঐক্য বজায় রাখতে চাই।' হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তারা বলতোঃ ‘আমরা দুই দল অর্থাৎ মুসলমান ও আহলে কিতাবের মধ্যে সন্ধি স্থাপনকারী। কিন্তু আল্লাহ পাক বলেন যে, এ শুধু তাদের মুখ। যাকে তারা সন্ধি বলছে এটাই তো প্রকৃত বিবাদ। কিন্তু তাদের বোধশক্তি নেই।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।