আল কুরআন


সূরা আল-মুমিনুন (আয়াত: 108)

সূরা আল-মুমিনুন (আয়াত: 108)



হরকত ছাড়া:

قال اخسئوا فيها ولا تكلمون ﴿١٠٨﴾




হরকত সহ:

قَالَ اخْسَـُٔوْا فِیْهَا وَ لَا تُکَلِّمُوْنِ ﴿۱۰۸﴾




উচ্চারণ: কা-লাখছাঊ ফীহা-ওয়ালা-তুকালিলমূন।




আল বায়ান: আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই থাক, আর আমার সাথে কথা বলো না।’




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১০৮. আল্লাহ বলবেন, তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলবে না।(১)




তাইসীরুল ক্বুরআন: আল্লাহ বলবেন- ‘তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক, আমার সঙ্গে কোন কথা বল না।’




আহসানুল বায়ান: (১০৮) আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না।



মুজিবুর রহমান: আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলনা।



ফযলুর রহমান: আল্লাহ বলবেন, “তোমরা এখানেই লাঞ্ছিত অবস্থায় থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না।”



মুহিউদ্দিন খান: আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না।



জহুরুল হক: তিনি বললেন -- "এর মধ্যেই তোমরা ঢোকে থাক। আর আমার সঙ্গে কথা বল না।



Sahih International: He will say, "Remain despised therein and do not speak to Me.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১০৮. আল্লাহ বলবেন, তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলবে না।(১)


তাফসীর:

(১) হাসান বসরী রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ এটা হবে জাহান্নামীদের সর্বশেষ কথা। এরপরই কথা না বলার আদেশ হয়ে যাবে। ফলে, তারা কারও সাথে বাক্যালাপ করতে পারবে না; জন্তুদের ন্যায় একজন অপরজনের দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করবে। মুহাম্মাদ ইবনে কাব রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ পবিত্র কুরআনে জাহান্নামীদের পাঁচটি আবেদন উদ্ধৃত করা হয়েছে। তন্মধ্যে চারটির জওয়াব দেয়া হয়েছে কিন্তু এ পঞ্চমটির জওয়াবে (اخْسَئُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ) বলা হয়েছে। এটাই হবে তাদের শেষ কথা। এরপর তারা কিছুই বলতে পারবে না। [বাগভী]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১০৮) আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না।


তাফসীর:

-


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১০৮-১১১ নং আয়াতের তাফসীর:



যখন কাফির-মুশরিকরা জাহান্নাম হতে বের হতে চাইবে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধমক দিয়ে বলবেন: তোমরা এখানেই অবস্থান কর আর এ ব্যাপারে আমার সাথে কোন কথাবার্তা বল না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَّخْرُجُوْا مِنَ النَّارِ وَمَا هُمْ بِخٰرِجِيْنَ مِنْهَا ز وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيْمٌ)‏



“তারা চাইবে বের হয়ে আসতে জাহান্নাম থেকে কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হতে পারবে না এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।” (সূরা মায়িদাহ ৫:৩৭)



অতঃপর তাদেরকে তাদের পাপের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে যে, যারা আমার মু’মিন বান্দা ছিল তোমরা তাদের ঈমানের কারণে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করতে ও হাসি-তামাশা করতে, যার ফলে আজ তোমাদের পরিণতি জাহান্নাম। অতএব তোমরা জাহান্নামের শাস্তি আস্বাদন কর। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(اِنَّ الَّذِیْنَ اَجْرَمُوْا کَانُوْا مِنَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا یَضْحَکُوْنَﭬﺘ وَاِذَا مَرُّوْا بِھِمْ یَتَغَامَزُوْنَﭭ)



“নিশ্চয়ই যারা অপরাধী তারা মু’মিনদরকে উপহাস করত। এবং তারা যখন তাদের নিকট দিয়ে যেতো তখন চোখ টিপে কটাক্ষ করত।” (সূরা মুতাফ্ফিফীন ৮৩:২৯-৩০)



আর এসব কারণেই তারা ঈমান নিয়ে আসতে পারেনি, বরং আরো বিভ্রান্তিতে লিপ্ত হয়েছে।



এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, মু’মিনরা ঈমানের ওপর অটল থাকতে গিয়ে যত রকম বাধা-বিপত্তি এসেছে সকল বাধা বিপত্তিতে এবং তাদেরকে নিয়ে যত ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা হয়েছে সকল ঠাট্টা-বিদ্রপ উপেক্ষা করে যে ধৈর্য ধারণ করেছে সে জন্য আমি উত্তম পুরষ্কার প্রদান করলাম।



আল্লাহ তা‘আলার বাণী:



(أَهٰٓؤُلَا۬ءِ الَّذِيْنَ أَقْسَمْتُمْ لَا يَنَالُهُمُ اللّٰهُ بِرَحْمَةٍ ط اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ وَلَآ أَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ)‏



“এরাই কি তারা, যাদের সম্বন্ধে তোমরা শপথ করে বলতে যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা এদের প্রতি কোন দয়া প্রদর্শন করবেন না। এদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না।’’ (সূরা আ‘রাফ: ৭:৪৯)



সুতরাং ঈমানের ওপর অটল থাকতে গিয়ে মু’মিনদেরকে অনেক ধৈর্য ধারণ করতে হবে। অনেকে অনেক মন্তব্য করবে, কেউ বিদ্রƒপ করবে, তাই বলে ঈমান থেকে দূরে সরে যাওয়া যাবে না।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. জাহান্নামে যাবার পর সেখান থেকে বের হবার সুযোগ থাকবে না।

২. কাউকে কোন ভাল কাজের জন্য উপহাস করা যাবে না।

৩. ধৈর্যধারণ করলে তার পুরস্কার আখিরাতে পাওয়া যাবে।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১০৮-১১১ নং আয়াতের তাফসীর:

এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে কাফিরদেরকে জবাব দেয়া হচ্ছে যে, যখন তারা জাহান্নাম হতে বের হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করবে তখন তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাকো। খবরদার! এ ব্যাপারে তোমরা আমার সাথে কথা বলো না! প্রম দয়ালু ও দাতা আল্লাহর হবে এটা উক্তি। কাফির ও মুশরিকরা সমস্ত কল্যাণ থেকে নিরাশ হয়ে যাবে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন যে, জাহান্নামীরা প্রথমে জাহান্নামের রক্ষককে ডাকতে থাকবে। ডাকতে থাকবে তারা চল্লিশ বছর পর্যন্ত। কিন্তু কোন উত্তর তারা পাবে না। চল্লিশ বছর পরে উত্তর দেয়া হবেঃ “তোমরা এখানেই পড়ে থাকো।” জাহান্নামের রক্ষকের কাছে এবং মহান আল্লাহর কাছে তাদের ডাকের কোনই গুরুত্ব থাকবে না। আবার তারা আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করবে ও বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুর্ভাগ্যের কারণে আমরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছি এবং বিভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছি। হে আল্লাহ! এখন আপনি আমাদেরকে এখান থেকে বের করে নিন এবং পুনরায় দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিন! এরপরেও যদি আমরা মন্দ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ি তবে আপনার ইচ্ছামত শাস্তি আপনি দিবেন। আমাদের আর কিছুই বলার থাকবে না। তাদের এ কথার জবাব তাদেরকে এই দুনিয়ার দ্বিগুণ বয়স পর্যন্তও দেয়া হবে না। তারপর তাদেরকে বলা হবেঃ “তোমরা আমার রহমত হতে দূর হয়ে গিয়ে এই জাহান্নামের মধ্যেই লাঞ্ছিত অবস্থায় অবস্থান করতে থাকো। আমার সাথে আর একটি কথাও বলো না।” তখন তারা সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে যাবে এবং গাধার মত বিকট শব্দ করতে থাকবে। ঐ সময় তাদের চেহারা বদলে যাবে এবং তাদের সুন্দর আকৃতি কদাকৃতিতে রূপান্তরিত হবে। এমন কি কতকগুলো, মুমিন ব্যক্তি শাফাআতের অনুমতি লাভ করে এখানে আসবে কিন্তু তাদের কাউকেও চিনতে পারবে না। জাহান্নামীরা তাদেরকে দেখে বলবেঃ “আমি অমুক।” কিন্তু তারা তাদেরকে উত্তরে বলবেঃ “তোমরা মিথ্যা বলছো, আমরা তোমাদেরকে চিনি না।” তখন ঐ জাহান্নামীরা মহান আল্লাহকে ডাকতে থাকবে। উত্তরে তাদেরকে যে কথা বলা হবে তা উপরে বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর জাহান্নামের দরযা বন্ধ করে দেয়া হবে এবং তারা সেখানেই সড়তে পচতে থাকবে।

তাদেরকে লজ্জিত করার উদ্দেশ্যে তাদের সামনে এক বড় পাপকার্য পেশ করা হবে। মহান আল্লাহ তাদেরকে বলবেনঃ আমার বান্দাদের মধ্যে এক দল এমন ছিল যারা বলতো-হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। কিন্তু হে জাহান্নামীর দল! তোমরা আমার ঐ বান্দাদেরকে নিয়ে এতো ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে যে, ওটা তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল। তোমরা তো তাদেরকে নিয়ে হাসি ঠাট্টাই করতে। যেমন অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “পাপীরা মুমিনদেরকে দেখে হাসততা ও তাদেরকে উপহাস করতো।” (৮৩:২৯)

তাই আল্লাহ তাআলা জাহান্নামীদেরকে বলবেনঃ আমি আজ আমার ঐ মমিন বান্দাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হলো সফলকাম। আমি তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে নিলাম এবং জান্নাতে প্রবিষ্ট করলাম।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।