সূরা আল-হজ্জ (আয়াত: 64)
হরকত ছাড়া:
له ما في السماوات وما في الأرض وإن الله لهو الغني الحميد ﴿٦٤﴾
হরকত সহ:
لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ لَهُوَ الْغَنِیُّ الْحَمِیْدُ ﴿۶۴﴾
উচ্চারণ: লাহূমা-ফিছছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদি ওয়া ইন্নাল্লা-হা লাহুওয়াল গানিইয়ুল হামীদ।
আল বায়ান: আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে, সব তাঁরই। আর নিশ্চয় আল্লাহই তো অভাবমুক্ত, সকল প্রশংসার অধিকারী।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৬৪. আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা তারই। আর নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তো অভাবমুক্ত, পরম প্রশংসিত।(১)
তাইসীরুল ক্বুরআন: আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর, আর আল্লাহ, তিনি যাবতীয় অভাব থেকে মুক্ত, যাবতীয় প্রশংসার অধিকারী।
আহসানুল বায়ান: (৬৪) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই।[1] আর নিশ্চয় আল্লাহ; তিনিই অভাবমুক্ত, সর্বপ্রশংসনীয়।
মুজিবুর রহমান: আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই এবং আল্লাহই তো অভাবমুক্ত, প্রশংসা।
ফযলুর রহমান: আসমান-জমিনে যা কিছু আছে, সব তাঁরই। আর নিঃসন্দেহে আল্লাহই তো অমুখাপেক্ষী, সকল প্রশংসার অধিকারী।
মুহিউদ্দিন খান: নভোমন্ডল ও ভুপৃষ্ঠে যা কিছু আছে, সব তাঁরই এবং আল্লাহই অভাবমুক্ত প্রশংসার অধিকারী।
জহুরুল হক: যা কিছু আছে মহাকাশমন্ডলীতে ও যা কিছু আছে পৃথিবীতে সে-সমস্ত তাঁরই। আর নিঃসন্দেহ আল্লাহ্, -- তিনিই তো স্বয়ংসমৃদ্ধ, পরম প্রশংসিত।
Sahih International: To Him belongs what is in the heavens and what is on the earth. And indeed, Allah is the Free of need, the Praiseworthy.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৬৪. আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা তারই। আর নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তো অভাবমুক্ত, পরম প্রশংসিত।(১)
তাফসীর:
(১) এ আয়াতের শেষেও মহান রাব্বুল আলমীনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ গুণবাচক নামের সমাহার আমরা লক্ষ্য করি। বলা হয়েছে যে, তিনি (لْغَنِيُّ الْحَمِيدُ) অর্থাৎ তিনি “অমুখাপেক্ষী” সবকিছুরই তিনি মালিক, আর সবকিছু তাঁরই মুখাপেক্ষী, তারই বান্দা। [ইবন কাসীর] আর তিনিই “প্রশংসার্হ” অৰ্থাৎ প্রশংসা ও স্তব-স্তুতি একমাত্র তাঁরই জন্য এবং কেউ প্ৰশংসা করুক বা না করুক সর্বাবস্থায় তিনি প্ৰশংসিত। [কুরতুবী]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৬৪) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই।[1] আর নিশ্চয় আল্লাহ; তিনিই অভাবমুক্ত, সর্বপ্রশংসনীয়।
তাফসীর:
[1] সৃষ্টির দিক দিয়ে, মালিকানার দিক দিয়ে এবং নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার দিক দিয়ে। কারণ সকল সৃষ্টি তাঁর মুখাপেক্ষী এবং তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। যেহেতু তিনি অভাবশূন্য অমুখাপেক্ষী। সেই সত্তা সকল পরিপূর্ণতা ও ক্ষমতার অধিকারী, সকল অবস্থায় প্রশংসার যোগ্যও একমাত্র তিনিই।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ৬৩-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর:
أَلَمْ تَرَ শব্দটি الم تعلم অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কারণ বৃষ্টি বর্ষণ চক্ষু দ্বারা দেখা গেলেও, যে আল্লাহ তা‘আলা তা বর্ষণ করেন তাঁকে জ্ঞান দিয়ে জানা যায়, চোখ দিয়ে দেখা যায় না। (আযওয়াউল বায়ান) অর্থাৎ হে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তুমি কি জান না, আল্লাহ তা‘আলা আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে জমিনে গাছ-পালা, তরু-লতা ইত্যাদি গজিয়ে সবুজ-শ্যামলে পরিণত করেন। মারা যাওয়ার পর মানুষকে আবার জীবিত হতে হবে তার এটি একটি বড় উপমা। মাটি শুকিয়ে ধু-ধু মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাওয়ার পর বৃষ্টির পানি দ্বারা যেমন জীবিত হয়, তেমনি মানুষ মরে গেলেও আবার আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে জীবিত হবে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَأَحْيَيْنَا بِه۪ بَلْدَةً مَّيْتًا ط كَذٰلِكَ الْخُرُوْجُ)
“আমি বৃষ্টি দ্বারা জীবিত করি মৃত জমিনকে; এভাবেই পুনরুত্থান ঘটবে।” (সূরা ক্বাফ ৫০:১১) এরূপ অসংখ্য আয়াত রয়েছে যে, মানুষকে মৃত্যুর পর জীবিত করা হবে।
لَطِيْفٌ অর্থ সূক্ষ্মদর্শী, যিনি তার চোখ দ্বারা ছোট-বড় সব কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খাভাবে দেখতে পান। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন, সব কিছু দেখতে পান। অথবা এর অর্থ অনুগ্রহপরায়ণ। অর্থাৎ তিনি বান্দাদের প্রতি খুব অনুগ্রহ করেন, দয়া করেন।
(لَه۫ مَا فِي السَّمٰوٰتِ)
অর্থাৎ সৃষ্টির দিক থেকে, মালিকানার দিক থেকে এবং নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার দিক থেকে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই মালিক। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। অনেকে মনে করতে পারে যে, আল্লাহ তা‘আলা এসব সৃষ্টি করেছেন, তিনি এসব সৃষ্টির প্রতি মুখাপেক্ষী, আমাদের ইবাদতের মুখাপেক্ষী। না, আল্লাহ তা‘আলা কোন কিছুর মুখাপেক্ষী নন। তিনি সব কিছু থেকে অমুখাপেক্ষী, বরং সকল মাখলূক তাঁরই মুখাপেক্ষী। যেমন এসম্পর্কে সহীহ মুসলিমের ২৫৭৭ নং হাদীসে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
(بِإِذْنِه۪....سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِي الْأَرْضِ)
‘আল্লাহ তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন পৃথিবীতে যা কিছু আছে তৎসমুদয়কে এবং তাঁর নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহকে’ যেমন জীবজন্তু, নদী-নালা, গাছ-পালা ও অন্যান্য অসংখ্য জিনিস যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়, সবই সৃষ্টি করে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করে দিয়েছেন। এমনকি সমুদ্রে যে জাহাজ হাজার হাজার টন ওজনের জিনিস নিয়ে চলাচল করে তাও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত। যেখানে মানুষ একটি পাথরের টুকরা পানির ওপর ভাসমান রাখতে পারে না সেখানে হাজার হাজার টন মালামাল নিয়ে জাহাজ চলাচল করে, নিশ্চয়ই এটা মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ ও কল্যাণ দান।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاٰيَةٌ لَّهُمْ أَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّيَّتَهُمْ فِي الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ - وَخَلَقْنَا لَهُمْ مِّنْ مِّثْلِه۪ مَا يَرْكَبُوْنَ - وَإِنْ نَّشَأْ نُغْرِقْهُمْ فَلَا صَرِيْخَ لَهُمْ وَلَا هُمْ يُنْقَذُوْنَ)
“আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন এই যে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিকে বোঝাই নৌকায় আরোহণ করিয়েছি। এবং তাদের জন্য আমি এর অনুরূপ যানবাহন সৃষ্টি করেছি যাতে তারা আরোহণ করে। আর আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে ডুবিয়ে দিতে পারি, তখন কেউ তাদের আর্তনাদে সাড়া দেবে না এবং তাদেরকে উদ্ধারও করা হবে না।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৪১-৪৩) এ সম্পর্কে সূরা নাহলের প্রথম দিকে আলোচনা করা হয়েছে।
(وَيُمْسِكُ السَّمَا۬ءَ أَنْ تَقَعَ....)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা চাইলে আকাশ পৃথিবীর ওপর ভেঙ্গে পড়বে। ফলে পৃথিবীর সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রতি দয়ালু ও ক্ষমাশীল বলে আকাশকে নিষেধ করেছেন যেন তা পড়ে না যায়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ اللّٰهَ يُمْسِكُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ أَنْ تَزُوْلَا ৫ج وَلَئِنْ زَالَتَآ إِنْ أَمْسَكَهُمَا مِنْ أَحَدٍ مِّنْۭ بَعْدِه۫ ط إِنَّه۫ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ আসমান ও জমিনকে স্থির রাখেন, যাতে তা টলে না যায়। যদি এরা টলে যায় তবে তিনি ছাড়া কে এদেরকে স্থির রাখবে? তিনি অতিশয় সহনশীল, পরম ক্ষমাশীল।” (সূরা ফাতির ৩৫:৪১) তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় আকাশ ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে।
এ সম্পর্কে সূরা সাবার ৯ নং আয়াত এবং সূরা ফাতিরের ৪১ নং আয়াতে আলোচনা করা হবে ইনশা-আল্লাহ তা‘আলা।
(وَهُوَ الَّذِيْ أَحْيَاكُمْ....)
এ সম্পর্কে সূরা বাক্বারার ২৮ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি প্রত্যেক জাতির জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছি ইবাদত পদ্ধতি, যা তারা অনুসরণ করে থাকে। যার কিছু বিষয়ে একে অপরের হতে আলাদা। যেমন তাওরাত মূসা (عليه السلام)-এর উম্মাতের জন্য, ইঞ্জিল ঈসা (عليه السلام)-এর উম্মাতের জন্য এবং কুরআন হল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মাতের জন্য শরীয়ত ও জীবন ব্যবস্থা। সুতরাং হে নাবী! এ কাফিররা যতই তর্ক-বিতর্ক করুক না কেন, তুমি ওদের তর্ক-বিবাদের কোনই পরোয়া করবে না। বরং তাদেরকে নিজ প্রতিপালকের দিকে আহ্বান করতে থাক। কারণ ‘সিরাতে মুস্তাকীম’-এ কেবল তুমিই প্রতিষ্ঠিত আছ, আর বাকী পূর্বের সমস্ত শরীয়ত এখন রহিত। এরপরও যদি তারা বাক-বিতণ্ডা করে তাহলে বলে দাও, তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে আল্লাহ তা‘আলা অবহিত আছেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার নানাবিধ নিদর্শন ও ক্ষমতার কথা জানলাম।
২. প্রত্যেক জাতির জন্য আল্লাহ তা‘আলা ইবাদত পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
৩. সত্যের ব্যাপারে বাক-বিতণ্ডা করা মূর্খতা ব্যতীত আর কিছুই নয়।
৪. পূর্বের নাবীদের সমস্ত ধর্ম রহিত হয়ে গেছে।
৫. আল্লাহ তা‘আলা বান্দার প্রতি অতিশয় দয়ালু ও ক্ষমাশীল।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৬৩-৬৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা নিজের ব্যাপক ক্ষমতা ও বিরাট শক্তির বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি শুষ্ক, অনাবাদ ও মৃত যমীনের উপর বাতাসের মাধ্যমে মেঘমালা সৃষ্টি করে বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন। ফলে যমীন সবুজ শ্যামল হয়ে ওঠে। দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এখানে (আরবী) (পিছনে পিছনে আসা) এর জন্যে এসেছে। প্রত্যেক জিনিসের তাকীব ওরই অনুপাতে হয়ে থাকে। শুক্র রক্তপিণ্ড হওয়া, রক্ত মাংসপিণ্ড হওয়া যেখানে বর্ণনা দেয়া হয়েছে সেখানেও এসেছে। অথচ এই দুই অবস্থার মধ্যে চল্লিশ দিনের ব্যবধান থাকে। আবার এটাও উল্লিখিত আছে যে, হিজাজের কতক মাটি এমনও আছে যার উপর বৃষ্টিপাত হওয়া মাত্রই ওটা রক্তিম ও সবুজ শ্যমল আকার ধারণ করে। সুতরাং এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। এক একটি দানা তাঁর গোচরে রয়েছে। যমীনের প্রান্তে এবং ভিতরে যা কিছু আছে সবই তাঁর জানা আছে। বীজের উপর পানি পতিত হয়, তখন তা হতে অংকুর বের হয়। যেমন হযরত লুকমান (আঃ) তার ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেনঃ “হে বৎস! কোন কিছু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা যদি থাকে শিলাগর্ভে অথবা আকাশে কিংবা মৃত্তিকার নীচে, আল্লাহ তাও হাজির করবেন; আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, খবর রাখেন সব বিষয়ের।”
আর এক জায়গায় বলেনঃ “(নিবৃত্ত করেছে এই জন্যে যে,) তারা যেন সিজুদা না করে আল্লাহ্কে যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর লুক্কায়িত বস্তুকে প্রকাশ করেন। আর একটি আয়াতে আছেঃ “প্রত্যেকটি পাতা যা ঝরে পড়ে, প্রত্যেকটি দানা যা যমীনের অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে এবং প্রত্যেক সিক্ত ও শুষ্ক জিনিসের খবর আল্লাহ জানেন, সবই প্রকাশ্য কিতাবের মধ্যে রয়েছে। অন্য একটি আয়াতে আছেঃ “আসমান ও যমীনের কোন অনুপরিমাণ জিনিসও আল্লাহর কাছে গোপন নেই এবং কোন ক্ষুদ্র ও বৃহৎ জিনিস এমন নেই যা প্রকাশ্য কিতাবে বিদ্যমান নেই।”
উমাইয়া ইবনু আবুস সালাত অথব্য যায়েদ ইবনু আমর ইবনু নুফায়েলের কাসীদায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে আমার নবীদ্বয়!) তোমরা তাকে (ফিরাউনকে) বললাঃ মাটির মধ্য হতে দানা বের করেন কে? যার ফলে গাছ হয়ে গিয়ে আন্দোলিত হতে থাকে? এবং ওর মাথায় শিষ বের করেন কে? জ্ঞানীর জন্যে তো এতে মহাশক্তিশালী আল্লাহর মহাশক্তির নিদর্শনাবলী রয়েছে।”
সমস্ত বিশ্বজগতের একচ্ছত্র অধিপতি তিনিই। তিনি সবকিছু হতে বেপরোয়া ও অভাবমুক্ত। সবাই তার সামনে ফকীর, সবাই তার মুখাপেক্ষী। সমস্ত মানুষ আল্লাহর গোলাম।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন পৃথিবীতে যা কিছু আছে তৎসমুদয়কে? সমস্ত প্রাণী, উদ্ভিদ,বাগ-বাগীচা, ক্ষেত খামার তোমাদেরই উপকারার্থে সৃষ্টি করেছেন। যমীন ও আসমানের সমস্ত জিনিস তিনি তোমাদের সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। তাঁর নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযান সমূহকে তিনি তোমাদের কাজে লাগিয়ে রেখেছেন। এই নৌযান গুলি তোমাদেরকে এদিক হতে ওদিকে নিয়ে যায়। এর মাধ্যমে তোমাদের মাল ও আসবাবপত্র এক স্থান হতে অন্য স্থানে পৌঁছে যায়। পানি ফেড়ে, তরঙ্গ কেটে আল্লাহর নির্দেশক্রমে বাতাসের সাথে নৌকাগুলি তোমাদের উপকারার্থে চলতে রয়েছে। এখানকার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি ওখান থেকে এখানে এবং ওখানকার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি এখান হতে ওখানে সদা পৌঁছাতে রয়েছে।
তিনিই আকাশকে স্থির রেখেছেন। ওটা যমীনের উপর পড়ে যাচ্ছে না। তিনি ইচ্ছা করলে এখনই আসমান যমীনের উপর পড়ে যাবে এবং যমীনের অধিবাসী সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে।
নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু। মানুষ পাপে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি তাদেরকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করছেন। এটা তার পরম করুণার পরিচায়ক, যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক লোকদের যুলুম সত্ত্বেও তাদের প্রতি ক্ষমাশীল এবং নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক কঠিন শাস্তিদাতাও বটে। (১৩:৬)
তিনিই তো তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন এবং তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পুনরায় তিনি তোমাদেরকে জীবন দান করবেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা কিরূপে আল্লাহকে অস্বীকার কর? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে জীবন্ত করেছেন, আবার তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় জীবন্ত করবেন, পরিণামে তার দিকেই তোমরা ফিরে যাবে।” (২:২৮) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “বলঃ আল্লাহ তোমাদেরকে জীবিত রাখেন, অতঃপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনিই তোমাদেরকে একত্রিত করবেন, যে দিন সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই।` (৪৫:২৬) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ “তারা বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি দুইবার আমাদের মৃত্যু ঘটিয়েছেন এবং দুইবার জীবন্ত করেছেন।` কালামের ভাবার্থ হলোঃ এইরূপ আল্লাহর সাথে তোমরা অন্যদেরকে শরীক করছো কেন? সৃষ্টিকর্তা তো একমাত্র তিনিই। আহার্য দাতাও তিনি ছাড়া অন্য কেউ নয়। সমস্ত আধিপত্য তাঁরই। তোমরা তো কিছুই ছিল না। তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আবার তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। মৃত্যুর পরে পুনরায় তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করবেন, অর্থাৎ কিয়ামতের দিন। মানুষ অতিমাত্রায় অকৃতজ্ঞ বটে!
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।