আল কুরআন


সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 85)

সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 85)



হরকত ছাড়া:

وإسماعيل وإدريس وذا الكفل كل من الصابرين ﴿٨٥﴾




হরকত সহ:

وَ اِسْمٰعِیْلَ وَ اِدْرِیْسَ وَ ذَاالْکِفْلِ ؕ کُلٌّ مِّنَ الصّٰبِرِیْنَ ﴿ۚۖ۸۵﴾




উচ্চারণ: ওয়া ইছমা-‘ঈলা ওয়া ইদরীছা ওয়া যাল কিফলি কুল্লুম মিনাসসা-বিরীন।




আল বায়ান: আর স্মরণ কর ইসমাঈল, ইদরীস ও যুল্ কিফল এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ধৈর্যশীল ছিল।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৮৫. এবং স্মরণ করুন ইসমাঈল, ইদরীসও যুলকিফলকে, তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন ধৈর্যশীল(১);




তাইসীরুল ক্বুরআন: স্মরণ কর ইসমা‘ঈল, ইদরীস ও জুল-কিফল এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল।




আহসানুল বায়ান: (৮৫) আর (স্মরণ কর) ইসমাঈল, ইদরীস ও যুলকিফল[1] এর কথা; তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল।



মুজিবুর রহমান: আর স্মরণ কর ইসমাঈল, ইদরীস এবং যুলকিফল- এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল।



ফযলুর রহমান: ইসমাঈল, ইদরীস ও যুল-কিফ্‌লকেও স্মরণ কর। (এরা) প্রত্যেকেই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত (ছিল)।



মুহিউদ্দিন খান: এবং ইসমাঈল, ই’দ্রীস ও যুলকিফলের কথা স্মরণ করুন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সবরকারী।



জহুরুল হক: আর ইসমাইল ও ইদরীস ও যুল-কিফল, -- সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ীদের মধ্যেকার।



Sahih International: And [mention] Ishmael and Idrees and Dhul-Kifl; all were of the patient.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৮৫. এবং স্মরণ করুন ইসমাঈল, ইদরীসও যুলকিফলকে, তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন ধৈর্যশীল(১);


তাফসীর:

(১) আলোচ্য আয়াতদ্বয়ে তিন জন মনীষীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ইসমাঈল ও ইদরীস যে নবী ও রাসূল ছিলেন, তা কুরআনের অনেক আয়াত দ্বারা প্রমাণিত আছে। কুরআনে তাদের কথা স্থানে স্থানে আলোচনাও করা হয়েছে। তৃতীয় জন হচ্ছেন। যুলকিফল। ইবনে কাসীর বলেনঃ তার নাম দু'জন নবীর সাথে শামিল করে উল্লেখ করা থেকে বাহ্যতঃ বোঝা যায় যে, তিনিও আল্লাহর নবী ছিলেন। কিন্তু কোন কোন বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, তিনি নবীদের কাতারভুক্ত ছিলেন না; বরং একজন সৎকর্মপরায়ন ব্যক্তি ছিলেন। তবে সঠিক মত হলো এই যে, তিনি নবী ও রাসূলই ছিলেন। তার সম্পর্কে খুব বেশী তথ্য জানা যায় না। ইসরাঈলী বৰ্ণনায় যে সমস্ত ঘটনা এসেছে সেগুলোর কোনটিই গ্রহণযোগ্য নয়। [এ ব্যাপারে ইবন কাসীর আরও তথ্য বর্ণনা করেছেন।]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৮৫) আর (স্মরণ কর) ইসমাঈল, ইদরীস ও যুলকিফল[1] এর কথা; তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল।


তাফসীর:

[1] যুলকিফল সম্পর্কে মতভেদ আছে যে, তিনি নবী ছিলেন কি না? কেউ কেউ বলেন, তিনি নবী ছিলেন। আবার কেউ বলেন, তিনি ওলী ছিলেন। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এ সম্পর্কে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে বিরত থেকেছেন। ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) বলেছেন যে, নবীদের সঙ্গে তাঁর নাম উল্লেখ হওয়াই তাঁর নবী হওয়ার কথা স্পষ্ট করে। আর আল্লাহই ভালো জানেন।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৮৫-৮৬ নং আয়াতের তাফসীর:



অত্র আয়াতদ্বয়ে তিনজন নাবীর কথা বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাঁরা সকলেই ধৈর্যশীল ও সৎ কর্মপরায়ণ ছিলেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে স্বীয় রহমতে আচ্ছন্ন করে নিয়েছিলেন।



প্রথমত:



ইসমাঈল (عليه السلام)-এর কথা বলা হয়েছে, তাঁর সম্পর্কে কিছু ঘটনা সূরা মারইয়ামের ৫৪-৫৫ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ইবরাহীম (عليه السلام)-এর প্রথম সন্তান, যাঁকে যাবীহুল্লাহ বলা হয়। আর তিনি তাঁর পিতার সাথে কাবাগৃহ নির্মাণ করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:



(وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيْلُ)



“আর যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কা‘বার ভিত্তি উঁচু করছিলেন।” (সূরা বাক্বারা ২:১২৭)



তিনি একজন ধৈর্যশীল বান্দাও ছিলেন। তাঁর পিতা যখন স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি তাকে যবাই করছেন তখন এ বিষয়ে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাকে আপনার প্রতিপালক যে নির্দেশ দিয়েছেন তা বাস্তবায়ণ করুন আর এবিষয়ে আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্তই পাবেন। তার উক্তি:



(قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِيْ إِنْ شَا۬ءَ اللّٰهُ مِنَ الصَّابِرِيْنَ)



“সে বলল: হে আমার বাবা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা পূর্ণ করুন। ইন্শাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।” (সূরা সফফাত: ৩৭:১০২)



দ্বিতীয়ত:



ইদরীস (عليه السلام), তাঁর সম্পর্কে সূরা মারইয়ামের ৫৬-৫৭ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। তিনিও একজন ধৈর্যশীল বান্দা ছিলেন।



তৃতীয়ত:



যুল-কিফল (عليه السلام), অত্র সূরাসহ সূরা স্ব-দ-এর ৪৮ নং আয়াতে তাঁর নাম এসেছে। তিনি আল-ইয়াসা‘ (عليه السلام)-এর পরে নাবী হন এবং ফিলিস্তিনে বানী ইসরাঈলের মাঝে দাওয়াতী কাজ করেন। তিনি নাবী হওয়া সম্পর্কে কেউ কেউ ভিন্ন মত পোষণ করেন। এ ব্যাপারে সঠিক কথা হল; যেহেতু তাঁর নাম ইসমাঈল, ইদরীস, আল ইয়াসা‘ প্রমুখ নাবীদের সাথে বর্ণনা করা হয়েছে সেহেতু তিনি যে নাবী ছিলেন তা অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে। নাবী না হওয়ার ব্যাপারে বিশুদ্ধ কোন প্রমাণ নেই। তাঁকে ধরেই বলা হয়, কুরআনে পঁচিশ জন নাবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে রহমতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত ও শ্রেষ্ঠ বান্দাদের একজন বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:



(وَاذْكُرْ إِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِ وَكُلٌّ مِّنَ الْأَخْيَارِ)



“স্মরণ কর! ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘আ ও যুল-কিফলের কথা, তারাও প্রত্যেকেই শ্রেষ্ঠ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা স্ব-দ ৩৮:৪৮)



সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত নাবীদের দৃঢ় ঈমান দেখে শিক্ষা নিয়ে সর্বদা সৎ আমল করা, মানুষদেরকে সত্যের দিকে দাওয়াত দেয়া এবং বিপদে ধৈর্য ধারণ করা।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. ইসমাঈল (عليه السلام) ইবরাহীম (عليه السلام)-এর প্রথম সন্তান, তাঁকেই যবাহ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

২. যুল-কিফল (عليه السلام) একজন নাবী, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে নবুওয়াত দিয়েছেন।

৩. সৎ বান্দাদেরকে সর্বদা আল্লাহ তা‘আলা রহম করে থাকেন।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৮৫-৮৬ নং আয়াতের তাফসীর:

হযরত ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন হযরত ইবরাহীম খলীলের (আঃ) পুত্র। সূরায়ে মারইয়ামে তাঁর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইদরীসের (আঃ) বর্ণনা গত হয়েছে। যুল কিফলকে বাহ্যতঃ নবীরূপেই জানা যাচ্ছে। কেন না, নবীদের বর্ণনায় তার নাম এসেছে। কিন্তু লোকেরা বলেছেন যে, তিনি নবী ছিলেন না, বরং একজন সৎ লোক ছিলেন। তিনি তাঁর যুগের বাদশাহ ও ন্যায় বিচারক। ইমাম ইবনু জারীর (রাঃ) এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেন। নাই। সুতরাং এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

মুজাহিদ (রাঃ) বলেন যে, তিনি একজন সৎ ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তার যুগের নবীদের চুক্তি ও অঙ্গীকার করেছিলেন এবং ওর উপর প্রতিষ্ঠি ত ছিলেন। কওমের মধ্যে তিনি ন্যায় বিচার করতেন। বর্ণিত আছে যে, যখন হযরত ইয়াসাআ' (আঃ) খুবই বৃদ্ধ হয়ে যান তখন তিনি নিজের জীবদ্দশাতেই তার একজন প্রতিনিধি নির্বাচন করার ইচ্ছা করেন। তিনি তার আমল দেখতে চান। সূতরাং তিনি জনগণকে একত্রিত করেন এবং বলেনঃ “তিনটি প্রস্তাব যে ব্যক্তি সমর্থণ করবে তাকে আমি খিলাফত বা প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবো। প্রস্তাব তিনটি এই যে, সে সারাদিন রোযা রাখবে, সারা রাত দাড়িয়ে ইবাদত করবে এবং কখনো রাগান্বিত হবে না।' তার একথা শুনে একটি লোক ছাড়া আর কেউই পঁড়ালো না। যে লোকটি দাঁড়ালো তাঁকে মানুষ হাল্কা মর্যাদার লোক মনে করতো। তিনি দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ “অর্থাৎ তুমি দিনে রোযা রাখবে, রাত্রে তাহাদের নামায পড়বে এবং কারো উপর রাগ করবে নাঃ` লোকটি উত্তর করলেনঃ “হ” হযরত ইয়াসা'আ বললেনঃ “আচ্ছা, আজকে তোমরা চলে যাও, কালকে আবার একত্রিত। হও।” পরদিনও তিনি মজলিসে সাধারণভাবে প্রশ্ন করলেন। কিন্তু ঐ লোকটি ছাড়া আর কেউই দাঁড়ালো না। সুতরাং তিনি তাকেই খলীফা বা প্রতিনিধি নির্বাচন করলেন। এখন শয়তান ছোট ছোট শয়তানদেরকে এই সম্রান্ত ব্যক্তিকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে পাঠাতে শুরু করলো। কিন্তু তারা তাকে কোন ক্রমেই বিভ্রান্ত করতে পারলো না। তখন ইবলীস নিজেই চললো। ঐ বুযুর্গ লোকটি দুপুরে বিশ্রামের জন্যে সবে মাত্র শুয়েছেন এমন সময় ইবলীস শয়তান তার দরজার কড়া নাড়তে শুরু করে। লোকটি জিজ্ঞেস করলেনঃ “তুমি কে?” ইবলীস বলতে শুরু করলোঃ “আমি একজন অত্যাচারিত ব্যক্তি। আমার কওমের একটি লোক আমার উপর জুলুম করেছে। সে আমার সাথে এটা করেছে, ওটা করেছে। এভাবে সে দীর্ঘ বর্ণনা দিতে থাকে। সে তার বর্ণনা শেষ করতেই চায় না। তাঁর ঘুমাবার সময়টুকু তার সাথেই কেটে যায়। হযরত যুলকিফল (অর্থাৎ ঐ সম্রান্ত লোকটি) দিন রাত্রির মধ্যে শুধু এই সময়টুকুতে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য ঘুমাতেন। তিনি তাকে বললেনঃ “তুমি সন্ধ্যায় এসো, তোমার প্রতি ন্যায় বিচার করা হবে। অতঃপর সন্ধ্যায় তিনি বিচার করতে বসলেন তখন চতুর্দিকে দৃষ্টিপাত করে ইবলীসকে খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু কোন দিকেই তাকে দেখা গেল না। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেই বাইরে গিয়ে তাকে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু কোথায়ও তাকে পেলেন না। পর দিন সকালেও সে এলো না। আবার যেমনই তিনি দুপুরে সামান্য বিশ্রামের জন্যে শুয়েছেন তখনই সে দরজায় করাঘাত করতে শুরু করেছে। তিনি দরজা খুলে দেন এবং তাকে বলেনঃ “আমি তো তোমাকে সন্ধ্যায় ডেকে ছিলাম এবং তোমার জন্য অপেক্ষমান ছিলাম, তখন তুমি আস নাই কেন?` সে উত্তরে বলেঃ “ জনাব! কি আর বলবো? আমি আপনার কাছে আসার ইচ্ছা করেছি এমন সময় আমার হক নষ্টকারী লোকটি আমাকে অনুরোধ করে বলেঃ “তুমি যেয়ো না, আমি তোমার প্রাপ্য তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি।”কাজেই আমি এলাম না। কিন্তু এখন আবার সে অস্বীকার করেছে।” এভাবে আজকেও বহু লম্বা চওড়া বর্ণনা শুরু করে দেয়। সুতরাং আজও তার ঘুম নষ্ট হয়ে যায়। এবারও তিনি তাকে সন্ধ্যায় আসতে বলেন। সন্ধ্যায় আবার তিনি তার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু সে আসলো না তৃতীয় দিন তিনি একজন দ্বাররক্ষী নিযুক্ত করে তাকে বলে দিলেনঃ “দেখো, আজ যেন কেউই আমার দরজায় করাঘাত না করে। উপুর্যপরি কয়েকদিন কাহিল হয়ে পড়েছি। একথা বলে তিনি সবে মাত্র শুয়েছেন এমন সময় আবার ঐ বিতাড়িত শয়তান এসে পড়ে। দ্বাররক্ষী তাকে বাধা দেয়। কিন্তু সে এক তাকের মধ্য দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে এবং ভিতর থেকে দরজায় করাঘাত করতে শুরু করে দেয়। তিনি তখন উঠে দ্বার রক্ষীকে বলেনঃ “আমি তোমাকে বলে দেয়ার পরেও কেন তুমি একে দরজায় আসতে দিলে?` দ্বার রক্ষী উত্তরে বললোঃ কেউ তো যায় নাই?” এবার তিনি ভালরূপে দেখে শুনে। বুঝতে পারলেন যে, দরজা তো বন্ধই রয়েছে, আবার ভিতরে লোক প্রবেশ করলো কিরূপে? কাজেই এটা শয়তান ছাড়া কেউই নয়। ঐ সময় শয়তান তাকে সম্বোধন করে বললোঃ “হে আল্লাহর ওয়ালী! আমি আপনার নিকট পরাজিত হয়েছি। না আপনি রাত্রির ইবাদত পরিত্যাগ করেছেন, না এরূপ পরিস্থিতিতে আপনার দ্বার রক্ষী ভৃত্যের উপর রাগান্বিত হয়েছেন।” তখন আল্লাহ তাআলা তার নাম রাখলেন যুলকিফল। কেননা, যে বিষয়ের তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন তা বাস্তবে দেখিয়ে দিয়েছেন। (এটা ইবনু আবি হাতিম (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও কিছু তাফসীরের পর এই ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে যে, বানী ইসরাঈলের মধ্যে একজন কাযী (বিচারক) ছিলেন। যিনি তাঁর মৃত্যুর সময় বলেছিলেনঃ “আমার পরে আমার এ পদের দায়িত্ব কে গ্রহণ করবে?” উত্তরে এই লোকটি (যুলকি) বলেছিলেনঃ “আমি গ্রহণ করবো।” তখন তার নাম যুলকিফল হয়ে যায়। এতে আছে যে, তাঁর ঘুমাবার সময় হলে প্রহরীরা শয়তানকে আসতে বাধা দেয় সে এতো গোলমান শুরু করে দেয় যে, তিনি জেগে ওঠেন। দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় দিনও এরূপই করে। তখন তিনি তার সাথে যেতে উদ্যত হয়ে বলেনঃ “আমি তোমার সাথে গিয়ে তোমার হক আদায় করে দিচ্ছি।” কিন্তু রাস্তায় গিয়ে সে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

হযরত আশআরী (রাঃ) মিম্বরের উপর ভাষণ দেয়া অবস্থায় বলেনঃ “যুকিফুল নবী ছিলেন না। তিনি ছিলেন বানী ইসরাঈলের মধ্যে একজন সৎ লোক, যিনি প্রত্যহ একশ (রাকাত নামায পড়তেন। তিনি এই ইবাদতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলে তাঁকে যুলকিফল বলা হয়েছে। একটি মুনকাতা (যে হাদীসের সনদের মধ্য হতে মাঝে মাঝে রাবী বা বর্ণনাকারী ছুটে গেছেন। ঐ হাদীসকে মুনকাতা হাদীস বলে) হাদীসে হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতেও এটা বর্ণিত আছে। মুসনাদে আহমাদে একটি গারীব বা দুর্বল হাদীস বর্ণিত আছে। যাতে কিল এর একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তাকে যুলকিফুল বলা হয়। নাই। সম্ভবতঃ তিনি এই ফুলকিফুল নন। বরং অন্য কোন লোক হবেন।

হাদীসের ঘটনাটি এই যে, কিক্ল নামক একজন লোক ছিল, যে কোন পাপকার্য হতেই বিরত থাকতো না। একদা সে একটি স্ত্রীলোককে ষাটটি দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিয়ে ব্যভিচারের জন্যে উৎসাহিত করে। যখন সে নিজের কামনা চরিতার্থ করার জন্যে প্রস্তুত হয়ে যায় তখন ঐ স্ত্রীলোকটি ক্রন্দন করতে ও কাপতে শুরু করে দেয়। সে তখন তাকে বলেঃ “আমি তোমার প্রতি কোন বল প্রয়োগ তো করি নাই তথাপি তোমার ক্রন্দনের ও কম্পনের কারণ কি? স্ত্রীলোকটি উত্তরে বলেঃ `আজ পর্যন্ত আমি আল্লাহ তাআলার কোন নাফরমানী করি নাই। কিন্তু আজ আমার অভাব ও দারিদ্র আমাকে এ কুকাজে বাধ্য করছে। (তাই, আমি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করছি ও কম্পিত হচ্ছি)!` তার একথা শুনে কি তাকে বলেঃ “তুমি মাত্র একটি পাপ কার্যের কারণে এতো উদ্বেগ প্রকাশ করছো! অথচ এর পূর্বে তো তুমি এরূপ কোন কাজ কর নাই। তৎক্ষণাৎ সে তাকে ছেড়ে দেয় এবং তার থেকে পৃথক হয়ে যায়। অতঃপর তাকে বলেঃ “যাও, এই দীনারগুলি আমি তোমাকে দান করে দিলাম। আল্লাহর শপথ! আজ হতে আর কোন দিন আমি আল্লাহ তাআলার কোন নাফরমানী করবে না। আল্লাহর কি মহিমা যে, ঐ রাত্রেই তার মৃত্যু হয়ে যায়। মানুষ সকালে এসে দেখে যে, তার দরজার উপর কুদরতী হরূফে লিখিত রয়েছেঃ “আল্লাহ কিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।”





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।