আল কুরআন


সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 46)

সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 46)



হরকত ছাড়া:

ولئن مستهم نفحة من عذاب ربك ليقولن ياويلنا إنا كنا ظالمين ﴿٤٦﴾




হরকত সহ:

وَ لَئِنْ مَّسَّتْهُمْ نَفْحَۃٌ مِّنْ عَذَابِ رَبِّکَ لَیَقُوْلُنَّ یٰوَیْلَنَاۤ اِنَّا کُنَّا ظٰلِمِیْنَ ﴿۴۶﴾




উচ্চারণ: ওয়ালাইম মাছছাতহুম নাফহাতুমমিন‘আযা-বি রাব্বিকা লাইয়াকূলুন্না ইয়াওয়াইলানাইন্না-কুন্না-জা-লিমীন।




আল বায়ান: আর তোমার রবের আযাবের সামান্য কিছুও যদি তাদেরকে স্পর্শ করে, তবে তারা অবশ্যই বলে উঠবে-‘হায়, দুর্ভোগ আমাদের! আমরাতো অবশ্যই যালিম ছিলাম’।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৪৬. আর আপনার রব-এর শাস্তির কিছুমাত্রও তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা অবশ্যই বলে উঠবে, হায়, দুর্ভোগ আমাদের, আমরা তো ছিলাম যালোম!




তাইসীরুল ক্বুরআন: তোমার প্রতিপালকের গযবের একটা নিঃশ্বাস যদি তাদের উপর পতিত হয় তবে তারা অবশ্য অবশ্যই বলে উঠবে, ‘হায় আমাদের দুর্ভাগ্য! আমরাই তো ছিলাম অপরাধী।’




আহসানুল বায়ান: (৪৬) তোমার প্রতিপালকের শাস্তির কিছু মাত্রও তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা নিশ্চয় বলে উঠবে, ‘হায় দুর্ভোগ আমাদের! নিশ্চয় আমরা সীমালংঘনকারী ছিলাম।’ [1]



মুজিবুর রহমান: তোমার রবের শাস্তির কিছুমাত্রও তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা নিশ্চয়ই বলে উঠবেঃ হায়! দুর্ভোগ আমাদের, আমরাতো ছিলাম যালিম!



ফযলুর রহমান: আর যদি তোমার প্রভুর শাস্তির এক শ্বাসও (সামান্য পরিমাণও) তাদেরকে স্পর্শ করে তাহলে অবশ্যই তারা বলবে, “হায় আমাদের দুর্ভোগ! নিশ্চয়ই আমরা জালেম ছিলাম।”



মুহিউদ্দিন খান: আপনার পালনকর্তার আযাবের কিছুমাত্রও তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা বলতে থাকবে, হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা অবশ্যই পাপী ছিলাম।



জহুরুল হক: আর যদি তোমার প্রভুর শাস্তির তোড় তাদের স্পর্শ করত তবে তারা নিশ্চয়ই বলত -- "হায় আমাদের দুর্ভোগ! আমরা নিঃসন্দেহ অন্যায়াচারী ছিলাম।"



Sahih International: And if [as much as] a whiff of the punishment of your Lord should touch them, they would surely say, "O woe to us! Indeed, we have been wrongdoers."



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৪৬. আর আপনার রব-এর শাস্তির কিছুমাত্রও তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা অবশ্যই বলে উঠবে, হায়, দুর্ভোগ আমাদের, আমরা তো ছিলাম যালোম!


তাফসীর:

-


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৪৬) তোমার প্রতিপালকের শাস্তির কিছু মাত্রও তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা নিশ্চয় বলে উঠবে, ‘হায় দুর্ভোগ আমাদের! নিশ্চয় আমরা সীমালংঘনকারী ছিলাম।’ [1]


তাফসীর:

[1] অর্থাৎ, আযাবের কিছু মাত্রও যদি তাদেরকে স্পর্শ করে, তাহলে তারা বলে উঠবে এবং নিজেদের অন্যায় স্বীকার করবে।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৪১-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:



এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন: হে নাবী! মুশরিকরা যে তোমাকে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করছে সে কারণে তুমি মনঃক্ষুণ্ন হয়ো না, তোমার পূর্ববর্তী নাবীদেরকেও এরূপ ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা হয়েছে। সুতরাং তুমি এদের এরূপ কথাবার্তা উপেক্ষা করে চল এবং ধৈর্য ধারণ কর যেমনভাবে ধৈর্য ধারণ করেছিল পূর্ববর্তী নাবী-রাসূলগণ। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:



وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰي مَا كُذِّبُوْا وَأُوْذُوْا حَتّٰي أَتٰهُمْ نَصْرُنَا ج وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمٰتِ اللّٰهِ ج وَلَقَدْ جَا۬ءَكَ مِنْ نَّبَاْئِ الْمُرْسَلِيْنَ)‏



“তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে অবশ্যই মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছিল; কিন্তু তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা ও কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল, যে পর্যন্ত না আমার সাহায্য তাদের নিকট এসেছে। আল্লাহর আদেশ কেউ পরিবর্তন করতে পারে না, রাসূলগণের সম্বন্ধে কিছু সংবাদ তো তোমার নিকট এসেছেই।” (সূরা আন‘আম ৬:৩৪)



অতএব এখনো যদি দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে বিপদের সম্মুখিন হতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রেও ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। কোনভাবেই বিচলিত হওয়া যাবে না।



(أَمْ لَهُمْ اٰلِهَةٌ تَمْنَعُهُمْ مِّنْ دُوْنِنَا)



অর্থাৎ তোমাদের কাজ এমন যে, দিন-রাতের যেকোন সময়ে তোমাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার আযাব আসতে পারে। সে আযাব হতে তোমাদেরকে দিনে-রাতে কে রক্ষা করছে? আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কেউ আছে কি, যে তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার আযাব হতে রক্ষা করতে পারে?



(وَلَا هُمْ مِّنَّا يُصْحَبُوْنَ)



এর অর্থ হল- তারা আমার আযাব হতে রক্ষা পাবে না, অর্থাৎ তারা নিজেদেরকে সাহায্য করতে ও আল্লাহ তা‘আলার আযাব হতে মুক্ত করতে সক্ষম নয়, তাহলে তারা অপরকে সাহায্য করবে কিভাবে? অথবা অপরকে আযাব থেকে বাঁচাবে কিভাবে?



(بَلْ مَتَّعْنَا هٰٓؤُلَا۬ءِ وَاٰبَا۬ءَهُمْ)



অর্থাৎ যদি তাদের বা তাদের পূর্বপুরুষদের জীবন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও ভোগ-বিলাসে অতিবাহিত হয় তাহলে কি তারা মনে করে যে, তারা সঠিক পথে আছে এবং ভবিষ্যতেও তাদের কোন কষ্ট হবে না? বরং তাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনের সুখ-বিলাস তো আমার ঢিল দেয়া নীতির অংশবিশেষ। এতে কারো ধোঁকায় পড়া উচিত নয়।



(نَأْتِي الْأَرْضَ نَنْقُصُهَا)



কুফরীর এলাকা দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে আর ইসলামের এলাকা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। কুফরীর পায়ের তলা হতে মাটি সরে যাচ্ছে এবং ইসলামের বিজয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর মুসলিমরা দেশের পর দেশ জয় করে যাচ্ছে।



(أَفَهُمُ الْغٰلِبُوْنَ)



কুফরীর অনগ্রসরতা ও ইসলামের অগ্রসরতা দেখেও কি কাফিররা মনে করে যে, তারাই বিজয়ী? অর্থাৎ কক্ষনো নয়, তারা কোনদিন জয়ী হতে পারবে না, হয়তো মুসলিমদের ভুলের জন্য ক্ষণিক সময়ের জন্য জয়ী হতে পারে।



(وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ....)



‘এবং ক্বিয়ামাত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড’ আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত দিবসে ন্যায় বিচারের মানদণ্ড দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করবেন। প্রত্যেকের আমল ওজন করে দেখবেন, যার সৎ আমলের পাল্লা ভারি হবে সে চিরসুখে থাকবে। পক্ষান্তরে যার সৎ আমলের পাল্লা হালকা হবে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা বিন্দু পরিমাণও জুলুম করবেন না।



আল্লাহ তা‘আলার বাণী:



(وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا)



“তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি জুলুম করেন না।” (সূরা ক্বাহ্ফ ১৮:৪৯)



আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:



(يٰبُنَيَّ إِنَّهَآ إِنْ تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُنْ فِيْ صَخْرَةٍ أَوْ فِي السَّمٰوٰتِ أَوْ فِي الْأَرْضِ يَأْتِ بِهَا اللّٰهُ ط إِنَّ اللّٰهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ)



“হে আমার ছেলে! কোন কিছু যদি সরিষার দানার পরিমাণও হয় এবং তা যদি থাকে পাথরের ভিতরে অথবা আসমানে কিংবা ভূ-গর্ভে, তথাপি তাও আল্লাহ উপস্থিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।” (সূরা লুক্বমান ৩১:১৬)



আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:



(فَاَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِیْنُھ۫ﭕﺫ فَھُوَ فِیْ عِیْشَةٍ رَّاضِیَةٍﭖﺚ وَاَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِیْنُھ۫ﭗﺫ فَاُمُّھ۫ ھَاوِیَةٌﭘ) ‏‏



“অতএব যার পাল্লা ভারী হবে, সে সন্তোষজনক জীবন যাপন করবে আর যার পাল্লা হালকা হবে, তার ঠিকানা হবে হাবিয়া।” (সূরা ক্বারিয়াহ ১০১:৬-৯)



কিয়ামতের দিন আমল, আমলকারী ও আমলনামা তিনটিই ওজন করা হবে। (আক্বীদাহ ওয়াসিতিয়্যাহ)



মানুষের আমল ও কর্মসমূহ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও অনুভূত নয়, তার বাহ্যিক কোন রূপ বা অস্তিত্ব নেই। তাহলে তার ওজন কিভাবে সম্ভব? আধুনিক যুগে এ প্রশ্নের কোন গুরুত্ব নেই। যেহেতু বর্তমানে বৈজ্ঞানিক আবিস্কার এ প্রশ্নের উত্তর সহজ করে দিয়েছে। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের সাহায্যে নিরাকার বস্তুও ওজন করা যাচ্ছে। যখন মানুষ দ্বারা এটা সম্ভব তখন আল্লাহ তা‘আলা র জন্য আকারহীন জিনিসকে ওজন করা কেমন করে কঠিন হতে পারে?



সুতরাং প্রত্যেক আমল, আমলকারী ও যে দফতরে আমল লিখে রাখা হয় তা ওজন করা হবে। যাদের ভাল আমলের পাল্লা ভারী হবে তাদের সুখের সীমা থাকবে না, অন্যথায় দুখের সীমা থাকবে না।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই।

২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন রক্ষণাবেক্ষণকারী নেই।

৩. মানুষকে রিযিক দিয়ে থাকেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।

৪. কিয়ামতের দিন ন্যায়ের মানদণ্ড স্থাপন করা হবে এবং ন্যায় বিচার করা হবে।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৪৪-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের হিংসা বিদ্বেষ ও প্রতারণা এবং নিজেদের গুমরাহীর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ আমি তাদেরকে পানাহার ও ভোগের সামগ্রী প্রদান করেছি এবং দীর্ঘ বয়স দিয়েছি বলেই তারা মনে করে নিয়েছে যে, তাদের কৃতকর্ম আমার কাছে পছন্দনীয়। এরপর মহান আল্লাহ তাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেনঃ তারা কি দেখে না যে, আমি কাফিরদের জনপদগুলিকে তাদের কুফরীর কারণে ধ্বংস করে দিয়েছি? এই বাক্যের আরো অনেক অর্থ করা হয়েছে। যা আমরা সূরায়ে রা’দে বর্ণনা করে দিয়েছি। কিন্তু সর্বাধিক সঠিক অর্থ এটাই। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদের আশে পাশের জনপদগুলিকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি এবং আমি নিদর্শনসমূহ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে থাকি যাতে লোকেরা তাদের পাপকার্য হতে ফিরে আসে।` (৪৬:২৭) হযরত হাসান বসরী (রঃ) এর একটি ভাবার্থ করেছেনঃ “আমি ইসলামকে কুফরীর উপর জয়যুক্ত করে আসছি। সুতরাং তোমরা কি এর দ্বারাও উপদেশ গ্রহণ করবে না যে, কিভাবে আল্লাহ তাআলা তার বন্ধুদেরকে তার শত্রুদের উপর বিজয় দান করেন এবং কিভাবে পূর্ববর্তী মিথ্যা প্রতিপাদনকারী উম্মতদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন ও মুমিনদেরকে মুক্তি দান করেছেন? “এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তবুও কি তারা বিজয়ী হবে? অর্থাৎ এখনো কি তারা নিজেদেরকে বিজয়ী মনে করছেঃ না, না। বরং তারা পরাজিত, লাঞ্ছিত, ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস প্রাপ্ত।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাও আমি শুধু ওয়াহী দ্বারাই তোমাদেরকে সতর্ক করি। যে সব শাস্তি থেকে আমি তোমাদেরকে ভয় প্রদর্শন করছি এটা আমার নিজের পক্ষ হতে নয়, আল্লাহ তাআলার কথাই আমি তোমার কাছে প্রচার করছি মাত্র। কিন্তু আল্লাহ যাদের অন্তর্চক্ষু অন্ধ করে দিয়েছেন এবং কর্ণে ও অন্তরে মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন তাদের জন্যে মহান আল্লাহর একথাগুলি কোন উপকারে আসবে না। বধিরকে সতর্ক করা বৃথা। কেননা, সে তো কিছু শুনতেই পায় না।

মহান আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালকের শাস্তির কিছুমাত্র তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করে নেবে এবং স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বলে ফেলবেঃ হায়, দুর্ভোগ আমাদের, আমরা তো ছিলাম যালিম।

আল্লাহ পাক বলেনঃ কিয়ামতের দিন আমি স্থাপন করবো ন্যায় বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। এই দাঁড়িপাল্লা একটিই হবে। কিন্তু যে আমলগুলি তাতে ওজন করা হবে ওগুলি অনেক হবে বলে একে বহু বচন আনা হয়েছে। ঐদিন কারো প্রতি সামান্য পরিমাণও অত্যাচার করা হবে না। কেননা, হিসাব গ্রহণকারী হবেন স্বয়ং আল্লাহ, তিনি একাই সমস্ত মাখলুকের হিসাব নেয়ার জন্যে যথেষ্ট। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালক কারো উপর যুলুম করেন না।” (১৮:৪৯) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ অনুপরিমাণও যুলুম করবেন না, পুণ্যকে তিনি বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন এবং নিজের নিকট হতে প্রতিদান প্রদান করবেন।” (৪:৪০) আল্লাহ তাআলা হযরত লুকমানের উক্তি উদ্ধৃত করে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আমার প্রিয় বৎস! কোন কিছু যদি শরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা যদি থাকে শিলাগর্ভে অথবা আকাশে কিংবা মৃত্তিকার নীচে, আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন; নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্ম দর্শী, খবর রাখেন সব বিষয়ের।” (৩১:১৬)।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ দু’টি কথা এমন আছে যে, যুবানে (পড়তে) হাকা, মীযানে ভারী এবং রহমানের (আল্লাহর) নিকট খুব পছন্দনীয়। তা হলোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি’ পবিত্রতা ঘোষণা করছি আমি মহান আল্লাহর”।

হযরত আমর ইবনু আস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের মধ্যে একটি লোককে হাশরের মাঠে একত্রিত জনগণের সামনে নিজের কাছে আহ্বান। করবেন। অতঃপর তার সামনে তিনি তার পাপের নিরানব্বইটি খাতা খুলে দিবেন। যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত দীর্ঘ হবে এক একটি খাতা। তারপর মহান আল্লাহ তাকে বলবেনঃ “এই খাতাগুলির মধ্যে তোমার কৃত যে পাপগুলি রয়েছে তার কোনটাই তুমি অস্বীকার কর কি? আমার পক্ষ থেকে যে রক্ষক ফেরেশতারা তোমার আমলগুলি লিপিবদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত ছিল তারা তোমার প্রতি কোন যুলুম করে নাই তো?` উত্তরে সে বলবে? “হে আমার প্রতিপালক! না আমার অস্বীকার করার কোন উপায় আছে, না আমি একথা বলতে পারি যে, আমার প্রতি যুলুম করা হয়েছে।” তখন আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেনঃ “আচ্ছা, তোমার কোন ওজর বা কোন পুণ্য আছে কি?” সে হতবুদ্ধি হয়ে জবাব দেবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! না, আমার ওজর করারও কিছু নেই এবং আমার কোন পুণ্যও নেই।” তখন মহান আল্লাহ বলবেনঃ “হাঁ হাঁ, তোমার একটি পূণ্য আমার কাছে রয়েছে। আজ তোমার প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।” অতঃপর ছোট একটি কাগজের টুকরা বের করা হবে। তাতে লিখিত থাকবেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল।” অতঃপর আল্লাহ তাআলা (ফেরেশতাদেরকে) বলবেনঃ “তোমরা ওটা পেশ কর।” লোকটি বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! এই কাগজের টুকরাটি ঐ সব বড় বড় খাতার মুকাবিলায় কি করতে পারে?” আল্লাহ তাআলা উত্তর দিবেনঃ “নিশ্চয়ই তুমি অত্যাচারিত হবে না।` অতঃপর ঐ সমুদয় খাতা নিক্তির এক পাল্লায় রাখা হবে এবং কাগজের ঐ টুকরাটি আর এক পাল্লায় রেখে দেয়া হবে। তখন কাগজ খণ্ডের পাল্লাটি নীচের দিকে চেপে যাবে এবং ঐ খাতাগুলোর পাল্লাটি উপরের দিকে উঠে যাবে। পরম দয়ালু ও দাতা আল্লাহর নাম অপেক্ষা কোন কিছুই বেশী ভারী হবে না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে ইবনু মাজাহ এবং জামে তিরমিযীতেও এটা বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)

হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন তুলাদণ্ড রাখা হবে। অতঃপর একটি লোককে আনয়ন করে এক পাল্লায় রেখে দেয়া হবে এবং তার উপর গণনাকৃত পাপরাশিও তাতে রেখে দেয়া হবে। তখন ঐ পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। ফলে তাকে জাহান্নামের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সে পিছন দিকে ফিরবে এমন সময় আল্লাহর পক্ষ হতে একজন আহ্বানকারী ডাক দিয়ে বলবেঃ “তোমরা তড়ািতাড়ি করো না, তার একটি জিনিস বাকী রয়ে গেছে।” অতঃপর কাগজের একটি টুকরা বের করা হবে যাতে লিখা থাকবেঃ ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ'। ওটাকে ঐ লোকটির সাথে পাল্লায় রাখা হবে। তখন এই পাল্লা নীচের দিকে ঝুঁকে পড়বে।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন সাহাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সামনে বসে পড়ে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার কতকগুলি গোলাম (ক্রীতদাস) রয়েছে যারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, আমার খিয়ানত করে এবং আমার অবাধ্যাচরণও করে। আমি তাকে মারধোরও করি এবং গাল-মন্দও দিই। এখন বলুন তো, তাদের ব্যাপারে আমার অবস্থা কি হবে?` উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তাদের খিয়ানত, . অবাধ্যাচরণ, মিথ্যা প্রতিপাদন ইত্যাদি একত্রিত করা হবে। আর তোমার তাদেরকে মারধোর করা, গাল-মন্দ দেয়া ইত্যাদিও জমা করা হবে। অতঃপর তোমার শাস্তি যদি তাদের অপরাধের সমান হয়ে যায় তবে তো তুমি পবিত্রাণ পেয়ে যাবে। তোমার শাস্তিও হবে না এবং তুমি পুরস্কারও পাবে না। তবে যদি তোমার শাস্তি তাদের অপরাধের তুলনায় কম হয় তবে তুমি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভ করবে। কিন্তু যদি তোমার শাস্তি তাদের দোষের তুলনায় বেশী হয়ে যায় তবে তোমার ঐ বেশী শাস্তির প্রতিশোধ নেয়া হবে।` একথা শুনে ঐ সাহাবী উচ্চস্বরে কাঁদতে শুরু করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)! বলেনঃ “তার কি হলো? সে কি কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতটি পাঠ করে নাই? “কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করবো ন্যায় বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং কর্ম যদি তিল পরিমাণ ওজনেরও হয় তুবও তা আমি উপস্থিত করবো; হিসাব গ্রহণকারী রূপে আমিই যথেষ্ট।” সাহাবী তখন বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এদের থেকে পৃথক হওয়া ছাড়া আমি অন্য কিছুই আর ভাল মনে করছি না। আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমি এদেরকে আযাদ করে দিলাম।` (এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।