আল কুরআন


সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 16)

সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 16)



হরকত ছাড়া:

وما خلقنا السماء والأرض وما بينهما لاعبين ﴿١٦﴾




হরকত সহ:

وَ مَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَ الْاَرْضَ وَ مَا بَیْنَهُمَا لٰعِبِیْنَ ﴿۱۶﴾




উচ্চারণ: ওয়ামা-খালাকনাছছামাআ ওয়াল আরদা ওয়ামা-বাইনাহুমা-লা-‘ইবীন।




আল বায়ান: আসমান-যমীন ও তাদের মাঝখানে যা কিছু আছে তার কোন কিছুই আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৬. আর আসমান, যমীন ও যা এতদুভয়ের মধ্যে আছে তা আমরা খেলার ছলে সৃষ্টি করিনি।




তাইসীরুল ক্বুরআন: আসমান, যমীন আর এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা আমি খেলতে খেলতে বানাইনি।




আহসানুল বায়ান: (১৬) আকাশ ও পৃথিবী এবং যা উভয়ের অন্তর্বর্তী তা আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। [1]



মুজিবুর রহমান: আকাশ ও পৃথিবী এবং যা এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।



ফযলুর রহমান: আসমান ও জমিন এবং এদের মাঝখানে যা কিছু আছে তা আমি (শুধুমাত্র) খেলার জন্য সৃষ্টি করিনি।



মুহিউদ্দিন খান: আকাশ পৃথিবী এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে, তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।



জহুরুল হক: আর আকাশ ও পৃথিবী এবং এ দুইয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সে-সমস্ত আমরা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করি নি।



Sahih International: And We did not create the heaven and earth and that between them in play.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১৬. আর আসমান, যমীন ও যা এতদুভয়ের মধ্যে আছে তা আমরা খেলার ছলে সৃষ্টি করিনি।


তাফসীর:

-


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১৬) আকাশ ও পৃথিবী এবং যা উভয়ের অন্তর্বর্তী তা আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। [1]


তাফসীর:

[1] বরং এর পিছনে বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য ও যুক্তি ছিল। যেমন বান্দারা আমার স্মরণ ও কৃতজ্ঞতা করবে, সৎলোকদেরকে সৎকাজের প্রতিদান এবং পাপীদেরকে পাপের শাস্তি দেওয়া হবে ইত্যাদি।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ১৬-২০ নং আয়াতের তাফসীর:



যারা দুনিয়াকে রঙ-তামাশার জায়গা মনে করে বলে থাকে ‘দুনিয়াতে আজকে আছি কালকে নাই হাসি-গানে ফুুর্তি করে যাই’ ‘দুনিয়াটা মস্ত বড় খাও-দাও ফুর্তি কর’ এমন বস্তুবাদীদের বিশ্বাসে কুঠারাঘাত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আকাশ ও পৃথিবী এবং তাদের উভয়ের মাঝে যা কিছু আছে তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি” বরং পৃথিবী ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা সৃষ্টি করার পিছনে একটি মহৎ উদ্দেশ্য আছে। প্রথম উদ্দেশ্য হল পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব আল্লাহ তা‘আলার গোলামী করবে, তাঁর প্রশংসা করবে এবং তাঁর মহত্ব বর্ণনা করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ -‏ مَآ أُرِيْدُ مِنْهُمْ مِّنْ رِّزْقٍ وَّمَآ أُرِيْدُ أَنْ يُّطْعِمُوْنِ)



“আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে। আমি তাদের নিকট হতে কোন রিযিক চাই না এবং এও চাই না যে তারা আমাকে খাওয়াবে।” (সূরা যারিআত ৫১:৫৬)



সুতরাং যারা তাঁর ইবাদত করবে তাদেরকে তিনি উত্তম প্রতিদান দেবেন আর যারা অসৎ আমল করবে তাদের কর্মের যথার্থ শাস্তি দেবেন।



যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:



(لِيَجْزِيَ الَّذِيْنَ أَسَا۬ءُوْا بِمَا عَمِلُوْا وَيَجْزِيَ الَّذِيْنَ أَحْسَنُوْا بِالْحُسْنٰي)‏



“যাতে করে যারা মন্দ আমল করে তাদেরকে তিনি দেন মন্দ ফল এবং যারা সৎ আমল করে তাদেরকে তিনি দেন উত্তম প্রতিদান।” (সূরা নাজম ৫৩:৩১)



আরো অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হল এখানে ন্যায় ও অন্যায়ের যে দ্বন্দ্ব, ভালো ও মন্দের মধ্যে যে সংঘর্ষ চলছে তার মধ্যে ন্যায় ও ভালোকে বিজয়ী করা ও অন্যায় এবং মন্দকে পরাজিত করা। সুতরাং আমি সত্য দ্বারা অসত্যের ওপর, ন্যায় দ্বারা অন্যায়ের ওপর এবং ভালো দ্বারা মন্দের ওপর আঘাত করি, যাতে অসত্য, অন্যায় ও মন্দের বিলুপ্তি ঘটে। دمغ মাথার ওপর এমন আঘাতকে বলা হয় যা মগজ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। زهق এর অর্থ শেষ হওয়া, ধ্বংস হওয়া বা বিনষ্ট হওয়া।



অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যদি আমি ক্রীড়াচ্ছলে কোন কিছু গ্রহণ করতাম তাহলে আমার কাছে যা রয়েছে তা থেকেই গ্রহণ করতাম। কিন্তু আমি তা করিনি।



বরং আল্লাহ তা‘আলা এ সকল মিথ্যা উদ্ভট কথাবার্তাকে সত্য দ্বারা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেন।



(وَلَه۫ مَنْ فِي السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ)



অর্থাৎ আকাশ-জমিনে যারা আছে সবাই আল্লাহ তা‘আলার কর্তৃত্বাধীন, মালিকানাধীন এবং সবাই তাঁর গোলাম, এমন কি যারা তাঁর নিকটে রয়েছে যেমন ফেরেশতা, তারাও আল্লাহ তা‘আলার কর্তৃত্বাধীন এবং আল্লাহ তা‘আলার গোলাম। এরা সবাই আল্লাহর ইবাদত করতে, গোলামী করতে লজ্জাবোধ করে না এবং ক্লান্তি বোধ করে না। কাছের ফেরেশতারা সবাই দিবা-রাত্রিতে আল্লাহ তা‘আলার তাসবীহ পাঠ করে। তারা তাসবীহ পাঠে কোন প্রকার ঘাটতি করে না।



আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(يُسَبِّحُ لِلّٰهِ مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ)



“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে আল্লাহর।” (সূরা হাশর ৫৯:১)



সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা আকাশ-জমিন যথার্থ কারণেই সৃষ্টি করেছেন এবং কেউ তাঁর দাসত্ব করতে লজ্জাবোধ করে না।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. আকাশ-জমিনের কেউ আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতে লজ্জাবোধ করে না।

২. আকাশ-জমিন সৃষ্টির উদ্দেশ্য হল সবাই তাঁর ইবাদত করবে।

৩. আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে অলসতা করা যাবে না।

৪. মানুষের দুনিয়ার কর্মের হিসাব আখিরাতে পুরিপরি নেয়া হবে।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ১৬-২০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি আকাশ ও যমীনকে হক ও ন্যায়ের সাথে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি অসৎ লোকদেরকে শাস্তি এবং সৎলোকদের পুরস্কার দেন। এগুলিকে তিনি খেল তামাশা ও ক্রীড়াচ্ছিলে সৃষ্টি করেন নাই। অন্য আয়াতে এই বিষয়ের সাথে সাথেই এই বর্ণনা রয়েছে যে, এইরূপ ধারণা কাফিররা পোষণ করে থাকে যাদের জন্য জাহান্নামের অগ্নি প্রস্তুত রয়েছে।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি যদি খেল-তামাশা ও ক্রীড়ার উপকরণ চাইতাম তবে আমি আমার কাছে যা তা নিয়েই ওটা করতাম। এর একটি ভাবার্থ হচ্ছেঃ যদি আমি খেল-তামাশা চাইতাম তবে ওর উপকরণ বানিয়ে নিতাম। আমার কাছে যা আছে তা নিয়েই। আর তা হলে আমি জান্নাত, জাহান্নাম, মৃত্যু, পুনরুত্থান এবং হিসাব সৃষ্টি করতাম না। ইবনু আবি নাজাহ (রাঃ) এই অর্থ করেছেন। হাসান (রাঃ) ও কাতাদা (রাঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ যদি আমি স্ত্রীর ইচ্ছা করতাম তবে আমার কাছে যারা আছে তাদেরকেই করতাম। ইয়ামিন বাসীদের ভাষায় (আরবী) শব্দটি স্ত্রীর অর্থেও এসে থাকে। ইকরামা (রঃ) এবং সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এখানে (আরবী) শব্দ দ্বারা সন্তান উদ্দেশ্য। কিন্তু এ দু'টি অর্থ পরম্পর সম্বন্ধ যুক্ত। স্ত্রীর সাথে সন্তানও রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করার ইচ্ছা করলে তার সষ্টির মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করতে পারতেন; পবিত্র ও মহান তিনি। তিনি আল্লাহ, এক, প্রবল পরাক্রমশালী।` (৩৯:৪) সুতরাং তিনি সন্তান গ্রহণ করা হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। হযরত ঈসা (আঃ) ও উযায়ের তাঁর পুত্র নন এবং ফেরেশতারা তাঁর কন্যাও নন। এই ইয়াহুদী, খৃস্টান ও মক্কার কাফিরদের এই বাজে কথা এবং অপবাদ হতে এক ও পরাক্রমশালী আল্লাহ পবিত্র ও উচ্চ। (আরবী) এর মধ্যে (আরবী) শব্দটি নেতিবাচক। অর্থাৎ ‘আমি এটা করি নাই।' মুজাহিদের (রঃ) উক্তি তো এই যে, কুরআনকারীমের মধ্যে (আরবী) সর্বক্ষেত্রেই নেতিবাচক রূপে এসেছে।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি সত্য দ্বারা মিথ্যার উপর আঘাত হানি, ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয় এবং তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ওটা বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। যারা আল্লাহর জন্যে সন্তান সাব্যস্ত করছে, তাদের এই বাজে ও ভিত্তিহীন কথার কারণে তাদের দুর্ভোগ পোহাতেই হবে।

এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যে ফেরেশতাদেরকে তোমরা আল্লাহর কন্যা বলছে তাদের অবস্থা শুনো এবং আল্লাহ তাআলার বিরাটত্বের প্রতি লক্ষ্য করো যে, আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত কিছু তারই অধিকারভুক্ত। ফেরেশতারা তাঁরই ইবাদতে নিমগ্ন রয়েছে। তারা যে কোন সময় তাঁর অবাধ্য হবে এটা অস। হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহ তাআলার বান্দা হওয়াতে শরম করেন না এবং ফেরেশতারাও তার ইবাদত করতে লজ্জাবোধ করেন না। তাদের কেউই অহংকারবশে তার ইবাদত করা হতে বিমুখ হয় না। যে কেউ এরূপ করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, এমন একদিন আসছে যেই দিন সে হাশরের মাঠে সবারই সাথে তার সামনে হাজির হবে এবং স্বীয় কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। ঐ বুযুর্গ ফেরেশতামণ্ডলী দিবারাত্র আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং তারা ক্লান্তও হয় না এবং শৈথিল্যও করে না। দিন রাত তারা আল্লাহর আদেশ পালনে, তাঁর ইবাদতে এবং তার তাসবীহ পাঠ ও আনুগত্যের কাজে লেগে রয়েছে। তাদের মধ্যে নিয়াত ও আমল উভয়ই বিদ্যমান। না তারা কোন সময় আল্লাহর নাফরমানী করে, না কোন আদেশ পালনে বিমুখ হয়।

হযরত হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের মজলিসে অবস্থান করছিলেন, ঐ সময় তিনি বলেনঃ “আমি যা শুনতে পাচ্ছি তা তোমরাও শুনতে পাচ্ছ কি?” সাহাবীরা উত্তরে বলেনঃ “আমরা তো কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।” তখন তিনি বলেনঃ “আমি আকাশের চড়ুচণ্ডু শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আর সত্য ব্যাপার তো এটাই যে, ওতে চডুচড়ু হওয়া স্বাভাবিক। কেননা তাতে কনিষ্ঠাঙ্গুলী পরিমিত স্থানও এমন নেই যেখানে কোন না কোন ফেরেশতার মস্তক সিজদায় পড়ে থাকে না।` (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু হারিস ইবনু নাওফাল (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা আমি হযরত কা'ব আহবারের (রাঃ) কাছে বসেছিলাম। ঐ সময় আমি অল্প বয়স্ক বালক ছিলাম। আমি তাকে এই আয়াতের ভাবার্থ জিজ্ঞেস করলাম যে, ফেরেশতাদেরকে কি তাদের চলা, ফেরা, আল্লাহর পয়গাম নিয়ে যাওয়া, আমল করা ইত্যাদি ও তাসবীহ পাঠ করতে বিরত রাখে না? আমার এ প্রশ্ন শুনে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “এ ছেলেটি কে?` জনগণ উত্তরে বললেনঃ “এটা বানু আবদিল মুত্তালিব গোত্রের ছেলে। তিনি তখন আমার কপাল চুম্বন করে বললেনঃ “হে প্রিয় বৎস! ফেরেশতাদের এই তাসবীহ পাঠ ঠিক আমাদের নিঃশ্বাস গ্রহণের মত। দেখো, চলতে, ফিরতে, কথা বলতে সব সময়েই আমাদের নিঃশ্বাস আসা যাওয়া করে থাকে। অনুরূপভাবে ফেরেশতাদের তাসবীহ পাঠও অনবরত চলতে থাকে।`





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।