সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 110)
হরকত ছাড়া:
إنه يعلم الجهر من القول ويعلم ما تكتمون ﴿١١٠﴾
হরকত সহ:
اِنَّهٗ یَعْلَمُ الْجَهْرَ مِنَ الْقَوْلِ وَ یَعْلَمُ مَا تَکْتُمُوْنَ ﴿۱۱۰﴾
উচ্চারণ: ইন্নাহূইয়া‘লামুল জাহরা মিনাল কাওলি ওয়া ইয়া‘লামুমা-তাকতুমূন।
আল বায়ান: তিনি প্রকাশ্য কথা সম্পর্কেও জানেন এবং তোমরা যা গোপন কর তাও জানেন।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১১০. নিশ্চয় তিনি জানেন যে কথা সশব্দে বল এবং তিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর।(১)
তাইসীরুল ক্বুরআন: তিনি জানেন যে কথা প্রকাশ করা হয় আর তিনি জানেন যা তোমরা (তোমাদের অন্তরে) লুকিয়ে রাখ।
আহসানুল বায়ান: (১১০) নিশ্চয় তিনি জানেন উচ্চ স্বরে ব্যক্ত কথা এবং যা তোমরা গোপন কর।
মুজিবুর রহমান: তিনি জানেন যা কথায় ব্যক্ত কর এবং যা তোমরা গোপন কর।
ফযলুর রহমান: তিনি (আল্লাহ) প্রকাশ্য কথা তো নিশ্চয়ই জানেন, তোমরা যা গোপন করো তিনি তাও জানেন।
মুহিউদ্দিন খান: তিনি জানেন, যে কথা সশব্দে বল এবং যে কথা তোমরা গোপন কর।
জহুরুল হক: "নিঃসন্দেহ তিনি জানেন কথাবার্তার প্রকাশ্য দিক আর জানেন যা তোমরা গোপন কর।
Sahih International: Indeed, He knows what is declared of speech, and He knows what you conceal.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১১০. নিশ্চয় তিনি জানেন যে কথা সশব্দে বল এবং তিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর।(১)
তাফসীর:
(১) অর্থাৎ তোমাদের যাবতীয় কুফরি, বিরোধিতাপূর্ণ কথা, ষড়যন্ত্র সবই আল্লাহ জানেন। চাই তা প্রকাশ্যে বল বা গোপনে বল। কারণ তিনি গায়বের খবর জানেন। [ফাতহুল কাদীর] তোমাদের শির্কের শাস্তি তোমাদের পেতেই হবে। [কুরতুবী] সুতরাং এমন মনে করো না যে, এসব বাতাসে উড়ে গেছে এবং এসবের জন্য আর কখনো জবাবদিহি করতে হবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (১১০) নিশ্চয় তিনি জানেন উচ্চ স্বরে ব্যক্ত কথা এবং যা তোমরা গোপন কর।
তাফসীর:
-
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ১০৮-১১২ নং আয়াতের তাফসীর:
সূরার শেষে আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, বলে দাও! আমার কাছে এ মর্মে ওয়াহী আসে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই। অতএব তোমরা কি সকল কিছুর পূজা, আরাধনা ও ইবাদত বাদ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আত্মসমর্পণ করে একমাত্র তাঁর ইবাদত করবে? যদি সব কিছু বর্জন করে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত কর তাহলে ভাল, অন্যথায় জেনে রাখো তাওহীদ ও ইসলামের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তোমরা যেমন আমার শত্র“ হয়েছো তেমনি আমিও তোমাদের শত্র“তে পরিণত হলাম। তোমাদের থেকে এবং তোমাদের মা‘বূদ থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত। তোমাদের সাথে প্রকাশ্য যুদ্ধ চলবে। তোমাদেরকে শাস্তির যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা কি খুব কাছে, না দূরে তা আমি জানি না। কারণ এ ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলার কাছে। এটাও জানিনা, তোমরা যে শাস্তি দ্রুত কামনা করছ সেটা বিলম্ব করে দিয়ে তোমাদের জন্য কিছুকাল দুুনিয়াতে উপভোগ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কারণ, হতে পারে তা বিলম্ব করে তোমাদেরকে বড় শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
সর্বশেষ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করলেন হে আল্লাহ তা‘আলা! আমাদের মাঝে ও কাফিরদের মাঝে সঠিক ফায়সালা করে দিন। আল্লাহ তা‘আলা দু‘আ কবূল করলেন, আখিরাতের পূর্বেই দুনিয়াতে কাফিরদেরকে যথোপযোগী শাস্তি দিলেন। যেমন বদর যুদ্ধে ও অন্যান্য যুদ্ধে তাদেরকে নিপাত করে দিয়েছেন। সুতরাং হে কাফির সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে যে বিভিন্নমুখী কথা বলছ, এসব কথার বিরুদ্ধে তিনিই দয়াময় ও তিনিই সহায়ক।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সত্যের দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া মানেই হলো, নিজেকে ধবংসের দিকে ঠেলে দেয়া।
২. এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করা যাবে না।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপকাশ্য সব কিছু জানেন, অতএব যা কিছু বলব সে সম্পর্কে পূর্বেই সতর্ক হওয়া উচিত।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ১০৮-১১২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) নির্দেশ দিচ্ছেনঃ তুমি মুশরিকদেরকে বলে দাওঃ আমার কাছে এই ওয়াহী করা হচ্ছে যে, সত্য ও প্রকৃত মাবুদ শুধু আল্লাহ তাআলাই। তোমরা সবাই এটা মেনে নাও। যদি তোমরা আমার কথা না মানে তবে আমরা ও তোমরা পৃথক। তোমরা আমাদের শত্রু এবং আমরা তোমাদের শত্রু। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যদি তারা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তবে বলে দাও আমার আমল আমার জন্যে এবং তোমাদের আমল তোমাদের জন্যে, আমি যে আমল করি তা হতে তোমরা মুক্ত এবং তোমরা যে আমল কর তা হতে আমি মুক্ত।` (১০:৪১) আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি যদি কোন কওমের বিশ্বাসঘাতকতা ও চুক্তি ভঙ্গের আশংকা কর তবে তৎক্ষণাৎ তাদেরকে চুক্তি ভঙ্গের খবর দিয়ে দাও।` (৮:৫৮)। অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা এখানেও বলেনঃ যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলে দাওঃ তোমাদের আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তোমরা নিশ্চিতরূপে জেনে রেখো যে, তোমাদের সঙ্গে যে ওয়াদা করা হচ্ছে। তা অবশ্য অবশ্যই পূর্ণ হবে, তা এখনই হোক অথবা বিলম্বেই হোক। আল্লাহ তাআলা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত। তোমরা যা কিছু প্রকাশ কর এবং যা কিছু গোপন রাখো আল্লাহ তা সবই জানেন। বান্দাদের সমস্ত প্রকাশ্য ও গোপনীয় সংবাদ তার নিকট প্রকাশমান। ছোট, বড়, প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য সবই তিনি জানতে পারেন। খুব সঙ্ঘ ওয়াদা পূরণে বিলম্ব করার মধ্যেও তোমাদের জন্যে একটা পরীক্ষা রয়েছে এবং কিছু কালের জন্যে তোমরা জীবনোপভোগ করবে।
রাসূলদেরকে (আঃ) যে দুআ শিক্ষা দেয়া হয়েছিল তা হলো : হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মধ্যে ও আমাদের কওমের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করুন এবং উত্তম ফায়সালাকারী একমাত্র আপনিই। রাসূলুল্লাহকেও (সঃ) এই প্রকারেরই দুআ'র নির্দেশ দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) যে কোন যুদ্ধে গিয়েই দুআ করতেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করে দিন। আমরা আমাদের দয়াময় আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। হে কাফির ও মুশরিকদের দল! তোমরা যা কিছু মিথ্যা আরোপ করছে সে বিষয়ে আমাদের একমাত্র সহায়স্থল তিনিই। তিনিই আমাদের সাহায্যকারী।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।