আল কুরআন


সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 103)

সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত: 103)



হরকত ছাড়া:

لا يحزنهم الفزع الأكبر وتتلقاهم الملائكة هذا يومكم الذي كنتم توعدون ﴿١٠٣﴾




হরকত সহ:

لَا یَحْزُنُهُمُ الْفَزَعُ الْاَکْبَرُ وَ تَتَلَقّٰهُمُ الْمَلٰٓئِکَۃُ ؕ هٰذَا یَوْمُکُمُ الَّذِیْ کُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ ﴿۱۰۳﴾




উচ্চারণ: লা-ইয়াহযুনুহুমুল ফাযা‘উল আকবারু ওয়া তাতালাক্কা-হুমুল মালাইকাতু হা-যাইয়াওমুকুমুল্লাযী কুনতুম তূ‘আদূ ন।




আল বায়ান: মহাভীতি তাদেরকে পেরেশান করবে না। আর ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলবে, ‘এটাই তোমাদের সেই দিন, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল’।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১০৩. মহাভীতি(১) তাদেরকে চিন্তান্বিত করবে না এবং ফিরিশতাগণ তাদেরকে অভ্যর্থনা করবে এ বলে, এ তোমাদের সে দিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।




তাইসীরুল ক্বুরআন: মহা ত্রাস তাদেরকে চিন্তাযুক্ত করবে না, আর ফেরেশতাগণ তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে (এই কথা বলে যে), ‘এটাই তোমাদের দিন যার ওয়া‘দা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।




আহসানুল বায়ান: (১০৩) মহাভীতি[1] তাদেরকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করবে না এবং ফিরিশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে (এবং বলবে), ‘এ তোমাদের সেই দিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল।’



মুজিবুর রহমান: মহাভীতি তাদেরকে বিষাদ ক্লিষ্ট করবেনা এবং মালাইকারা তাদেরকে অভ্যর্থনা করবে এই বলেঃ এই তোমাদের সেই দিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।



ফযলুর রহমান: (কেয়ামতের) সবচেয়ে বড় আতংকও তাদেরকে চিন্তিত করবে না। আর ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে। (তারা বলবে,) “এই তো তোমাদের সেই দিন, (দুনিয়াতে) তোমাদেরকে যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত।”



মুহিউদ্দিন খান: মহা ত্রাস তাদেরকে চিন্তান্বিত করবে না এবং ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা করবেঃ আজ তোমাদের দিন, যে দিনের ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।



জহুরুল হক: ভয়ংকর আতঙ্ক তাদের বিষাদগ্রস্ত করবে না, আর ফিরিশ্‌তারা তাদের সঙ্গে মুলাকাত করবে -- "এই হচ্ছে তোমাদের দিন যে সন্বন্ধে তোমাদের ওয়াদা করা হয়েছিল।"



Sahih International: They will not be grieved by the greatest terror, and the angels will meet them, [saying], "This is your Day which you have been promised" -



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ১০৩. মহাভীতি(১) তাদেরকে চিন্তান্বিত করবে না এবং ফিরিশতাগণ তাদেরকে অভ্যর্থনা করবে এ বলে, এ তোমাদের সে দিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।


তাফসীর:

(১) ইবনে আব্বাস বলেনঃ (الْفَزَعُ الْأَكْبَرُ) বা “মহাভীতি” বলে শিঙ্গার ফুঁৎকার বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] যার ফলে সব মৃত জীবিত হয়ে হিসাব-নিকাশের জন্যে উত্থিত হবে। [ফাতহুল কাদীর] কারও কারও মতে শিঙ্গার প্রথম ফুঁৎকার বোঝানো হয়েছে। আবার কারও মতে, মৃত্যুর সময় বোঝানো হয়েছে। কারও কারও মতে, যখন মানুষকে জাহান্নামের দিকে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। কারও কারও মতে, যখন জাহান্নামীদের উপর আগুন বাস্তবায়ন করা হবে। কারও কারও মতে যখন মৃত্যুকে যাবাই করা হবে। [কুরতুবী] তবে দ্বিতীয় ফুৎকার হওয়াটাই সবচেয়ে বেশী প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। [ফাতহুল কাদীর]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (১০৩) মহাভীতি[1] তাদেরকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করবে না এবং ফিরিশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে (এবং বলবে), ‘এ তোমাদের সেই দিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল।’


তাফসীর:

[1] ‘মহাভীতি’ বলতে মৃত্যু বা ইস্রাফীল (আঃ)-এর শিঙ্গায় ফুৎকারের সময় অথবা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে মৃত্যুকে যবেহ করার সময় সৃষ্ট ভীতিকে বুঝানো হয়েছে। তবে ইস্রাফীলের শিঙ্গায় ফুৎকারের সময় এবং কিয়ামত কায়েম হওয়ার সময় সৃষ্ট ভীতিই পূর্বাপর আলোচনার বেশী নিকটবর্তী।


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৯৮-১০৩ নং আয়াতের তাফসীর:



উক্ত আয়াতগুলোতে কাফির-মুশরিক ও তাদের বাতিল মা‘বূদেগুলো জাহান্নামের ইন্ধন হবে, পক্ষান্তরে মু’মিনরা জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।



আল্লাহ তা‘আলা কাফির-মুশরিকদেরকে লক্ষ্য করে বলছেন: তোমরা এবং তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ছাড়া যাদের ইবাদত কর তারা সবাই জাহান্নামের ইন্ধন হবে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করবে, সেখান থেকে কোনদিন বের হতে পারবে না। মুশরিকদের সাথে তাদের মা‘বূদদেরকে জাহান্নামে দেয়ার কারণ হল যাতে তারা বুঝতে পারে তারা যাদের ইবাদত করত তারা প্রকৃত মা‘বূদ নয়, তারা যদি প্রকৃত মা‘বূদ হত তাহলে তাদের সাথে আজ জাহান্নামে থাকত না, বরং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করত। বলা হয় এ আয়াতটি মক্কার মুশরিকদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। তারা লাত, মানাত, উযযা ইত্যাদি পাথরের মূর্তির ইবাদত করত। এরা ছিল জড় ও জ্ঞানহীন। আয়াতটি তাদের ব্যাপারে নাযিল হলেও পৃথিবীর সকল যুগের সকল মুশরিকদের জন্য তা প্রযোজ্য।



আর সেথায় কঠিন আযাবের কারণে তারা আর্তনাদ করবে এবং এ কঠিন আর্তনাদের কারণে তারা সেখানে কিছুই শুনতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:



(وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلٰي وُجُوْهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّ)



“ক্বিয়ামাতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় অন্ধ, বোবা ও বধির করে।” (সূরা ইসরা ১৭:৯৭)



কিন্তু ঐসকল মা‘বূদ জাহান্নামে যাবে না যারা তাদের ইবাদত করার নির্দেশ দেয়নি এবং মানুষ তাদের ইবাদত করুক এতে তারা সন্তুষ্ট নয়। বরং তারা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। যেমন ঈসা (عليه السلام), উযাইর ও ফেরেশতাসহ অন্যান্য ওলী-আওলিয়া। এরা আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের বাণীর শামিল।



পক্ষান্তরে যাদের সৌভাগ্যের ব্যাপারে পূর্বেই ফায়সালা হয়ে গিয়েছিল যে, তারা দুনিয়াতে ভাল কাজ করবে সে সকল ব্যক্তিরা জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবে, সেখানে প্রবেশ করবে না। এমনকি তারা জাহান্নামের শব্দও শুনতে পাবে না, বরং জান্নাতে তারা যা কিছু মন চাইবে তাই পাবে।



কিয়ামতের দিন যখন মানুষ মহাভয়ে আতঙ্কিত হয়ে যাবে, জাহান্নাম দেখে ভয় পাবে তখন মু’মিনদের কোন দুশ্চিন্তা হবে না। বরং সকল প্রকার চিন্তামুক্ত থাকবে, রহমতের ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলবে: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “নিশ্চয়ই যারা বলে: আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর এর ওপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলে: তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও। আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে; সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা চাইবে। এটা হল ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন।” (সূরা হামীম সাজদাহ ৪১:৩০-৩২)



আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:



(الَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَا۬ئِكَةُ طَيِّبِيْنَ يَقُوْلُوْنَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ)



“ফেরেশ্তাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়। তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর‎।’’ (সূরা নাহল ১৬:৩২)



সুতরাং আমরা যদি জান্নাতের আশা করি তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে সৎ আমল করতে হবে আর অসৎ আমল পরিহার করতে হবে, অন্যথায় জাহান্নামে জ্বলতে হবে।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. মুশরিকরা ও তাদের বাতিল মা‘বূদরা সবাই জাহান্নামে যাবে এবং তাতে পুড়বে।

২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ থাকলে কিয়ামতের দিন মুশরিকরা রক্ষা পেত।

৩. কিয়ামতের দিন যখন কাফির-মুশরিকরা ভয় পাবে তখন ঈমানদারদের কোন ভয় থাকবে না।

৪. কারা দুনিয়াতে ভাল আমল করবে সে সম্পর্কে পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা জানেন।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৯৮-১০৩ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা মক্কাবাসী কুরায়েশ মুশরিকদেরকে সম্বোধন করে বলছেনঃ তোমরা ও তোমাদের উপাস্য মূর্তিগুলি জাহান্নামের আগুনের ইন্ধন হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ওর ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।” হাবশী ভাষায় (আরবী) শব্দকে (আরবী) বলা হয়, যার অর্থ হলো ইন্ধন বা খড়ি। এমনকি একটি কিরআতে বা পঠনে (আরবী) এর স্থলে (আরবী) রয়েছে।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর সেগুলি তো 'জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে। তারা যদি মা'রূদ হতো তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করতো না। তাদের সবাই তাতে স্থায়ী হবে। সেথায় থাকবে তাদের আর্তনাদ। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “ সেথায় তাদের জন্যে থাকবে আর্তনাদ ও চীৎকার।` সেথায় তারা (এই আর্তনাদ ও চীৎকার ছাড়া) কিছুই শুনতে পাবে না। হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন শুধু মুশরিকরাই জাহান্নামে রয়ে যাবে তখন তাদের আগুনের বাসে বন্দী করে দেয়া হবে। তাতে থাকবে আগুনের পেরেক। ওর মধ্যে অবস্থান করে প্রত্যেকেই মনে করবে যে, জাহান্নামে সে ছাড়া আর কেউ নেই।` অতঃপর তিনি- (আরবী) এই আয়াতটি পাঠ করেন। (এটা মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম ইবনু জারীরও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন)

(আরবী) দ্বারা করুণা ও সৌভাগ্য বুঝানো হয়েছে। জাহান্নামীদের এবং তাদের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তাআলা এখন সৎ লোক ও তাদের পুরস্কারের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেনঃ যাদের জন্যে আমার নিকট হতে পূর্ব হতে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে ঐ জাহান্নাম হতে দূরে রাখা হবে। তাদের সৎ আমলের কারণে সৌভাগ্য তাদের অভ্যর্থনার জন্যে পূর্ব হতেই প্রস্তুত ছিল। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “সৎকর্মশীলদের জন্যে উত্তম প্রতিদান রয়েছে এবং অতিরিক্ত প্রতিদানও বটে।` (১০:২৬) আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “উত্তম কাজের জন্যে উত্তম পুরস্কার ছাড়া আর কি হতে পারে? (৫৫:৬০) তাদের দুনিয়ার আমল ছিল ভাল, তাই তারা আখেরাতে পুরস্কার ও উত্তম বিনিময় লাভ করলো। আর শাস্তি থেকে রক্ষা পেলো ও আল্লাহর করুণা প্রাপ্ত হলো।

তাদেরকে জাহান্নাম হতে এতো দূরে রাখা হবে যে,তারা ওর ক্ষীণতর শব্দও শুনবে না এবং জাহান্নামীদেরকে জ্বলতে পুড়তেও দেখতে পাবে না। পুলসিরাতের উপর দুখীদেরকে বিষাক্ত সাপে দংশন করবে এবং ওটা হিসৃহিস্ শব্দ করবে। জান্নাতীরা এই শব্দও শুনতে পাবে না। তাদেরকে কষ্ট ও বিপদ আপদ থেকে দূরে রাখা হবে শুধু এটাই নয়, বরং সেখানে তারা তাদের মন যা চায় চিরকাল ভোগ করবে। বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত আলী (রাঃ) (আরবী) (যাদের জন্য আমার নিকট হতে পূর্ব থেকে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে তা হতে (জাহান্নাম হতে) দূরে রাখা হবে) এই আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেনঃ “আমি, ওমর (রাঃ), উছমান (রাঃ) এই লোকদেরই অন্তর্ভুক্ত।” অথবা তিনি হযরত সা’দের (রাঃ) নাম নিয়েছিলেন। এমন সময় নামাযের জন্যে তাকবীর দেয়া হয় এবং তিনি। (আরবী) এ উক্তিটি পাঠরত অবস্থায় স্বীয় চাদরখানা টানতে টানতে দাড়িয়ে যান। (এটা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত উছমান (রাঃ) ও তাঁর সঙ্গীরা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এই লোকগুলিই আল্লাহর বন্ধু। বিদ্যুত অপেক্ষাও দ্রুত গতিতে তারা পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে কাফিররা হাঁটুর ভরে পড়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা ঐ বুযর্গ ব্যক্তিদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা আল্লাহ ভক্ত ছিলেন এবং মুশরিকদের প্রতি ছিলেন অসন্তুষ্ট। কিন্তু তাদের পরবর্তী লোকেরা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের পূজা শুরু করে দিয়েছিল। যেমন হযরত উযায়ের (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ), ফেরেশতা মণ্ডলী, সূর্য, চন্দ্র, হযরত মারইয়াম (আঃ) ইত্যাদি।

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা আবদুল্লাহ ইবনু যাবআ’রী নবীর (সঃ) নিকট আগমন করে এবং বলতে শুরু করেঃ “আপনি ধারণা করছেন যে, আল্লাহ তাআলা (আরবী) এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেছেন। যদি এটা সত্য হয় তবে কি সূর্য, চন্দ্র, ফেরেশতা মণ্ডলী, হযরত উযায়ের (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) প্রভৃতি সবাই আমাদের মূর্তিগুলির সাথে জাহান্নামে চলে যাবে?” তার এই প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ তাআলা (আরবী) (৪৩:৫৭-৫৮) এই আয়াত দুটি অবতীর্ণ করেন। এরপর তিনি (আরবী) এই আয়াত নাযিল করেন। (এটা আবুবকর ইবনু মিরদুওয়াই (রঃ) বর্ননা করেছেন)

একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) ওয়ালীদ ইবনু মুগীরার সাথে মসজিদে বসে ছিলেন। এমন সময় নায়র ইবনু হারিছ তথায় আগমন করে। ঐ সময় মসজিদে আরো বহু কুরায়েশও বিদ্যমান ছিল। নাহ্র ইবনু হারিছ। রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে কথা বলছিল। কিন্তু সে নিরুত্তর হয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবী) হতে (আরবী) পর্যন্ত আয়াতগুলি পাঠ করেন। যখন তিনি ঐ মজলিস হতে উঠে চলে যান তখন আবদুল্লাহ ইবনু যাবআ’রী আগমন করে। লোকেরা তাকে বলেঃ আজ নাফর ইবনু হারিস রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে আলাপ-আলোচনা করেছে কিন্ত শেষে একেবারে নিরুত্তর হয়ে গেছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আমাদের সম্পর্কে একথা বলে উঠে গেছেন যে, আমরা এবং আমাদের এই উপাস্য দেবতারা সবাই জাহান্নামের আগুনের ইন্ধন হয়ে যাবো।” তাদের এই কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবন যাবআ’রী বলেঃ “আমি থাকলে তাঁকে উত্তর দিতাম যে, আমরা ফেরেশতাদের পূজা করে থাকি, ইয়াহুদীরা উযায়েরের (আঃ) পূজা করে এবং খৃস্টানরা ঈসার (আঃ) পূজা করে। তাহলে এরা সবাই জাহান্নামে যাবেন। তার এই উত্তর সবারই খুব পছন্দ হয়। রাসূলুল্লাহর (সঃ) সামনে এটা বর্ণনা করা হলে তিনি বলেনঃ “যে নিজের ইবাদত করিয়েছে সে ইবাদতকারীদের সাথে জাহান্নামে যাবে। কিন্তু এই বুযুর্গ ব্যক্তিরা নিজেদের ইবাদত করান নাই। আসলে তো এই লোকগুলি তাঁদের নয়, বরং শয়তানদের পূজা করছে। শয়তানই তাদেরকে তাদের ইবাদতের পন্থা হিসেবে বাতলিয়ে দিয়েছে। তাঁর জবাবের সাথে সাথেই আল্লাহ তাআলা জবাব হিসাবে পরবর্তী আয়াত (আরবী) অবতীর্ণ করেন। সুতরাং অজ্ঞ লোকেরা যে সব সৎ লোকের উপাসনা করতো তাঁরা পৃথক হয়ে গেলেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদের মধ্যে যে বলেঃ তিনি (আল্লাহ) ছাড়া আমিই মাবুদ, তার প্রতিফল জাহান্নাম এবং এই ভাবেই আমি অত্যাচারীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।” হযরত ঈসার (আঃ) ব্যাপারে তাদের তর্ক-বিতর্কের কারণে আল্লাহ তাআলা নিম্নের আয়াতগুলি অবতীর্ণ করেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন মারইয়াম তনয়ের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন তোমাদের সম্প্রদায় শোর গোল শুরু করে দেয়। তারা বলেঃ আমাদের দেবতাগুলি শ্রেষ্ঠ, না ঈসা (আঃ)? এরা তো বাক বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে একথা বলে। বস্তুত এরা তো এক বিতণ্ডাকারী সম্প্রদায়। সে তো ছিলে আমারই এক বান্দা, যার উপর আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং তাকে করেছিলাম বানী ইসরাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত। আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের মধ্য হতে ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হতো। ঈসা (আঃ) তো কিয়ামতরে নিদর্শন; সুতরাং তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ পোষণ করো না এবং আমাকে অনুসরণ কর। এটাই সরল পথ।” (৪৩:৫৭-৬১)

ইবনু যাবআ’রী বড়ই ভুল করেছিল। কেননা, এই আয়াতে সম্বোধন করা হয়েছে মক্কাবাসী কাফিরদেরকে এবং উক্তি করা হয়েছে তাদের প্রতিমা ও পাথরগুলি সম্পর্কে যেগুলির তারা আল্লাহকে ছেড়ে ইবাদত করতো। এ উক্তি হযরত ঈসা (আঃ) প্রভৃতি পবিত্র ও একত্ববাদী লোকদের সম্পর্কে নয়। তাঁরা তো গায়রুল্লাহর ইবাদত হতে মানুষকে বিরত রাখতেন!

ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেন যে, এখানে যে (আরবী) শব্দটি রয়েছে তা আরবে নির্জীব ও বিবেকহীনদের জন্যে এসে থাকে। এই ইবনু যাবআ’রী এর পরে মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। সে প্রসিদ্ধ কবিদের একজন ছিল। প্রথমতঃ সে মুসলমান হওয়ার পর সে বড়ই ক্ষমাপ্রার্থী হয়।

মহান আল্লাহ বলেনঃ মহা-ভীতি তাদেরকে বিষাদষ্টি করবে না। অর্থাৎ মৃত্যুর ভয়, শিঙ্গার ফুৎকারের আতংক, জাহান্নামীদের জাহান্নামে প্রবেশের সময়ের ভীতি বিহবলতা এবং জান্নাতী ও জাহান্নামীদের মাঝে মৃত্যুকে যবাহ্ করে দেয়ার আতংক ইত্যাদি কিছুই তাদের থাকবে না। তারা চিন্তা ও দুঃখ হতে বহু দূরে থাকবে। তারা হবে পুরোপুরি ভাবে উৎফুল্ল ও আনন্দিত। অসন্তুষ্টির চিহ্নমাত্র তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হবে না। ফেরেশতা মণ্ডলী তাদেরকে অভ্যর্থনা করে বলবেঃ এই তোমাদের সেই দিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।