আল কুরআন


সূরা আন-নাহাল (আয়াত: 7)

সূরা আন-নাহাল (আয়াত: 7)



হরকত ছাড়া:

وتحمل أثقالكم إلى بلد لم تكونوا بالغيه إلا بشق الأنفس إن ربكم لرءوف رحيم ﴿٧﴾




হরকত সহ:

وَ تَحْمِلُ اَثْقَالَکُمْ اِلٰی بَلَدٍ لَّمْ تَکُوْنُوْا بٰلِغِیْهِ اِلَّا بِشِقِّ الْاَنْفُسِ ؕ اِنَّ رَبَّکُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ ۙ﴿۷﴾




উচ্চারণ: ওয়া তাহমিলুআছকা-লাকুম ইলা-বালাদিল লাম তাকূনূবা-লিগীহি ইল্লা-বিশিক্কিল আনফুছি ইন্না রাব্বাকুম লারাঊফুর রাহীম।




আল বায়ান: আর এগুলো তোমাদের বোঝা বহন করে এমন দেশে নিয়ে যায়, ভীষণ কষ্ট ছাড়া যেখানে তোমরা পৌঁছতে সক্ষম হতে না। নিশ্চয় তোমাদের রব দয়াশীল, পরম দয়ালু।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৭. আর তারা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে যেখানে প্রাণান্ত কষ্ট ছাড়া তোমরা পৌছতে পারতে না(১)। তোমাদের রব তো অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।(২)




তাইসীরুল ক্বুরআন: আর এগুলো তোমাদের ভার বোঝা বহন ক’রে এমন স্থান পর্যন্ত নিয়ে যায়, প্রাণান্তকর ক্লেশ ছাড়া যেখানে তোমরা পৌঁছতে পারতে না, তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই বড়ই দয়ার্দ্র, বড়ই দয়ালু।




আহসানুল বায়ান: (৭) আর ওরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় দূর দেশে; যেথায় প্রাণান্তকর কষ্ট ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না; তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই চরম স্নেহশীল, পরম দয়ালু।



মুজিবুর রহমান: আর ওরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় দূরদেশে যেখানে প্রাণান্ত ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতেনা; তোমাদের রাব্ব অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।



ফযলুর রহমান: এরা তোমাদের বোঝা (মালামাল) এমন অঞ্চলে বয়ে নেয় যেখানে তোমরা প্রাণান্তকর কষ্ট ব্যতীত পৌঁছাতে পারতে না। তোমাদের প্রভু অবশ্যই অনুগ্রহশীল, পরম দয়ালু।



মুহিউদ্দিন খান: এরা তোমাদের বোঝা এমন শহর পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যায়, যেখানে তোমরা প্রাণান্তকর পরিশ্রম ব্যতীত পৌছাতে পারতে না। নিশ্চয় তোমাদের প্রভু অত্যন্ত দয়াদ্র, পরম দয়ালু।



জহুরুল হক: আর তারা তোমাদের বোঝা বয়ে নেয় তেমন দেশে যেখানে তোমরা পৌঁছুতে পারতে না নিজেদেরকে অত্যন্ত কষ্ট না দিয়ে। নিঃসন্দেহ তোমাদের প্রভু তো পরম স্নেহময়, অফুরন্ত ফলদাতা।



Sahih International: And they carry your loads to a land you could not have reached except with difficulty to yourselves. Indeed, your Lord is Kind and Merciful.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৭. আর তারা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে যেখানে প্রাণান্ত কষ্ট ছাড়া তোমরা পৌছতে পারতে না(১)। তোমাদের রব তো অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।(২)


তাফসীর:

(১) এখানে এসব জন্তুর আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকার বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, এগুলো তোমাদের ভারী জিনিষপত্রকে দূর-দূরান্তের শহরে পৌছে দেয়, যেখানে তোমাদের এবং তোমাদের জিনিষপত্রের পৌছা প্রাণান্তকর পরিশ্রম ব্যতীত সম্ভবপর নয়। উট ও গরু বিশেষভাবে মানুষের এ সেবা বিরাটাকারে সম্পন্ন করে থাকে। কারণ, এমনও অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে এসব নবাবিস্কৃত যান-বাহন অকেজো হয়ে পড়ে। এরূপ ক্ষেত্রে মানুষ বাধ্য হয়ে এসব জন্তুকে আজো কাজে লাগায়। [এ ব্যাপারে আরো দেখুন সূরা আল-মু'মিনূনঃ ২১, ২২, গাফেরঃ ৭৯–৮১]


(২) অর্থাৎ আল্লাহ যেহেতু দয়ালু ও রহমতের আধার তাই তিনি তোমাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে এগুলোকে সৃষ্টি করে তোমাদের করায়ত্ব করে দিয়েছেন। [ইবন কাসীর] এ ব্যাপারে কুরআনের অন্যান্য স্থানেও উল্লেখ করা হয়েছে। [দেখুনঃ সূরা আয-যুখরুফঃ ১২–১৪]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৭) আর ওরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় দূর দেশে; যেথায় প্রাণান্তকর কষ্ট ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না; তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই চরম স্নেহশীল, পরম দয়ালু।


তাফসীর:

-


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৫-৭ নং আয়াতের তাফসীর:



আল্লাহ তা‘আলা যে সকল চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন এবং ওগুলো থেকে মানুষ বিভিন্ন উপকার লাভ করছে সে নেয়ামতের বিবরণ দিচ্ছেন। যেমন উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। সূরা আন‘আমের ১৪৩ নং আয়াতে আট প্রকার জন্তুর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। এসব জন্তু থেকে মানুষ বিভিন্ন উপকার নেয়; যেমন-১. লোম থেকে মোটা কাপড় তৈরি করে শীত নিবারক পোশাক বানায়। ২. গাভীর পেট থেকে স্বচ্ছ দুধ পাওয়া যায়, ৩. জবাই করে গোশত খাওয়া যায়, ৪. চামড়া দিয়ে জুতোসহ অনেক উপকার নেয়া হয়। ৫. এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বোঝা বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়। আগেকার দিনের প্রধান বাহন ছিল জন্তু, বিশেষ করে মরুর দেশে উট ছাড়া কোন বাহন ছিল না। সকল ধরণের বোঝা বহন ও সওয়ারী হিসেবে একমাত্র মাধ্যম ছিল এসব জন্তু। ৬. তাদের গোবর মানুষের জ্বালানী ও ক্ষেতের সার হিসেবে উপকারে আসে। ৭. গরু দিয়ে হাল চাষ করাসহ আরো অনেক উপকার চতুষ্পদ জন্তুতে আল্লাহ তা‘আলা রেখে দিয়েছেন।



আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَاِنَّ لَکُمْ فِی الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةًﺚ نُسْقِیْکُمْ مِّمَّا فِیْ بُطُوْنِھَا وَلَکُمْ فِیْھَا مَنَافِعُ کَثِیْرَةٌ وَّمِنْھَا تَاْکُلُوْنَﭤﺫ وَعَلَیْھَا وَعَلَی الْفُلْکِ تُحْمَلُوْنَﭥ)



“এবং তোমাদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় আছে চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে; তোমাদেরকে আমি পান করাই তাদের উদরে যা আছে তা হতে এবং তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর উপকারিতা; তোমরা তা হতে আহার কর‎, এবং তার পিঠে ও নৌযানে তোমাদেরকে আরোহন করানো হয়।” (সূরা মু’মিনুন ২৩:২১-২২)



আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: “যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেন এমন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু যাতে তোমরা আরোহণ কর। যাতে তোমরা তাদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের প্রতিপালকের নেয়ামত স্মরণ কর যখন তোমরা তার ওপর স্থির হয়ে বস; এবং বল পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা সমর্থ ছিলাম না এদেরকে বশীভূত করার। আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:১২-১৪)



আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:



(وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً ط نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِه۪ مِنْۭ بَيْنِ فَرْثٍ وَّدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَآئِغًا لِّلشّٰرِبِيْنَ) ‏



“অবশ্যই গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা নিহিত রয়েছে। তাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুগ্ধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।” (সূরা নাহল ১৬:৬৬)



হাদীসে এসেছে:



রাসূলুল্লহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: একদা জনৈক ব্যক্তি তার একটি গরুকে পিঠে বোঝা বহন করিয়ে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গরু তার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে: আমাকে এ জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। বরং আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে চাষাবাদের জন্য। লোকটি বলল: সুবহানাল্লাহ, আশ্চর্যের বিষয়, গরু কথা বলছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন: এ কথা আমি, আবূ বকর ও উমার < বিশ্বাস করি। (সহীহ বুখারী হা: ৫১৮৯, সহীহ মুসলিম হা: ২৪৪৮)



جَمَالٌ অর্থাৎ এসব জন্তু লালন পালন করা, এদের মালিক হওয়া মানুষের কাছে এক প্রকার সৌন্দর্য। تُرِيْحُوْنَ যখন সন্ধ্যায় চারণভূমি থেকে বাড়িতে নিযে এসো, تَسْرَحُوْنَ যখন সকালে চারণভূমিতে নিয়ে যাও।



সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও করুণা যে, তিনি এসব জন্তু মানুষের উপকারার্থেই সৃষ্টি করেছেন। কোন বস্তুই অকল্যাণে সৃষ্টি করেননি এবং এগুলোকে মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. চতুষ্পদ জন্তু মানুষের উপকারের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

২. গরু চাষাবাদ ও গোশত খাওয়ার জন্য, বোঝা বহনের জন্য নয়।

৩. উট থেকে বোঝা বহন ও খাওয়া উভয় উপকার নেয়া যায়।

৪. এসব নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা মানুষের একান্ত কর্তব্য।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ৫-৭ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআলা যে চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন এবং ওগুলি থেকে যে মানুষ বিভিন্ন প্রকারের উপকার লাভ করছে সেই নিয়ামতেরই তিনি বর্ণনা দিচ্ছেন। যেমন উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি। যার বিস্তারিত বিবরণ তিনি সূরায়ে আন্ আমের আয়াতে আট প্রকার দ্বারা দিয়েছেন। মানুষ ওগুলির পশম দ্বারা গরম পোশাক তৈরী করে, দুধ পান করে, গোশত খায় ইত্যাদি। সন্ধ্যাকালে চরণ শেষে যখন ওগুলি ভরা পেটে মোটা স্তন ও উঁচু কুঁজসহ গৃহে ফিরে আসে। তখন ওগুলিকে কতই না সুন্দর দেখায়।

মহান আল্লাহ বলেনঃ “ওরা তোমাদের ভারী ভারী বোঝা পিঠের উপর বহন করে এক শহর হতে অন্য শহরে নিয়ে যায়। ওদের সাহায্য না পেলে তথায় পৌঁছতে তোমাদের ওষ্ঠাগত প্রাণ হয়ে যেতো। হজ্জ, উমরা, জিহাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির জন্যে সফর করার কাজে ঐ গুলিই ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ ঐ জন্তু গুলিই তোমাদেরকে ও তোমাদের বোঝাগুলি বহন করে নিয়ে যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেনঃ “এই চতুষ্পদ জন্তুগুলির মধ্যেও শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। ওগুলির পেট থেকে আমি তোমাদের দুগ্ধ পান করিয়ে থাকি এবং ওগুলি দ্বারা বহু উপকার সাধন করি। তোমরা ওগুলির গোশতও ভক্ষণ কর এবং ওগুলির উপর সওয়ারও হও। সমুদ্রে ভ্রমণের জন্যে আমি নৌকাও বানিয়েছি।” অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা ওগুলির উপর আরোহণ কর এবং (দুধ, গোশত) ভক্ষণ কর। আর সেগুলিতে রয়েছে তোমাদের জন্যে আরো নানা প্রকারের উপকার এবং যেন তোমরা ওগুলি দ্বারা তোমাদের মনের চাহিদা পূরণ কর। তোমাদেরকে তিনি নৌকাতেও আরোহণ করিয়েছেন এবং বহুকিছু নিদর্শন দেখিয়েছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোন্ নিদর্শনকে অস্বীকার করবে?” এখানেও মহান আল্লাহ তাঁর নিয়ামত গুলি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেনঃ “তিনি তোমাদের সেই প্রতিপালক যিনি এই চতুষ্পদ জন্তুগুলিকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন। তিনি তোমাদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল ও দয়ালু।” যেমন সূরায়ে ইয়াসীনে তিনি বলেছেনঃ “তারা কি লক্ষ্য করে না যে, নিজ হাতে সৃষ্ট বস্তুগুলির মধ্যে তাদের জন্যে আমি সৃষ্টি করেছি চতুষ্পদ জন্তু এবং তারাই ওগুলির অধিকারী?” অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “ঐ আল্লাহ তাআ’লাই তোমাদের জন্যে নৌকা বানিয়েছেন এবং চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা ওগুলির উপর সওয়ার হও এবং তোমাদের প্রতিপালকের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং বলঃ “তিনি পবিত্র যিনি এগুলিকে আমাদের অনুগত করে দিয়েছেন, অথচ আমাদের কোন ক্ষমতা ছিল না, আমরা বিশ্বাস করি যে, তাঁরই নিকট আমরা ফিরে যাবো।” হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবি) এর ভাবার্থ কাপড়। আর (আরবি) দ্বারা পানাহার করা, বংশ লাভ করা, সওয়ার হওয়া, গোশত খাওয়া এবং দুধ পান করা ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।