সূরা আল-হিজর (আয়াত: 5)
হরকত ছাড়া:
ما تسبق من أمة أجلها وما يستأخرون ﴿٥﴾
হরকত সহ:
مَا تَسْبِقُ مِنْ اُمَّۃٍ اَجَلَهَا وَ مَا یَسْتَاْخِرُوْنَ ﴿۵﴾
উচ্চারণ: মা-তাছবিকুমিন উম্মাতিন আজালাহা-ওয়ামা-ইয়াছতা’খিরূন।
আল বায়ান: কোন জাতিই তাদের সুনির্ধারিত সময় থেকে আগে বাড়তে পারে না আর পিছাতেও পারে না।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৫. কোন জাতি তার নির্দিষ্ট কালকে ত্বরান্বিত করতে পারে না, বিলম্বিতও করতে পারে না।
তাইসীরুল ক্বুরআন: কোন জাতিই তাদের নির্দিষ্ট কালকে অগ্র-পশ্চাৎ করতে পারে না।
আহসানুল বায়ান: (৫) কোন জাতি তার নির্দিষ্ট কালকে তরান্বিত করতে পারে না এবং বিলম্বিতও করতে পারে না।[1]
মুজিবুর রহমান: কোন জাতি তার নির্দিষ্ট কালকে ত্বরান্বিত করতে পারেনা এবং বিলম্বিতও করতে পারেনা।
ফযলুর রহমান: কোন জাতি তার নির্দিষ্ট সময়কাল আগাতে কিংবা পিছাতে পারে না।
মুহিউদ্দিন খান: কোন সম্প্রদায় তার নির্দিষ্ট সময়ের অগ্রে যায় না এবং পশ্চাতে থাকে না।
জহুরুল হক: কোনো জাতি তার নির্ধারিত কাল ত্বরান্বিত করতে পারবে না, আর তারা বিলন্বিত করতে পারবে না।
Sahih International: No nation will precede its term, nor will they remain thereafter.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৫. কোন জাতি তার নির্দিষ্ট কালকে ত্বরান্বিত করতে পারে না, বিলম্বিতও করতে পারে না।
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৫) কোন জাতি তার নির্দিষ্ট কালকে তরান্বিত করতে পারে না এবং বিলম্বিতও করতে পারে না।[1]
তাফসীর:
[1] যখন কোন জনপদকে তাদের পাপের জন্য ধ্বংস করি, তখন হঠাৎ করি না; বরং তাদের জন্য একটা সময় নিদিষ্ট করে থাকি, সেই সময় পর্যন্ত তাদের অবকাশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই নির্দিষ্ট সময় এসে গেলেই তাদেরকে ধ্বংস করে দিই। সুতরাং সেই সময়কে তাদের জন্য আগা-পিছা করা হয় না।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: নামকরণ:
الْحِجْرِ আল হিজর হল হিজায ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় একটি জনবসতি। সালেহ (عليه السلام)-এর জাতি এ এলাকায় বসবাস করত। অত্র সূরার ৮০ নং আয়াতে হিজর শব্দটি উল্লেখ রয়েছে, এখান থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
অত্র সূরার শুরুর দিকে কিয়ামত দিবসে কাফিরদের মনবাসনা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সত্যায়ন স্বরূপ ফেরেশতাদের আগমন দাবী, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক ওয়াহী সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি প্রদান, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ভূ-তত্ত্ববিজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তারপর আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাহ, মানব ও জিন সৃষ্টির উপাদান ও আল্লাহ তা‘আলা এবং ইবলিশ শয়তানের মাঝে কথোপকথনের বিস্তারিত বিবরণ বর্ণিত হয়েছে। সূরার শেষের দিকে ইবরাহীম (عليه السلام)-কে ফেরেশতা কর্তৃক ইসহাকের সুসংবাদ এবং লূত (عليه السلام)-এর জাতিকে ধ্বংসকরণ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে।
১-৫ নং আয়াতের তাফসীর:
الٓرٰ - (আলিফ-লাম-রা) এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর সঠিক উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন।
প্রথম আয়াতে কিতাব ও কুরআনে মুবীন দ্বারা কুরআনুল কারীমকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قَدْ جَا۬ءَكُمْ مِّنَ اللّٰهِ نُوْرٌ وَّكِتٰبٌ مُّبِيْنٌ)
“আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে।” (সূরা মায়িদাহ ৫:১৫)
এখানেও নূর এবং কিতাবুম মুবীন দ্বারা কুরআনুল কারীমকে বুঝানো হয়েছে। আর আয়াতে কুরআন শব্দটি নাকেরা (অনির্দিষ্ট) ব্যবহার করা হয়েছে কুরআনের মর্যাদা বুঝানোর জন্য।
দ্বিতীয় আয়াতে বলা হচ্ছে, কাফিররা যখন প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবে এবং তারা দেখবে, মুসলিমরা জান্নাতে প্রবেশ করছে, তখন তারা লজ্জিত হবে এবং এ আশা করবে যদি আমরা মুসলিম হতাম।
কিন্তু তখন তাদের এ আশা কোন ফলদায়ক হবে না বরং অতিশয় লজ্জার কারণ হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَوْ تَرٰٓي إِذْ وُقِفُوْا عَلَي النَّارِ فَقَالُوْا يٰلَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِاٰيٰتِ رَبِّنَا وَنَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ)
“তুমি যদি দেখতে পেতে যখন তাদেরকে অগ্নির পার্শ্বে দাঁড় করান হবে এবং তারা বলবে, ‘হায়! যদি আমাদেরকে (পৃথিবীতে) আবার ফিরিয়ে দেয়া হত তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করতাম না এবং আমরা মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।” (সূরা আন‘আম ৬:২৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, তারা বলবে:
(وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰي يَدَيْهِ يَقُوْلُ يٰلَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا)
“জালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ দু’ হাত দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম!” (সূরা ফুরকান ২৫:২৭)
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার উম্মাতের কতক মানুষকে অপরাধের কারণে শাস্তি দেয়া হবে, আল্লাহ তা‘আলা যত দিন চান তারা জাহান্নামে থাকবে, তারপর সেখানে থেকে বের হয়ে আসবে। মুশরিকরা তাদের সাথে হিংসে করে বলবে, তোমরা যে সত্যে বিশ্বাসী ছিলে আজ তা উপকার দিচ্ছে। এভাবে সকল তাওহীদবাদী জাহান্নাম থেকে বের হয়ে যাবে, কেউ বাকি থাকবে না।
(সহীহ, রুহুল মাআনী, অত্র আয়াতের তাফসীর)
এ আফসোস কখন করবে? কেউ কেউ বলেছেন যখন জাহান্নাম দেখতে পাবে তখন এ আফসোস করবে। কেউ বলেছেন যখন তাওহীদবাদীদের জাহান্নাম থেকে বের করা হবে তখন। কেউ বলেছেন, যখন তাদের মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন। কেউ বলেছেন, বেশ কয়েক বার এরূপ আফসোস করবে। তবে সব কথার মূল হল একটাই তা হল, যখন প্রকৃত সত্য দেখতে পাবে ও বুঝতে পারবে। সুতরাং প্রতিটি মানুষের উচিত মৃত্যুর পূর্বেই সৎ আমল করা এবং মন্দ আমল করা থেকে বেঁচে থাকা।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের তিরস্কার ও ধমক দিয়ে বলেন; তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা খেতে থাকুক, ভোগ করতে থাকুক এবং আশা করতে থাকুক, তারা অচিরেই জানতে পারবে তাদের এই ভোগ-বিলাসের পরিণাম কত ভয়াবহ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ تَمَتَّعُوْا فَإِنَّ مَصِيْرَكُمْ إِلَي النَّارِ)
“বল: ‘ভোগ করে নাও, নিশ্চয়ই তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল জাহান্নাম।’’ (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩০)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(كُلُوْا وَتَمَتَّعُوْا قَلِيْلًا إِنَّكُمْ مُّجْرِمُوْنَ)
“তোমরা খাও, আর আনন্দ-ফুর্তি কর অল্প কিছুদিন, প্রকৃতপক্ষে তো তোমরা অপরাধী।” (সূরা মুরসালাত ৭৭:৪৬)
অতএব কাফিররা যতই দুনিয়ার জীবনে আরাম-আয়েশ ও স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করুক, তাতে ধোঁকায় পড়ার কিছু নেই। অচিরেই তাদের উপযুক্ত প্রতিদান দেয়া হবে।
আর আল্লাহ তা‘আলা তাদের অপরাধের কারণে তৎক্ষণাৎ তাদের ধ্বংস না করার কারণ হল এই যে, তিনি তাদের জন্য একটি সময় নির্ধারণ করে রেখেছেন। যদি এ সময় নির্ধারণ করা না থাকত তাহলে তাদের অপরাধের কারণে সাথে সাথে ধ্বংস করে দিতেন। সুতরাং পাপ সংঘটনের সাথে সাথেই শাস্তি না দেয়ার অর্থ এমন নয় যে, তারা শাস্তিপ্রাপ্ত হবে না। বরং তাদেরকে অবকাশ দেয়া হয়ে থাকে, হয় ফিরে আসবে অথবা কঠিন শাস্তির দিকে ধাবিত করা হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফির-মুশরিকরা প্রকৃত অবস্থা জানার পর লজ্জিত হবে এবং আকাক্সক্ষা করবে যদি তারা ইহজীবনে মুসলিম হত।
২. আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারিত সময়ের পূর্বে কোন জাতিকে তাদের অপরাধের কারণে ধ্বংস করেন না।
৩. যারা দুনিয়াতে ভোগ-বিলাসে আছে তারা যে পরকালে নাজাত পাবে এমনটি নয় বরং তার বিপরীতও হতে পারে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ৪-৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি কোন জনপদকে ধ্বংস করেন নাই। যে পর্যন্ত না সেখানে দলীল কায়েম করেছেন এবং নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে। হাঁ, তবে যখন নির্ধারিত সময় এসে যায় তখন এক মুহূর্ত কালও ত্বরান্বিত ও বিলম্বিত করা হয় না। এতে মক্কাবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে যাতে তারা শিরক ধর্মদ্রোহীতা ও রাসূলের (সঃ) বিরুদ্ধাচরণ হতে বিরত থাকে এবং ধ্বংস প্রাপ্ত হওয়ার যোগ্য না হয়।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।