সূরা আল-হিজর (আয়াত: 12)
হরকত ছাড়া:
كذلك نسلكه في قلوب المجرمين ﴿١٢﴾
হরকত সহ:
کَذٰلِکَ نَسْلُکُهٗ فِیْ قُلُوْبِ الْمُجْرِمِیْنَ ﴿ۙ۱۲﴾
উচ্চারণ: কাযা-লিকা নাছলুকুহূফী কুলূবিল মুজরিমীন।
আল বায়ান: এমনিভাবে আমি তা অপরাধীদের অন্তরে সঞ্চার করি।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১২. এভাবেই আমরা অপরাধীদের অন্তরে তা সঞ্চার করি(১),
তাইসীরুল ক্বুরআন: এভাবে আমি এ রকম আচরণ পাপীদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেই।
আহসানুল বায়ান: (১২) এভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে তা সঞ্চার করি। [1]
মুজিবুর রহমান: এভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে তা সঞ্চার করি।
ফযলুর রহমান: এভাবেই আমি পাপীদের অন্তরে এটা (অবিশ্বাস-প্রবণতা) ঢুকিয়ে দেই।
মুহিউদ্দিন খান: এমনিভাবে আমি এ ধরনের আচরণ পাপীদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেই।
জহুরুল হক: এইভাবে আমরা একে অপরাধীদের অন্তরে প্রবেশ করাই।
Sahih International: Thus do We insert denial into the hearts of the criminals.
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ১২. এভাবেই আমরা অপরাধীদের অন্তরে তা সঞ্চার করি(১),
তাফসীর:
(১) সাধারণত অনুবাদক ও তাফসীরকারগণ এর অর্থ করেছেন: আমি তাকে প্রবেশ করাই বা চালাই। এর মধ্যকার (ه) সর্বনামটিকে বিদ্রুপ এর সাথে এবং (তারা এর প্রতি ঈমান আনে না) এর মধ্যকার সর্বনামটিকে এর সাথে সংযুক্ত করেছেন। তারা এর অর্থ এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ “আমি এভাবে এ বিদ্রপকে অপরাধীদের অন্তরে প্রবেশ করিয়ে দেই এবং তারা এ বাণীর প্রতি ঈমান আনে না।” [সা’দী] যদিও ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী এতে কোন ক্রটি নেই, তবুও ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী উভয় সর্বনামই “যিকির” বা বাণীর সাথে সংযুক্ত হওয়াই বেশী নির্ভুল বলে মনে হয়। [ফাতহুল কাদীর]
আরবী ভাষায় (سلك) শব্দের অর্থ হচ্ছে কোন জিনিসকে অন্য জিনিসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া অনুপ্রবেশ করানো, চালিয়ে দেয়া বা গলিয়ে দেয়া। যেমন সুইয়ের ছিদ্রে সূতো গলিয়ে দেয়া হয়। [কুরতুবী] কাজেই এ হিসেবে আয়াতের অর্থ, ঈমানদারদের মধ্যে তো এই “বাণী” হৃদয়ের শীতলতা ও আত্মার খাদ্য হয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু অপরাধীদের অন্তরে তা বারুদের মত আঘাত করে এবং তা শুনে তাদের মনে এমন আগুন জ্বলে ওঠে যেন মনে হয় একটি গরম শলাকা তাদের বুকে বিদ্ধ হয়ে এফোড় ওফোড় করে দিয়েছে। তাদের অন্তরে এ কুরআন ঢুকলেও তা সেখানে স্থান পায় না। সেখান থেকে শুধু মিথ্যারোপই বের হয়। [দেখুন, কুরতুবী]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (১২) এভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে তা সঞ্চার করি। [1]
তাফসীর:
[1] অর্থাৎ, কুফরী ও রসুলদেরকে বিদ্রূপ করা আমি তাদের অন্তরে প্রক্ষিপ্ত করে দিয়েছি। এখানে এই কর্মের সম্পর্ক মহান আল্লাহ নিজের দিকে করেছেন যেহেতু প্রত্যেক জিনিসের সৃষ্টিকর্তা তিনিই। অতএব তাদের এই কর্ম তাদের ক্রমাগত পাপের পরিণতিতে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় প্রকাশ পেয়েছে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: ১০-১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে মূলত দুটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে ১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে, ২. প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল এবং সে জাতির অবাধ্য লোকেরা রাসূলদের সাথে যে আচরণ করেছে তার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। মক্কার কাফির-মুশরিকরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, পাগল, কবি, জ্যোতিষী ও জিন আক্রান্ত ইত্যাদি বলে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করতে লাগল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মানুষ তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। কারণ, তোমার পূর্ববর্তী নাবীদেরকেও অনুরূপভাবে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল এবং তাদেরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করেছিল।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَا حَسْرَةً عَلَي الْعِبَادِ ج مَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ إِلَّا كَانُوْا بِه۪ يَسْتَهْزِئُوْنَ)
“আফসোস বান্দাদের জন্য! তাদের কাছে কখনও এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করেনি।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৩০)
شِيَعِ শব্দটি شيعة এর বহুবচন। অর্থ দল, গোত্র, জাতি ইত্যাদি।
نَسْلُكُ অর্থ বদ্ধমূল করে দেয়া। অর্থাৎ এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা অপরাধীদের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী করা ও নাবীদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা বদ্ধমূল করে দিয়েছেন। এটা তাদের কর্মের ফল, কারণ তাদের কাছে কোন নাবী হিদায়াতের বাণী নিয়ে আগমন করলে তা গ্রহণ করার পরিবর্তে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করত। কাতাদাহ (রহঃ) বলেন: যেমন পূর্ববর্তী জাতির অন্তরে রাসূলদের সাথে বিদ্রƒপ করা ও তাদের নিয়ে ঠাট্টা করা বদ্ধমূল করে দিয়েছিলাম তেমনি মক্কার মুশরিকদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দিয়েছি, ফলে তারা ঈমান আনবে না। সুতরাং পূর্ববর্তীদের ক্ষেত্রে যে রীতি অতীত হয়ে গেছে তথা অবাধ্যতার পরিণামে শাস্তি দেয়া তেমনি তাদের ক্ষেত্রেও সে রীতি প্রযোজ্য হবে।
মক্কার মুশরিকরা অসংখ্য নিদর্শন ও মুজিযাহ দেখার পরেও ঈমান আনবে না, তারই একটি উপমা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি যদি আকাশের দরজা খুলে দিয়ে তাদেরকে উপরে ওঠার সুযোগ করে দিই, তাহলে তারা বলবে আমাদেরকে জাদু করা হয়েছে, আমাদের দৃষ্টিভ্রম করা হয়েছে। আমরা যা দেখছি তা বাস্তব নয়, কল্পনার জগতে রয়েছি। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরকে পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতির মত কুফরী, ভ্রষ্টতা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা ইত্যাদি দিয়ে বদ্ধমূল করে দিয়েছেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকল জাতির নিকটেই সতর্ককারীস্বরূপ রাসূল পাঠানো হয়েছে।
২. রাসূলদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা এবং সত্য বর্জন করা কাফিরদের পুরাতন অভ্যাস।
৩. সঠিক জিনিস জানার পর তা গ্রহণ করার ব্যাপারে ওযর-আপত্তি পেশ করা যাবে না।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ১০-১৩ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) সান্তনা দিয়ে বলছেনঃ “হে নবী (সঃ)! মানুষ তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই কারণ, তোমার পূর্ববর্তী নবীদেরকেও অনুরূপভাবে মিথ্যা প্রতিপন্ন করাহয়েছিল। প্রত্যেক রাসূলকেই তার উম্মতের লোক মিথ্যাবাদী বলেছিল এবং সে তাদের কাছে উপহাসের পাত্র হয়েছিল।
মহান আল্লাহ বলেনঃ হঠকারিতা ও অহংকারের কারণে আমি অপরাধ ও পাপীদের অন্তরে রাসূলদের অবিশ্বাস ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করার খেয়াল জাগিয়ে তুলি। তাতেই তখন তারা মজা ও আনন্দ উপভোগ করে। এখানে মুজরিম বা অপরাধীদের দ্বারা মুশরিকদের বুঝানো হয়েছে। তারা সত্যকে বিশ্বাস করতেই চায় না। আল্লাহ পাক বলেন যে, পূর্ববর্তীদের আচরণ তাদের মধ্যে এসে গেছে। সুতরাং তাদের পরিণাম তাদের পূর্ববর্তীদের মতই হবে। যেমন তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল এবং তাদের নবীরা মুক্তি পেয়েছিলেন ও মু'মিনরা নিরাপত্তা লাভ করেছিল, তেমনই অবস্থা এদেরও হবে এটা তাদের স্মরণ রাখা উচিত। নবীর (সঃ) অনুসরণেই রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ, আর তাঁর বিরুদ্ধাচরণেই রয়েছে উভয় জগতে লাঞ্ছণা ও অপমান।
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।