আল কুরআন


সূরা হূদ (আয়াত: 5)

সূরা হূদ (আয়াত: 5)



হরকত ছাড়া:

ألا إنهم يثنون صدورهم ليستخفوا منه ألا حين يستغشون ثيابهم يعلم ما يسرون وما يعلنون إنه عليم بذات الصدور ﴿٥﴾




হরকত সহ:

اَلَاۤ اِنَّهُمْ یَثْنُوْنَ صُدُوْرَهُمْ لِیَسْتَخْفُوْا مِنْهُ ؕ اَلَا حِیْنَ یَسْتَغْشُوْنَ ثِیَابَهُمْ ۙ یَعْلَمُ مَا یُسِرُّوْنَ وَ مَا یُعْلِنُوْنَ ۚ اِنَّهٗ عَلِیْمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ ﴿۵﴾




উচ্চারণ: আলাইন্নাহুম ইয়াছনূনা সুদূ রাহুম লিইয়াছতাখফূমিনহু আলা-হীনা ইয়াছতাগশূনা ছিয়া-বাহুম ইয়া‘লামুমা-ইউছিররূনা ওয়ামা-ইউ‘লিনূনা ইন্নাহূ‘আলীমুম বিযাতিসসুদূ র।




আল বায়ান: জেনে রাখ, নিশ্চয় তারা তাদের বুক ফিরিয়ে নেয়, যাতে তারা তার থেকে আত্মগোপন করতে পারে। জেনে রাখ, যখন তারা কাপড় আবৃত হয়, তখন তিনি জানেন যা তারা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে। নিশ্চয় তিনি অন্তর্যামী।




আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৫. জেনে রাখ! নিশ্চয় তারা তার কাছে গোপন রাখার জন্য তাদের বক্ষ দ্বিভাঁজ করে। জেনে রাখ! তারা যখন নিজেদেরকে বস্ত্রে আচ্ছাদিত করে তখন তারা যা গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তা জানেন।(১) অন্তরে যা আছে, নিশ্চয় তিনি তা সবিশেষ অবগত।




তাইসীরুল ক্বুরআন: লক্ষ্য কর, এরা নিজেদের বুক ঘুরিয়ে নেয় যাতে তারা তাঁর (অর্থাৎ আল্লাহর) থেকে লুকিয়ে থাকতে পারে। সাবধান! এরা যখন কাপড় দিয়ে নিজেরা নিজেদেরকে ঢেকে নেয়, তখন তারা যা গোপন করে আর প্রকাশ করে তিনি তা জানেন। তাদের মনের গভীরে যা আছে সে বিষয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি অবহিত।




আহসানুল বায়ান: (৫) জেনে রাখ, তারা নিজ নিজ বুক কুঞ্চিত করে, যাতে তাঁর দৃষ্টি হতে লুকাতে পারে।[1] জেনে রাখ, তারা যখন নিজেদের কাপড় (দেহে) জড়ায়, তিনি তখনও সব জানেন যা কিছু তারা গোপন করে এবং যা কিছু প্রকাশ করে। তিনি তো মনের ভিতরের কথাও জানেন।



মুজিবুর রহমান: জেনে রেখ, তারা কুঞ্চিত করে নিজেদের বক্ষকে, যেন নিজেদের কথাগুলি আল্লাহ হতে লুকাতে পারে। সাবধান, তারা যখন কাপড় (নিজেদের দেহে) জড়ায়, তিনি তখনও সব জানেন তারা যা কিছু গোপন করে অথবা প্রকাশ করে। নিশ্চয়ই তিনি অন্তরের কথাও জানেন।



ফযলুর রহমান: জেনে রাখ, তারা তাঁর কাছ থেকে লুকানোর জন্য নিজেদের বুক ঘুরিয়ে রাখে। জেনে রাখ, তারা যখন বস্ত্রাবৃতও হয় তখনও তারা যা গোপন করে আর যা প্রকাশ করে তিনি তা (সব) জানেন। তিনি অন্তরের গোপন বিষয় ভালভাবে অবগত রয়েছেন।



মুহিউদ্দিন খান: জেনে রাখ, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের বক্ষদেশ ঘুরিয়ে দেয় যেন আল্লাহর নিকট হতে লুকাতে পারে। শুন, তারা তখন কাপড়ে নিজেদেরকে আচ্ছাদিত করে, তিনি তখনও জানেন যা কিছু তারা চুপিসারে বলে আর প্রকাশ্যভাবে বলে। নিশ্চয় তিনি জানেন যা কিছু অন্তর সমূহে নিহিত রয়েছে।



জহুরুল হক: সাবধান! নিঃসন্দেহ তারা কি নিজেদের বুক ভাঁজ করেছে তাঁর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার জন্যে? সাবধান! তারা যখন তাদের পোশাকের দ্বারা নিজেদের আবৃত করে, তিনি জানেন যা তারা লুকিয়ে রাখে ও যা তারা প্রকাশ করে। নিঃসন্দেহ বুকের ভেতরে যা আছে সে-সন্বন্ধে তিনি সর্বজ্ঞাতা।



Sahih International: Unquestionably, they the disbelievers turn away their breasts to hide themselves from Him. Unquestionably, [even] when they cover themselves in their clothing, Allah knows what they conceal and what they declare. Indeed, He is Knowing of that within the breasts.



তাফসীরে যাকারিয়া

অনুবাদ: ৫. জেনে রাখ! নিশ্চয় তারা তার কাছে গোপন রাখার জন্য তাদের বক্ষ দ্বিভাঁজ করে। জেনে রাখ! তারা যখন নিজেদেরকে বস্ত্রে আচ্ছাদিত করে তখন তারা যা গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তা জানেন।(১) অন্তরে যা আছে, নিশ্চয় তিনি তা সবিশেষ অবগত।


তাফসীর:

(১) আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, কাফেরগণ সন্দেহ সংশয় করে মুখ লুকিয়ে থাকে আর মনে করে যে, এর মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে আড়াল করতে পারবে। তারা মূলতঃ আল্লাহ থেকে কখনো আড়াল করতে পারবে না। কেননা, আল্লাহ্ তাআলা থেকে কোন কিছুই আড়াল নেই। তাই যত চেষ্টাই করুক না কেন তারা নিজেদের আড়াল করতে পারবে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ “আমরাই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তা আমি জানি।” [সূরা কাফঃ ১৬] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “আর জেনে রাখ যে, তোমাদের অন্তরে যা গোপন আছে আল্লাহ তা জানেন সুতরাং তোমরা তাকে ভয় কর।” [সূরা আল-বাকারাহঃ ২৩৫] অন্য আয়াতে বলেনঃ “তারপর আমরা অবশ্যই জ্ঞানসহ তাদের কাছে তা ব্যক্ত করব, আর আমরা তো অনুপস্থিত ছিলাম না।” [সূরা আল-আরাফঃ ৭] আরও বলেনঃ “আপনি যে কোন অবস্থায় থাকেন এবং আপনি সে সম্পর্কে কুরআন থেকে যা তিলাওয়াত করেন এবং তোমরা যে কোনো কাজ কর, আমি তোমাদের পরিদর্শক—যখন তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অণু পরিমাণও আপনার প্রতিপালকের দৃষ্টির বাইরে নয় এবং তার চেয়ে ক্ষুদ্রতর বা বৃহত্তর কিছুই নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।” [সূরা ইউনুসঃ ৬১]

তবে তারা যে শুধু হক শোনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত তাই নয়। বরং তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর যে বাণী শোনাত তাও না শোনার ভান করত। আর মনে করত যে, এভাবে তারা আল্লাহ থেকে গোপন করছে। কারণ, মক্কায় যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলো তখন সেখানে এমন বহু লোক যারা বিরোধিতায় প্রকাশ্যে তেমন একটা তৎপর ছিল না কিন্তু মনে মনে তার দাওয়াতের প্রতি ছিল চরমভাবে ক্ষুব্ধ ও বিরূপভাবাপন্ন। তারা তাঁকে পাশ কাটিয়ে চলতো। তাঁর কোন কথা শুনতে চাইতো না। কোথাও তাঁকে বসে থাকতে দেখলে পেছন ফিরে চলে যেতো। দূর থেকে তাঁকে আসতে দেখলে মুখ ফিরিয়ে নিতো অথবা কাপড়ের আড়ালে মুখ লুকিয়ে ফেলতো, যাতে তাঁর মুখোমুখি হতে না হয় এবং তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে কথা বলতে শুরু করে না দেন। এখানে এ ধরনের লোকদের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। [তাবারী; বাগভী; সাদী; ফাতহুল কাদীর]

আয়াতের অপর অনুবাদ হচ্ছে, তারা আল্লাহর কাছ থেকে বা রাসূলের কাছ থেকে নিজেদের লুকানোর জন্য মাথা নীচু করে সামনের দিকে ঝুঁকে কাপড় দিয়ে ঢেকে চলে যেত। অথচ যত কাপড় দিয়েই তারা নিজদেরকে ঢাকুক না কেন আল্লাহ্ তা'আলা ঠিকই তাদের দেখছেন। [ইবন কাসীর] তাই আয়াতে বলা হয়েছে, এরা সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পায় এবং উটপাখির মত বালির মধ্যে মুখ গুঁজে রেখে মনে করে, যে সত্যকে দেখে তারা মুখ লুকিয়েছে তা অন্তর্হিত হয়ে গেছে। অথচ সত্য নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে এবং এ তামাশাও দেখছে যে, এ নির্বোধরা তার থেকে বাঁচার জন্য মুখ লুকাচ্ছে। অথবা আয়াতের অর্থ, তারা তাদের কুফর তাদের অন্তরে গোপন করে রাখে আর মনে করে যে, আল্লাহ থেকে গোপন করছে। অথচ তারা যত কাপড় দিয়েই নিজেদেরকে আড়াল করুক না কেন আল্লাহ তো তাদের অবস্থা জানেন। [মুয়াসসার]

আবার তাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোকও ছিল যারা তাদের প্রাত্যহিক গোপনীয় কাজসমূহ যেমন স্ত্রী-সহবাস, পায়খানা ব্যবহার করার সময়ও নিজেদের কাপড় খুলতে লজ্জাবোধ করত এবং তা আকাশের দিকে হয়ে যাওয়ার ভয় করত। কিন্তু অন্যান্য সময় আল্লাহর কোন খেয়াল রাখত না। তাই আল্লাহ তা'আলা তাদের এ অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে এ আয়াত নাযিল করেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ ‘তারা (কাফেরগণ) স্ত্রী-সহবাসের সময় বা পায়খানা ব্যবহার করার সময় আকাশের দিকে মুখ করতে লজ্জাবোধ করত এবং কাপড় দিয়ে নিজেদের মাথা ঢেকে রাখত। তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন। [বুখারীঃ ৪৬৮১, ৪৬৮২, ৪৬৮৩]


তাফসীরে আহসানুল বায়ান

অনুবাদ: (৫) জেনে রাখ, তারা নিজ নিজ বুক কুঞ্চিত করে, যাতে তাঁর দৃষ্টি হতে লুকাতে পারে।[1] জেনে রাখ, তারা যখন নিজেদের কাপড় (দেহে) জড়ায়, তিনি তখনও সব জানেন যা কিছু তারা গোপন করে এবং যা কিছু প্রকাশ করে। তিনি তো মনের ভিতরের কথাও জানেন।


তাফসীর:

[1] এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে তফসীরবিদগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে, ফলে তার উদ্দেশ্য কি তাতেও মদভেদ আছে। এর পরেও সহীহ বুখারীতে (সূরা হূদের তফসীরে) বর্ণনাকৃত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ দ্বারা বুঝা যায় যে, উক্ত আয়াতটি সেই সকল মুসলিমদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা লজ্জার খাতিরে পেশাব-পায়খানার সময় এবং স্ত্রী-সহবাসের সময় উলঙ্গ হওয়াকে অপছন্দ করত; এই ভেবে যে, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দেখছেন। ফলে তারা এই সময় লজ্জাস্থান আবৃত করার নিমিত্তে নিজেদের বক্ষদেশকে ঘুরিয়ে দিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, রাত্রের অন্ধকারে যখন তারা বিছানাতে নিজেদেরকে কাপড় দ্বারা আচ্ছাদিত করে, তখনও তিনি তাদেরকে দেখেন এবং তাদের চুপে চুপে ও প্রকাশ্যে আলাপনকেও তিনি জানেন। উদ্দেশ্য হল যে, লজ্জা-শরম আপন জায়গায় ঠিক আছে, কিন্তু তাতে এত বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। কারণ যে সত্তার কারণে তারা এরূপ করে, তাঁর নিকট তা গুপ্ত নয়। তবে এরূপ কষ্ট করায় লাভ কি?


তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ


তাফসীর: ৫ নং আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়::



শানে নুযূল:



উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে অনেক মতামত পাওয়া যায়। তবে সহীহ বুখারীর বর্ণনানুপাতে সেই সকল মুসলিমদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে যারা লজ্জার খাতিরে পেশাব-পায়খানার সময় এবং স্ত্রী-সহবাসের সময় উলঙ্গ হওয়াকে অপছন্দ করত; এই ভেবে যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দেখছেন। ফলে তারা এই সময় লজ্জাস্থান আবৃত করার নিমিত্তে নিজেদের বক্ষদেশকে ঘুরিয়ে দিত। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৮১)



আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াতে বর্ণনা করছেন যে, রাতের অন্ধকারে যখন তারা বিছানাতে নিজেদেরকে কাপড় দ্বারা আচ্ছাদিত করে, তখনও তিনি তাদেরকে দেখেন ও তাদের চুপে চুপে ও প্রকাশ্যে আলাপনকেও তিনি জানেন। অর্থাৎ তাঁর নিকট কোন কিছু গোপন থাকে না। তোমাদের প্রকাশ্য বিষয়টা যেমন গোপনটাও ঠিক তেমনি। অর্থাৎ তিনি প্রকাশ্য বিষয় যেমন জানেন, গোপন বিষয়ও তেমন জানেন। উদ্দেশ্য হল লজ্জা-শরম আপন জায়গায় ঠিক আছে, কিন্ত তাতে এত বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। কারণ যে সত্তার কারণে তারা এরূপ করে, তাঁর নিকট তা গুপ্ত নয়। যেমন



আল্লাহ তা‘আলা বলেন:



(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِھ۪ نَفْسُھ۫ﺊ وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَیْھِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِیْدِﭟ)‏



“আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার অন্তর তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তা আমি জানি। আমি তার ঘাড়ের শাহ রগ অপেক্ষাও নিকটতর।” (সূরা ক্বফ ৫০:১৬)



শুধু তাই নয় আল্লাহ তা‘আলা মানুষের গোপন বিষয় তো জানেনই এমনকি মানুষ অন্তরে কী চিন্তা-ভাবনা করে তাও তিনি জানেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা থেকে আমাদের কোন কিছু গোপন করার সুযোগ নেই।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:



১. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল বিষয় সম্পর্কে জানেন।

২. আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে মুশরিকদের সঠিক জ্ঞান নেই।

৩. লজ্জা-শরম একটি ভূষণ, তাই তা সঠিক জায়গায় ব্যবহার করা উচিত।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)


তাফসীর: ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জনগণ খোলা আকাশের সামনে প্রস্রাব, পায়খানা এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বেঁচে থাকতো। তখন আল্লাহ তাআ’লা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) (আরবি) কে পড়তেন। তখন ইবনু জা'ফর (রঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ (আরবি) এর অর্থ কি? তিনি উত্তরে বলেনঃ “এর দ্বারা ঐ লোককে বুঝানো হয়েছে, যে স্ত্রী সহবাস করতে লজ্জাবোধ করে অথবা নির্জনতায়ও লজ্জা পায়। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।” ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, লোকেরা খোলা আকাশের নীচে নির্জনে থাকতে এবং সহবাস করতে শরম করতো এবং নিজেদের মুখ ফিরিয়ে নিতো। বিশেষ করে ঐ সময়, যখন তারা বিছানা পেতে শুয়ে পড়তে এবং মাথা ঢেকে নিতো। তাদের ধারণা ছিল এই যে, যদি তারা বাড়ীতে অবস্থান করে বা কাপড় গায়ে জড়িয়ে কোন খারাপ কাজ করে, তবে তারা আল্লাহ থেকে নিজেদের পাপকার্য গোপন করতে সক্ষম। তাই, আল্লাহপাক খবর দিচ্ছেনঃ তারা রাতের অন্ধকারে শয়ন করার সময় কাপড় গায়ে জড়িয়ে দেয়। কিন্তু তারা কোন কাজ গোপনেই করুক বা প্রকাশ্যেই করুক, আল্লাহ তা জানেন। এমন কি মানুষের অন্তরের নিয়ত, মনের ইচ্ছা এবং গুপ্ত রহস্য সম্পর্কেও আল্লাহ পূর্ণ ওয়াকিফহাল। সাবআ’ মুআল্লাকার বিখ্যাত কবি যুহাইর বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের গোপন কথাকে আল্লাহ থেকে গোপন করার চেষ্টা করো না, কেননা আল্লাহ থেকে যা গোপন করা হয় তা তিনি জেনেই নেন। হয় ঐ আমল জমা থাকবে এবং কিয়ামতের দিনের আমলনামায় রক্ষিত থাকবে, না হয় তাড়াতাড়ি দুনিয়াতেই শাস্তি দিয়ে দেয়া হবে।”

ঐ অজ্ঞতা- যুগের কবি ও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন এবং খন্ড খন্ড বিষয়গুলির উপরও তাঁর বিশ্বাস ছিল। যেমন তিনি জানতেন যে, পরকাল রয়েছে, কর্মের প্রতিফল অবশ্যই দেয়া হবে, আমলনামা রয়েছে এবং কিয়ামত সংঘটিত হবে।

কথিত আছে যে, কোন এক মুশরিয্‌ক নবীর (সঃ) সামনে দিয়ে যাবার সময় তার মুখটি ফিরিয়ে নেয় এবং মস্তক ঢেকে ফেলে। তখন আল্লাহ তা'আলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন। কিন্তু এটাকে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ যুক্ত করাই বেশী যুক্তিযুক্ত। অর্থাৎ এর ভাবার্থ এই যে, সে আল্লাহ হতে লুকাতে চায়। কেননা, এর পরেই (আরবি) রয়েছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) (আরবি) পড়েছেন। এর অর্থও প্রায় একই।





সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।