সূরা আল-কারি‘আহ (আয়াত: 3)
হরকত ছাড়া:
وما أدراك ما القارعة ﴿٣﴾
হরকত সহ:
وَ مَاۤ اَدْرٰىکَ مَا الْقَارِعَۃُ ؕ﴿۳﴾
উচ্চারণ: ওয়ামাআদরা-কা মাল কা-রি‘আহ।
আল বায়ান: তোমাকে কিসে জানাবে মহা ভীতিপ্রদ শব্দ কী?
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৩. আর ভীতিপ্ৰদ মহা বিপদ সম্পর্কে আপনাকে কিসে জানাবে?
তাইসীরুল ক্বুরআন: মহা বিপদ সম্পর্কে তুমি কী জান?
আহসানুল বায়ান: ৩। কিসে তোমাকে জানাল, ঠক্ঠক্কারী (মহাপ্রলয়) কি?
মুজিবুর রহমান: মহা প্রলয় সম্বন্ধে তুমি কী জান?
ফযলুর রহমান: তুমি কি জান, কি সেই মহাপ্রলয়?
মুহিউদ্দিন খান: করাঘাতকারী সম্পর্কে আপনি কি জানেন ?
জহুরুল হক: হায়, কিভাবে তোমাকে বোঝানো যাবে সেই মহাসংকট কি?
Sahih International: And what can make you know what is the Striking Calamity?
তাফসীরে যাকারিয়া
অনুবাদ: ৩. আর ভীতিপ্ৰদ মহা বিপদ সম্পর্কে আপনাকে কিসে জানাবে?
তাফসীর:
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: ৩। কিসে তোমাকে জানাল, ঠক্–ঠক্–কারী (মহাপ্রলয়) কি?
তাফসীর:
-
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
তাফসীর: নামকরণ :
(اَلْقَارِعَةُ) আল কারি‘আহ কিয়ামতের অন্যতম একটি নাম। যেমন এর পূর্বে কিয়ামতের বিভিন্ন নাম উল্লেখ করা হয়েছে
الواقعة ، الساعة ، الطامة ، الحاقة
ইত্যাদি। সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত শব্দ থেকেই এ নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
اَلْقَارِعَةُ শব্দের অর্থ: করাঘাতকারী, ঠনঠনকারী ও মহাপ্রলয় ইত্যাদি। কিয়ামতকে এ নামে নামকরণ করার কারণ হলো: কিয়ামত মানুষের হৃদয়কে জাগ্রত করে তুলবে এবং আল্লাহ তা‘আলার দুশমনদেরকে আযাব সম্পর্কে অবহিত করবে। যেমন দরজায় করাঘাত করে গৃহবাসীকে সতর্ক করা হয়। সূরায় কিয়ামতের কঠিন অবস্থা বর্ণনার পাশাপাশি ভাল ও মন্দ আমল ওজন করে তদানুযায়ী প্রতিদান প্রদান করা হবে, সে সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।
শব্দটি একাধিকবার উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো : এ সম্পর্কে গুরুত্ব প্রদান করা। কেননা কিয়ামতের দিন ভয়ংকর কম্পন ও প্রচণ্ড শব্দ প্রাণীজগতের কানে ও হৃদয়ে তীব্র আঘাত করবে ও ভয়ে হৃৎকম্পন শুরু হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّوْرِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمٰوٰتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَا۬ءَ اللّٰهُ ط وَكُلٌّ أَتَوْهُ دٰخِرِيْنَ)
“এবং সেদিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে, সেদিন আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সকলেই ভীত-বিহ্বল হয়ে পড়বে, তবে আল্লাহ যাদেরকে চাইবেন তারা ব্যতীত এবং সকলেই তার নিকট আসবে বিনীত অবস্থায়।” (সূরা নামল ২৭: ৮৭)
الْفَرَاشِ বলতে ঐসব কীট-পতঙ্গকে বুঝানো হয়েছে যা আগুনের চারপাশে ছুটাছুটি করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(خُشَّعًا أَبْصَارُهُمْ يَخْرُجُوْنَ مِنَ الْأَجْدَاثِ كَأَنَّهُمْ جَرَادٌ مُّنْتَشِرٌ)
“অপমানে শঙ্কিত নয়নে সেদিন তারা কবরসমূহ হতে বের হবে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায়” (সূরা কামার ৫৪: ৭)
مَبْثُوْثِ অর্থ : বিক্ষিপ্ত, অর্থাৎ কিয়ামতের দিন মানুষ বিক্ষিপ্ত কীটপতঙ্গের ন্যায় ছুটাছুটি করতে থাকবে।
عِهْنِ এ সম্পর্কে সূরা হাক্কাতে আলোচনা করা হয়েছে।
(ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُه)
অর্থাৎ যার নেকীর পাল্লা পাপের পাল্লার ওপর ভারী হবে তার জন্য থাকবে আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন। আর যার নেকীর পাল্লা পাপের পাল্লার তুলনায় হালকা হবে তার জন্য উত্তপ্ত আগুন বা জাহান্নাম যা হাবিয়াহ নামে পরিচিত। মানুষের আমল কিয়ামতের দিন ওজন করা হবেÑএটা সত্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذِنِ الْحَقُّ ج فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُه۫ فَأُولٰ۬ئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُه۫ فَأُولٰ۬ئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْآ أَنْفُسَهُمْ بِمَا كَانُوْا بِاٰيٰتِنَا يَظْلِمُوْنَ)
“সেদিন সঠিক ওজন করা হবে। যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই তাদের নিজেদের ক্ষতি করেছে, যেহেতু তারা আমার নিদর্শসনমূহকে প্রত্যাখ্যান করত।” (সূরা আ‘রাফ ৭: ৮-৯) কিন্তু কিভাবে হবে তা আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন। এটা সম্পূর্ণ গায়েবী বিষয়, এর প্রতি আমাদের ঈমান রাখতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পুনরুত্থান ও আমলের প্রতিদানের প্রমাণ পেলাম।
২. কিয়ামতের ভয়াবহতা বর্ণনা করে মানুষকে আমলের ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে।
৩. আমল ওজন করা হবে। এমনকি আমলকারীকেও ওজন করা হবে।
৪. কিয়ামতের দিন মানুষ দুটি দলে বিভক্ত হবে। এক দল জান্নাতী আর অন্য দল জাহান্নামী।
তাফসীরে ইবনে কাসীর (তাহক্বীক ছাড়া)
তাফসীর: ১-১১ নং আয়াতের তাফসীর
(আরবি) শব্দটিও কিয়ামতের একটি নাম। যেমন (আরবি) এবং (আরবি) এগুলোও কিয়ামতের নাম। কিয়ামতের বিভীষিকা এবং ভয়াবহতা বুঝানোর জন্যেই আল্লাহ তা'আলা প্রশ্ন করেছেন যে, সেটা কি? আল্লাহ তা'আলার জানিয়ে দেয়া ছাড়া সেটা জানা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তারপর আল্লাহ তা'আলা নিজেই বলেনঃ সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায় হয়ে যাবে এবং এদিক ওদিক ছুটাছুটি করবে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারা যেন ছড়িয়ে থাকা পঙ্গপাল।” (৫৪:৭)
তারপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ পাহাড়সমূহ ধূণিত রঙিন পশমের ন্যায় হয়ে যাবে। অনন্তর যার ঈমান ও আমলের পাল্লা ভারী হবে সে তো বাসনারূপ সুখে অবস্থান করবে। আর যার ঈমান ও আমলের পাল্লা হালকা হবে সে জাহান্নামের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তাকে উল্টোমুখে জাহান্নামে। নিক্ষেপ করা হবে।
(আরবি) এর অর্থ হলো দেমাগ অর্থাৎ সে মুখ থুবড়ে হাবিয়াহ্ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। এ অর্থও হতে পারে যে, ফেরেশতা জাহান্নামে তার মাথায় আযাবের বৃষ্টি বর্ষণ করবে। আবার অর্থ এটাও হতে পারে যে, তার আসল ঠিকানা ঐ জায়গা যেখানে তার অবস্থানস্থল নির্ধারণ করা হয়েছে ঐ জায়গা হলো জাহান্নাম।
হাবিয়াহ্ জাহান্নামের একটি নাম। এ জন্যেই এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লাহ পাক স্বীয় নবী (সঃ) কে বলেনঃ সেটা কি তা তোমার জানা আছে? সেটা এক জ্বলন্ত অগ্নি।
হযরত আশ’আস ইবনে আবদিল্লাহ (রঃ) বলেন যে, মুমিনের মৃত্যুর পর তার রূহ ঈমানদারদের রূহের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ফেরেশতা ঐ সব রূহকে বলেনঃ তোমাদের ভাই এর মনোরঞ্জন ও শান্তির ব্যবস্থা করো। পৃথিবীতে সে অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করেছে।” ঐ সন্ধ্রহসমূহ তখন জিজ্ঞেস করেঃ “অমুকের খবর কি?” সে কেমন আছে?” নবাগত রূহ তখন উত্তর দেয়ঃ সে তো মারা গেছে। তোমাদের কাছে সে আসেনি? তখন রূহসমূহ বুঝে নেয় এবং বলেঃ রাখো তার কথা, সে তার মা হাবিয়ায় পৌঁছেছে।”
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ সেটা এক জ্বলন্ত অগ্নি। ঐ আগুন খুবই দাউদাউ করে জ্বলে ক্ষণিকের মধ্যে ভস্মীভূত করে দেয়।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের এ আগুনের তেজ জাহান্নামের আগুনের তেজের মাত্র সত্তর ভাগের এক ভাগ।” জনগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ“হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ধ্বংস করার জন্যে তো এ আগুনই যথেষ্ট?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তা ঠিক কিন্তু জাহান্নামের আগুন এর চেয়ে উনসত্তর গুণ বেশী তেজস্বী।” সহীহ বুখারীতে এ হাদীস রয়েছে এবং তাতে আরো রয়েছেঃ “ওর প্রত্যেক অংশ এই আগুনের মত।` মুসনাদে আহমাদেও এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। মুসনাদের একটি হাদীসে এটাও রয়েছে যে, দুনিয়ার এ আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ হওয়া সত্ত্বেও সমুদ্রের পানিতে দু’বার ধুয়ে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে। এরূপ না করা হলে দুনিয়ার আগুন দ্বারা উপকার গ্রহণ করা সম্ভব হতো না। অন এক হাদীসে রয়েছে যে, দুনিয়ার এ আগুনের তেজ জাহান্নামের আগুনের তেজের একশ' ভাগের এক ভাগ মাত্র।
ইমাম আবুল কাসিম তিবরানীর (রঃ) হাদীস গ্রন্থে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের এ আগুন এবং জাহান্নামের আগুনের মধ্যে কি পার্থক্য আছে তা কি তোমরা জান? তোমাদের এ আগুনের ধোঁয়ার চেয়েও সত্তর গুণ বেশী কালো জাহান্নামের আগুন!” হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জাহান্নামের আগুনকে এক হাজার বছর পর্যন্ত প্রজ্জ্বলিত করা হয়। ফলে ঐ আগুন লাল হয়ে যায়। তারপর আরো এক হাজার বছর ধরে জ্বাল দেয়া হয়। এতে ঐ আগুন সাদা বর্ণ ধারন করে। তারপর আরো এক হাজার বছর পর্যন্ত জ্বাল দেয়ায় ঐ আগুন কালো হয়ে যায়। বর্তমানে ঐ আগুন অত্যন্ত কালো ও অন্ধকারাচ্ছন্ন।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
মুসনাদে আহমাদে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যাকে সবচেয়ে সহজ ও হালকা শাস্তি দেয়া হবে তাকে এক জোড়া আগুনের জুতা পরিয়ে দেয়া হবে। এর ফলে তার মাথার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে।”
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জাহান্নাম তার প্রতিপালকের নিকট অভিযোগ করলোঃ “হে আমার প্রতিপালক। আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে।` আল্লাহ তাআলা তখন তাকে দুটি নিঃশ্বাস ছাড়ার অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে এবং অন্যটি গ্রীষ্মকালে। প্রচণ্ড শীত যে তোমরা অনুভব কর তা হলো জাহান্নামের শীতল নিঃশ্বাস, আর গ্রীষ্মের যে প্রচণ্ড গরম তোমরা অনুভব কর সেটা জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাসের প্রতিক্রিয়া।” অন্য একটি হাদীসে রয়েছেঃ “প্রচণ্ড গরম পড়া শুরু হলে (গরমের প্রখরতা) কিছুটা ঠাণ্ডা হওয়ার পর নামায পড়ো। কেননা, গরমের প্রখরতা জাহান্নামের তেজস্বিতার কারণে হয়ে থাকে।”
সতর্কবার্তা
কুরআনের কো্নো অনুবাদ ১০০% নির্ভুল হতে পারে না এবং এটি কুরআন পাঠের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আমরা এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রায় ৮ জন অনুবাদকের অনুবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা তাদের নির্ভুলতার গ্যারান্টি দিতে পারি না।